কোনওটাকে অভিশপ্ত বলে মনে করা হয়, কোনওটা খুললে নাকি বন্যায় ভেসে যাবে দেশ, কোনওটায় আবার এলিয়েনদের দেখা মিললেও মিলতে পারে। বিশ্বের এই ৫টা দরজা আজও খোলা যায়নি। দরজাগুলো নিয়ে অনেক বিশ্বাস, অনেক কথা প্রচলিত রয়েছে। এই দরজাগুলোর পিছনে আসলে কোন রহস্য লুকিয়ে রয়েছে তা অজানাই রয়ে গিয়েছে।
তাজমহল: বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় দর্শনীয় বস্তু হল তাজমহল। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেন তাজমহলে। কিন্তু জানেন কি এত পর্যটকের ভিড় সত্ত্বেও আজও তাজমহলের একটি ঘর গোপনই রয়ে গিয়েছে। আজ পর্যন্ত কেউই সেই ঘরে ঢুকতে পারেননি।
১৪তম সন্তানের জন্মের সময় মমতাজের মৃত্যু হয়েছিল। তারপরই ১৬৩১ সালে শাহজাহান স্ত্রী মমতাজের স্মৃতির উদ্দেশে তাজমহল বানাতে শুরু করেন। ২২ বছর লেগেছিল তাজমহল বানাতে। মনে করা হয়, তাজমহলে হাজারের বেশি গোপন ঘর রয়েছে। তার বেশিরভাগই আজ পর্যন্ত কেউ খুলতে পারেননি। এই গোপন দরজার ওপারে কী রয়েছে তা রহস্যই থেকে গিয়েছে।
পদ্মনাভস্বামী মন্দির: কেরলের পদ্মনাভস্বামী মন্দির। ভারতের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। এবং একই সঙ্গে বিস্ময়করও। জানা যায়, এই মন্দিরে এমন একটা দরজা রয়েছে, যা খোলার কোনও উপায় নেই। কতগুলো কৃত্রিম সাপ সেটা জড়িয়ে রয়েছে শুধু। না রয়েছে কোনও হাতল, না কোনও তালা, না কোনও ছিটকানি জাতীয় কিছু। তাও অনেক চেষ্টা করেও এই দরজা খোলা যায়নি।
ষষ্ঠ শতকে হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর উদ্দেশে এই মন্দির প্রতিষ্টা করা হয়েছিল। প্রচুর ধনসম্পত্তিতে ভরা ছিল এই মন্দির। এই মন্দিরের ভিতরে ছ’টা সিল করা ভল্ট ছিল। এই ছ’টা ভল্টেই লোহার শক্ত দরজা দিয়ে বন্ধ করা ছিল। এর মধ্যে পাঁচটা দরজা খোলা গিয়েছে। তার মধ্যে থেকে প্রচুর মূল্যবান ধনসম্পত্তি উদ্ধার করা গিয়েছে। কিন্তু ‘চেম্বার বি’ আজ পর্যন্ত খোলা যায়নি।
অনেকের বিশ্বাস, এই চেম্বার বি মন্ত্রপুত দরজা। খুব বড় মানের পুরোহিত ছাড়া এই মন্ত্র খণ্ডন করা যাবে না। তাই দরজা খোলাও সম্ভব নয়। অনেকের বিশ্বাস, এই দরজার সঙ্গে সমুদ্রের যোগ রয়েছে। দরজা খোলা হলে সারা দেশ প্লাবিত হয়ে যাবে। ফলে এই দরজার পিছনের রহস্য বজায় থাকাই মঙ্গল।
টেরাকোটা সেনা: ঠিক যেন আলাদা একটা সাম্রাজ্য। বিশাল তার সেনাবাহিনী। দুর্গদ্বার আগলে যেন পাহারা দিয়ে যাচ্ছে দিবারাত্র, বছরের পর বছর। যে বাহিনীর বেশিরভাগটাই মাটির বা ব্রোঞ্জের। বিশ্বকে বিস্ময়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল চিনের জিংওয়ার এই টেরাকোটা আর্মি। আজ থেকে ৪৫ বছর আগে মাটির নীচে আরও একবার ‘জীবন্ত’ হয়ে উঠেছিল এই টেরাকোটা সেনারা।
১৯৭৪ সালে জিংওয়ার এক কৃষক পরিবার বাড়ির কাছেই পাতকুয়োর জন্য গর্ত খুঁড়ছিল। মাটি থেকে দু’মিটার নীচে অপেক্ষাকৃত শক্ত এবং লাল রঙের মাটি ছিল। সেখান থেকেই টেরাকোটা সেনার আবিষ্কার। পরে ভূতত্ত্ববিদেরা প্রায় ২০ হাজার বর্গ মিটার এলাকা জুড়ে খনন করে ৮ হাজার সেনা, ১৩০টি রথ, ৫২০টি ঘোড়া এবং ১৫০ ঘোড়সওয়ার সেনার মূর্তি বার করেন। টেরাকোটা সেনার মাঝে একটি দরজাও পেয়েছেন ভূতত্ত্ববিদেরা। তবে সেই দরজার পিছনে কী রয়েছে তা আজও জানা যায়নি।
মাটির নীচে অক্ষত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা চিনের এই টেরাকোটা সেনা নিয়ে নানা মত রয়েছে। যে কৃষক পরিবার এর খোঁজ পেয়েছিল, তাঁদের নাকি তারপরই অর্থকষ্ট দেখা দেয়। কঠিন অসুখ হয় পরিবারের পাঁচ ভাইয়ের। যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে একভাই আত্মহত্যা করেন, বাকিরা অসুখে মারা যান। বন্ধ দরজা খুললে আরও বড় ‘অভিশাপ’ নেমে আসতে পারে, বিশ্বাস অনেকের।
স্ফিংস অব গিজা: গিজার গ্রেট স্ফিংসের আগাগোড়া সবটাই রহস্যে মোড়া। তার উপর অনেকেই হয়তো জানেন না, আরও একটি রহস্য ঘাপটি মেরে রয়েছে এর ভিতরে। একটি বন্ধ ঘর। যে ঘরে কী রয়েছে তা কেউ জানতে পারেননি। প্রশাসনও সেই রহস্যের উদ্ঘাটন করতে চায় না। তাই দরজা খোঁড়ার কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
মিশরের পিরামিড বা স্ফিংস মানুষের এমন একটা সৃষ্টি, যা আজকের যুগেও আর্কিটেক্টরা কল্পনাতেও আনতে পারবেন না হয়তো। কী ভাবে এর সৃষ্টি? কারা বানিয়েছিল? এ নিয়ে নানা মতবাদ রয়েছে। অনেকের বিশ্বাস, বাইরের দুনিয়া থেকে এলিয়েনরা বানিয়ে গিয়েছে। অনেকে মনে করেন, মিশরের বালির নীচেই কোথাও একটা লাইব্রেরি রয়েছে। আর সেখানেই রহস্যময় পিরামিড বানানোর খুঁটিনাটির উল্লেখ রয়েছে।
কিন্তু সেই লাইব্রেরি কোথায় তা কেউ বলতে পারেননি। অনেক মানুষের বিশ্বাস, গিজার দ্য গ্রেট স্ফিংসের নীচে যে গোপন দরজা মিলেছে। সেই দরজার ওপারেই রয়েছে এই লাইব্রেরি।
বান্ফ স্প্রিং হোটেল: কানাডার এই হোটেলের একটি ঘর নিয়েও রহস্য রয়ে গিয়েছে। হোটেলের ৮৭৩ নম্বর ঘরটি কখনও কেউ খোলে না। হোটেলের ন’তলায় এই ঘরটি রয়েছে।
শোনা যায়, অনেক বছর আগে নাকি এই ঘরে উঠেছিল একটি পরিবার। বাবা-মা আর তাঁদের ছোট শিশু। ঘুমের মধ্যে স্ত্রী আর সন্তানকে খুন করে নিজেও নাকি আত্মহত্যা করেছিলেন ওই ব্যক্তি। তারপর এই ঘরে কোনও পর্যটক থাকতে পারেননি। রাতে চিৎকারের আওয়াজ, শিশুর কান্নার আওয়াজ শোনা যায়। এই ঘরটি সেই থেকেই তালাবন্ধ।