খাদ্যাভাবে ধুঁকছে গাজ়া ভূখণ্ড! —ফাইল চিত্র।
খাদ্যাভাবে ধুঁকছে গাজ়া ভূখণ্ড! প্রতি দিন প্রাণ বাঁচানোর পাশাপাশি অন্ন-জলের জন্য চলছে হাহাকার। রাষ্ট্রপুঞ্জের ত্রাণ সংস্থা ইউএনআরডবলুএ-র ডিরেক্টর টমাস হোয়াইটের কথায়, গাজ়ার ৪০ শতাংশ মানুষের মাথার উপরে এখন দুর্ভিক্ষের ছায়া। টমাসের মতে, মানবিকতার খাতিরে যুদ্ধবিরতিই এখন একমাত্র পথ। না হলে কিছু মানুষ স্রেফ না খেতে পেয়ে মারা যাবেন। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, দক্ষিণ গাজ়ায় লক্ষাধিক মানুষের হাতে ময়দার প্যাকেট তুলে দেওয়া হলেও এখনও বাকি রয়েছেন অনেকে। আশ্রয়শিবিরে রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা হলেও এক একটি আশ্রয়শিবিরে যত জন মানুষ থাকতে পারেন তার প্রায় চার গুণ মানুষ রয়েছেন। খাবার নেই, হাহাকার চারিদিকে। আরও ত্রাণ প্রয়োজন, যুদ্ধের জন্য যা পৌঁছচ্ছে না।
এর সঙ্গে ইউনিসেফের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার ডিরেক্টর আদেল খোদের জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের শুরু থেকে ১২৪ জন প্যালেস্টাইনি শিশুর মৃত্যু হয়েছে ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক ও পূর্ব জেরুসালেমে। প্রাণ হারিয়েছে ছ’টি ইজ়রায়েলি শিশুও।
আজ ৮৩তম দিনে পড়ল ইজ়রায়েল-হামাস সংঘাত। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার গাজ়া ভূখণ্ডের বেট লাহিয়া, খান ইউনিস ও মঘজ়ি শহরে ইজ়রায়েলের হানায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫০ জন। খান ইউনিসের এল আমাল সিটি হাসপাতালের কাছেই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন দশ জন। গুরুতর জখম অন্তত ১২ জন বাসিন্দা। ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, মঘজ়ির শরণার্থী শিবিরে অত্যন্ত ক্ষতিকারক অস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে তারা। পাশাপাশি ব্যাপক হামলা চলেছে রামাল্লা-সহ ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের একাধিক শহরে। উত্তর গাজ়ায় ইজ়রায়েলের বোমায় প্রাণ হারিয়েছেন দুই সাংবাদিক। তাঁদের নাম আহমেদ খায়ের আল-দিন ও মহম্মদ খায়ের আল-দিন। সব মিলিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজ়ায় প্রাণ গেল ১০৫ জন সাংবাদিকের।
গাজ়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে খবর, ইজ়রায়েলের হামলায় এখনও পর্যন্ত গাজ়ায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২১ হাজার ৩২০ জন। গুরুতর জখম হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন ৫৫ হাজার ৬০৩ জন। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মুখপাত্র আল কোয়াদ্রা এ-ও জানিয়েছেন, গাজ়া ভূখণ্ডের কমপক্ষে ১৪২টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ১০৪টি অ্যাম্বুল্যান্সে ইচ্ছে করে হামলা চালিয়েছে ইজ়রায়েল। পাশাপাশি, আল-শিফা হাসপাতালকে ফের চালু করার উদ্দেশে আবেদনও জানিয়েছেন তিনি।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ইজ়রায়েলি সেনার কম করে চারটি বাহিনী হামলা চালাচ্ছে গাজ়ায়। বুধবার রাত খেকেই খান ইউনিস ও তার সন্নিহিত এলাকা দখল করার চেষ্টায় রয়েছে বাহিনী। ইজ়রায়েলের পাল্টা দাবি, খান ইউনিসে হামাসের একটি নজরদার কেন্দ্র ধ্বংস করেছে তাদের সেনা। হামাসের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা লুকিয়ে রয়েছেন সেই শহরে। পাশাপাশি,
ধ্বংস করা হয়েছে একটি সুড়ঙ্গও। খান ইউনিস শহরে একটি মসজিদের ভিতরে ছিল সেটির প্রবেশপথ। তল্লাশি চালালে আরও এরকম সুড়ঙ্গ পাওয়া যেতে পারে। অভিযান চালানো হচ্ছে গাজ়া শহরেও। সাংবাদিক বেলাল মোর্তাজার সংবাদমাধ্যম পোস্ট থেকে জানা যায়, সেখানকার তাল আল-হাওয়া অঞ্চল কার্যত গুঁড়িয়ে গিয়েছে। ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে হিটলারের সঙ্গে তুলনা করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তায়িপ এর্দোয়ান। তাঁর মতে, ইজ়রায়েলের হামলার সঙ্গে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইহুদি গণহত্যার একমাত্র তুলনা করা যায়।
এ দিকে লেবানন সীমান্তের হিজ়বুল্লার সঙ্গে সংঘাত আরও তীব্র হয়েছে ইজ়রায়েলের। চলতি সপ্তাহে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা আরও বাড়িয়েছে হিজ়বুল্লা। সর্বাধিক হামলা চালিয়েছে বুধবার। ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিজ়বুল্লাকে সতর্ক করে জানিয়েছেন, হামলা চলতে থাকলে এ বার লেবাননের সীমান্তে নামবে ইজ়রায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী।