মা নয়েলের সঙ্গে এমানুয়েল। ছবি: টুইটার।
১৪ বছরের ছেলেটাকে দেখে চমকে উঠতে হয়। নাক থেকেই যেন গজিয়ে উঠেছে আরও একটা ‘মুখ’।
চোখ আছে। চোখে দৃষ্টিও আছে। অথচ বাইরের জগতের কিছুই প্রায় দেখতে পায় না। কারণ, তার চোখ ঢাকা পড়ে গিয়েছে গজিয়ে ওঠা সেই দ্বিতীয় ‘মুখ’-এ।
ঠোঁট আর নাকের চিহ্ন মাত্র নেই। নাকের কিছুটা অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় মুখের মতো গজিয়ে ওঠা বিশালাকার মাংসপিণ্ডের গায়ে।
এই দ্বিতীয় ‘মুখ’ আসলে একটা বিশালাকার টিউমার। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়, বাস্কেটবল টিউমার। কারণ, এটা দেখতে অনেকটা বাস্কেটবলের মতো। গত তিন বছর ধরে এই টিউমার নিয়েই জীবন কাটাচ্ছে এমানুয়েল জায়স। দিন যত এগোচ্ছে, ক্রমশ মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছে সে। সম্প্রতি তাকে ও তার পরিবারকে আশার আলো দেখালেন ইউনিভার্সিটি অব মিয়ামি হেল্থ সিস্টেম-এর ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারির প্রধান চিকিৎসক রবার্ট ম্যাক্স।
আরও পড়ুন: হৃদরোগে দ্বিতীয় মত জরুরি, বলছেন ডাক্তার
কিউবার বাসিন্দা এমানুয়েল। তার মা নয়েল জানিয়েছেন, ১১ বছর বয়সে তার নাকে প্রথমে ব্রণর মতো একটা বৃদ্ধি চোখে পড়ে মা নয়েলের। তাতে খুব একটা পাত্তা দেননি নয়েল। কিন্তু খুব দ্রুত সেই ‘ব্রণ’ বাড়তে শুরু করে। ঢাকা পড়ে যায় এমানুয়েলের মুখ। খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়ে যায় তার। ঠিক করে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতেও সমস্যা হয়।
নয়েল জানান, অনেক ডাক্তার-বদ্যি দেখিয়েও কোনও লাভ হয়নি। এই টিউমারটা এতটাই জটিল যে, অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি নিতে রাজি হননি কেউই। টিউমারটির ওজন এখন প্রায় ৫ কিলোগ্রাম। সম্প্রতি নয়েলের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে চিকিৎসক রবার্ট ম্যাক্সের। এর আগেও এই বাস্কেটবল টিউমারের অস্ত্রোপচারের অভিজ্ঞতা রয়েছে ওই চিকিৎসকের। আগামী ১২ জানুয়ারি এমানুয়েলের অস্ত্রোপচার করবেন তিনি।
কী এই বাস্কেটবল টিউমার?
ম্যাক্স জানিয়েছেন, এমানুয়েল পলিঅস্টটিক ফাইব্রাস ডিসপ্লেসিয়া নামে বিরল রোগে আক্রান্ত। এ ক্ষেত্রে হাড় ভঙ্গুর হতে হতে ক্রমশ ফাইব্রাস টিস্যুতে পরিণত হয়। এমানুয়েলের মুখের ভিতরে থাকা হাড়কে ক্রমশ গ্রাস করছে এই রোগ। তার চোয়াল, নাকের আর কোনও অস্তিত্ব নেই। সবই মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়েছে। চিকিৎসা না করানো গেলে আর কিছু দিনের মধ্যে পুরো মাথাটাই এর কবলে চলে যাবে। তখন আর তাকে বাঁচানো সম্ভব হবে না। টিউমারটিকে বাদ দেওয়ার পর আরও একটা জটিল অস্ত্রোপচার করতে হবে তার। নতুন করে চোয়াল, দাঁত, নাক বসাতে হবে।
তবে, টিউমারটি বিনাইন হওয়ায় শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা নেই বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।