দক্ষিণ ইজ়রায়েলের অ্যাশকেলন শহরে গাজ়া থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের অবশিষ্টাংশ সরাচ্ছে পুলিশ। ছবি: রয়টার্স।
হাসপাতালের সবুজ কাপড়ে মোড়া সাতটি ছোট্ট দেহ। কারও কারও শরীরে তখনও লাগানো রয়েছে নল। গাজ়ার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফায় পরিষেবার অভাবে মৃত ১৭৯ জন রোগীর মধ্যে রয়েছে ওরাও। হাসপাতালের বেসমেন্টে গণকবরে ঠাঁই হয়েছে সকলের।
ইজ়রায়েলের হামলায় কয়েক দিন ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকার পরে অবশেষে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে আল শিফা। গাজ়ার বাকি হাসপাতালগুলিরও এক দশা। আল শিফার মুখ্য আধিকারিক মহম্মদ আবু সালমিয়া আজ বলেছেন, ‘‘বিদ্যুৎ নেই। জেনারেটর চালানোর মতো জ্বালানি নেই। আজ আইসিইউয়ে মারা গিয়েছেন ২৯ জন। সাত শিশুও মারা গিয়েছে। আমরা ওঁদের গণকবর দিতে বাধ্য হয়েছি।’’ আল শিফার প্রতিটি বিভাগে এখন মৃতদেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। পচা দেহের গন্ধও যেন সয়ে গিয়েছে বাকিদের।
হামাস পরিচালিত গাজ়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছিল, আল শিফা হাসপাতালের সদ্যোজাত বিভাগে ইনকিউবেটরে ‘সময়ের আগে জন্ম নেওয়া’ ৩৯টি শিশু ভর্তি ছিল। প্রত্যেকের ওজন দেড় কিলোগ্রামের কম। ওদের বাঁচাতে ইনকিউবেটরের প্রয়োজন। বিদ্যুতের অভাবে সে সব এখন অচল। শিশুদের এখন ফয়েলে মুড়ে গরম জলের পাশে রাখা হয়েছে। বিদ্যুতের অভাবে ওদের দুধ আর দুধের বোতল জীবাণমুক্ত করা যাচ্ছে না। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ায় বিভিন্ন ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে সদ্যোজাতেরা।
এ দিকে, গাজ়া থেকে এক কাশ্মীরি মহিলাকে উদ্ধারের খবর আজ জানা গিয়েছে। লুবনা নাজ়ির নামে ওই ভারতীয় মহিলা ও তাঁর মেয়ে কারিমা রাফা সীমান্ত দিয়ে মিশরে ঢুকেছেন। ইজ়রায়েল, রামাল্লা ও মিশরের ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে লুবনা জানিয়েছেন, ১০ অক্টোবর রামাল্লার ভারতীয় দূতাবাসে তাঁকে উদ্ধারের জন্য আর্জি জানিয়েছিলেন। লুবনার স্বামী সংবাদ সংস্থাকে জানান, লুবনা এবং মেয়ে এখন মিশরের আল-আরিশে রয়েছে। মঙ্গলবার কায়রো পৌঁছনোর কথা।
৬ সপ্তাহ ধরে হামাসের বিরুদ্ধে লাগাতার আক্রমণ শাণাচ্ছে ইজ়রায়েল। গাজ়ায় হাসপাতালগুলিকে নিশানা করায় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রবল চাপের মুখে পড়েছে তেল আভিভ। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আজ বলেছেন, ‘‘ইজ়রায়েলের উচিত গাজ়ার হাসপাতালগুলিকে রক্ষা করা।’’
ইজ়রায়েল অবশ্য প্রথম থেকেই দাবি করে আসছিল, বিভিন্ন হাসপাতালগুলিতে আশ্রয় নিয়েছে হামাস। রোগী ও পরিজনদের ঢাল হিসাবে ব্যবহার করছে। নিজেদের যুক্তিকে আরও পোক্ত করতে এক্স হ্যান্ডলে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছে ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। তাতে আইডিএফ-এর এক মুখপাত্র বলেছেন, গাজ়ার র্যা নটিসি হাসপাতাল থেকে মাত্র ১৮৩ মিটার দূরত্বে হামাসের একটি সুড়ঙ্গপথের খোঁজ মিলেছে। ৭ অক্টোবরের হামলায় অন্যতম চক্রী, হামাসের এক নৌ সেনা কমান্ডারের বাড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত সেই সুড়ঙ্গপথ। আর এক হাসপাতালের বেসমেন্টে পাওয়া গিয়েছে কালাশনিকভ রাইফেল, হ্যান্ড গ্রেনেড, বুলেট নিরোধক জ্যাকেট ইত্যাদি। সেখানে ইতস্তত ছড়িয়ে রয়েছে পণবন্দিদের ব্যবহৃত নানা সামগ্রী। সেই ছবি দেখিয়ে আইডিএফের দাবি, এই সুড়ঙ্গগুলি বেয়ে হাসপাতালকে ঘাঁটি করেছিল হামাস। পণবন্দিদের এনে রেখেছিল। ইতিমধ্যে হামাসের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ইজ়রায়েল পাঁচ দিন যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করলে তারা ৭০ জন পণবন্দিকে মুক্তি দেবে। কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের এ বিষয়ে তারা জানিয়েছে।