ও ছেলের মতো, ছাড়তাম কী করে

বৃহস্পতিবার বার্সেলোনায় জঙ্গি হামলার পরে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ছড়িয়ে পড়েছিল এই ছবিটি। পুলিশ চেঁচিয়ে যাচ্ছে ‘সরে যাও, পালাও’, কিন্তু খুদেকে আগলে বসে রয়েছেন বছর চুয়াল্লিশের ব্যক্তি।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

লন্ডন শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৭ ০৩:১০
Share:

ত্রাতা: হ্যারি অটওয়াল। বার্সেলোনার হামলার সময় এক শিশুকে উদ্ধার করে এই ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুবকই এখন নায়ক।

রক্তে ভেসে যাচ্ছে ছোট্ট শরীরটা। পা-টা ভেঙে গিয়েছে সম্ভবত। চুঁইয়ে রক্ত গড়িয়ে প়ড়ছে মাথা থেকে। আর বাচ্চা ছেলেটির পাশে বসে নাগাড়ে মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছেন এক ভদ্রলোক।

Advertisement

বৃহস্পতিবার বার্সেলোনায় জঙ্গি হামলার পরে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ছড়িয়ে পড়েছিল এই ছবিটি। পুলিশ চেঁচিয়ে যাচ্ছে ‘সরে যাও, পালাও’, কিন্তু খুদেকে আগলে বসে রয়েছেন বছর চুয়াল্লিশের ব্যক্তি।

সে দিনের সেই ‘নায়ক’ ভারতীয় বংশোদ্ভূত হ্যারি অটওয়াল। ব্রিটেনের বার্মিংহামের বাসিন্দা। বার্সেলোনা গিয়েছিলেন ছুটি কাটাতে। সপরিবার মধ্যাহ্নভোজ সারছিলেন রাস্তার ধারে একটি রেস্তোরাঁয়। চোখের সামনেই দেখেন, কী ভাবে জঙ্গি-ভ্যান পিষে দিচ্ছে একের পর এক দেহ। স্থির থাকতে পারেননি হ্যারি। খাওয়া ফেলে ছুটে যান বাচ্চাটির কাছে।

Advertisement

এখনও বার্সেলোনার একটি হোটেলে রয়েছেন হ্যারি। জানালেন, স্পেনে বেড়াতে আসার কোনও পরিকল্পনাই ছিল না তাঁর। হঠাৎই বোন প্রস্তাবটা দেন। ছোট ছেলের জন্মদিনটাও পড়েছে এই সপ্তাহে। রাজি হয়ে যান হ্যারি। স্ত্রী হরজিন্দর ও দুই ছেলে, বছর উনিশের ডিয়ের্ন ও আট বছরের খে-কে নিয়ে বৃহস্পতিবারই বার্সেলোনা আসেন। হোটেলে চেক ইন করার আগে বাইরে কোথাও লাঞ্চ করে নেওয়া যাক, এই ভেবে লা রামব্লা-র ওই রেস্তোরাঁয় ঢুকেছিলেন। বাইরে খোলা রেস্তোরাঁর টেবিলটাই নিতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু রোস্তারাঁর ওয়েটার প্রলোভন দেখান, একবার দোতলায় বসেই দেখুন না। আর তাতেই এ যাত্রা রক্ষা পেয়ে গিয়েছেন হ্যারি ও তাঁর পরিবার।

তিনি বলেন, ‘‘নিজের নিরাপত্তার কথা তখন মাথাতেই নেই। ছেলেটা জ্ঞান হারিয়েছে। পা-টা উল্টে দিকে বেঁকে গিয়েছে। মাথা ফেটে রক্ত চুঁইয়ে পড়ছে। পালস দেখলাম, সেটাও নেই।’’ বলে চললেন তিনি, ‘‘প্রথমে মনে হয়েছিল, ও বুঝি আর বেঁচে নেই। এক বার পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি, তো এক বার মাথায়। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। বুক ফেটে কান্না আসছে। কিন্তু ওকে ছেড়ে যেতে পারিনি। কী করে একটা শিশুকে ও ভাবে মাঝরাস্তায় ফেলে রেখে যাব।’’

এ দিকে, জঙ্গিরা যদি ফিরে আসে, ফের আক্রমণ চালায়, এই আশঙ্কায় পুলিশ চিৎকার করে যাচ্ছে, ‘রাস্তা থেকে সরে যাও’। ‘‘আমি পারিনি। মনে হচ্ছিল, ওরা এলে আসুক। আমি ওকে ছেড়ে যাব না। ও যে আমার ছেলেরই বয়সি, সাত কী আট।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement