ফাইল চিত্র।
সরকারি দফতরে লুঠপাট চালানোর অভিযোগে ভিড়ের মধ্যে গুলি চালিয়েছিল মায়ানমার পুলিশ। রাখাইন প্রদেশে সেই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন সাত জন বৌদ্ধ। সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপরে সেনা নির্যাতনকে কেন্দ্র করে শিরোনামে এসেছিল এই রাখাইন প্রদেশ। এ বার সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধরাও সেখানে হিংসার শিকার।
মঙ্গলবার মারাউক ইউয়ে একটি প্রতিবাদী সভায় যোগ দিয়েছিলেন অন্তত পাঁচ হাজার বৌদ্ধ। এই শহরটি রাখাইনে থেকেও সেনা নির্যাতনের কবল থেকে এত দিন মুক্তই ছিল। প্রাচীন আরাকান রাজত্বের পতন উপলক্ষে বার্ষিক অনুষ্ঠান ছিল এই শহরে। সেখানেই হঠাৎ হিংসার সূত্রপাত। প্রাচীন আরাকান সভ্যতায় মারাউক ইউ-ই ছিল রাজধানী। দু’শো বছর আগে বর্মার সেনাবাহিনীর হাতে এই রাজত্বের পতন ঘটে। সে ইতিহাস মনে করাতে প্রতি বছরই অনুষ্ঠান হয়। স্থানীয় মানুষ যোগ দেন তাতে।
কিন্তু এ বছর অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়নি প্রশাসন। স্থানীয় জনতার দাবি, তার প্রতিবাদেই সরকারি দফতর ঘেরাও করা হয়। সেখানেই গুলি চালায় পুলিশ। স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে প্রাথমিক ভাবে রবার বুলেট ব্যবহার করেছিল পুলিশ। কিন্তু ভিড় থেকে পাথর-ইট ছুটে আসতে শুরু করায় পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে।
মায়ানমার আর বাংলাদেশের মধ্যে প্রত্যাবর্তন চুক্তি হয়েছিল গত কালই, যাতে বলা হয়েছিল হিংসার জেরে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় সাড়ে ছ’লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলিমকে মায়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। ঘটনাচক্রে রাখাইন প্রদেশ ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল এই দিনেই। গুলিতে ৭ জন বৌদ্ধের প্রাণহানির পাশাপাশি জখমও হয়েছেন অন্তত ১৩ জন। ২০ জন পুলিশও আহত হন হিংসার মধ্যে পড়ে। রাষ্ট্রপুঞ্জ এই ঘটনার নিন্দা করেছে। মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, সামরিক বলপ্রয়োগের বাড়াবাড়ি নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত।
মারাউক ইউয়ের আরাকান ন্যাশনাল পার্টি-র নেতা ও লা সও বলেছেন, ‘‘ওরা বন্দুক ব্যবহার করেছে। এটা কখনওই সমর্থনযোগ্য নয়।’’ প্রত্যক্ষদর্শী নি নি খান্ত বলেছেন, ‘‘জনতা সরকারি দফতরে পৌঁছনোর আগেই পুলিশ তাদের আটকাতে পারত। সেটা ওরা করল না। রাস্তায় বাধা দিলে এই পরিস্থিতি হত না।’’
রাখাইন প্রদেশে এর আগে যখন হিংসা ছড়িয়েছিল তার অদূরেই মারাউক ইউ শহর। জাতি হিংসার জেরে এখানে তৈরি হয়েছে বৌদ্ধদের বিদ্রোহী গোষ্ঠী, ‘আরাকান আর্মি।’ এরা মায়ানমারের সেনার সঙ্গে লড়াই করে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের সঙ্গেও বৌদ্ধদের অনেক সময়েই সংঘর্ষ হয়েছে। কারণ বৌদ্ধরা রোহিঙ্গাদের মায়ানমারের বাসিন্দা বলে মানতেই চান না।