ছবি: রয়টার্স।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রুখতে শুক্রবার মোট ১৩টি শহরের পরিবহণ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিল বেজিং সরকার। ‘শহরবন্দি’ কমপক্ষে ৪ কোটি ১০ লক্ষ বাসিন্দা। প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমিতের সংখ্যা। এ পর্যন্ত সাড়ে আটশো জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬। ফ্রান্স জানিয়েছে, সে দেশে দু’জনের দেহে এই ভাইরাস মিলেছে। অর্থাৎ সংক্রমণ ছড়াল ইউরোপেও।
চিনা ভাইরাসে চিন্তায় নয়াদিল্লিও। নোভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঘটে থাকতে পারে আশঙ্কায় চিন-ফেরত ৮০ জনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে কেরলে। এর মধ্যে ৭ জনের জ্বর, সর্দিকাশি, গলা ব্যথার মতো উপসর্গ রয়েছে। এ পর্যন্ত দিল্লি-মুম্বই-চেন্নাই-কলকাতা-সহ ভারতের বিভিন্ন বিমানবন্দরে সব মিলিয়ে ১২ হাজারেরও বেশি চিন-ফেরত যাত্রীকে স্ক্রিনিংয়ে পাঠানো হয়েছে। আজ চিন থেকে সামান্য সর্দি-কাশি নিয়ে মুম্বইয়ে ফিরেছেন দুই ব্যক্তি। একটি সরকারি হাসপাতালে নজরদারিতে রাখা হয়েছে তাঁদের। বৃহন্মুম্বই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের স্বাস্থ্যকর্তা পদ্মজা কেসকার জানান, সর্দি-কাশি ছাড়া আর কোনও উপসর্গ নেই। তবু নজর রাখা হচ্ছে। অন্যান্য রোগীদের থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছে দু’জনকে। সে জন্য বিশেষ ‘আইসোলেশন ওয়ার্ড’ তৈরি করা হয়েছে। বিশেষ ওয়ার্ড তৈরি করা হয়েছে দিল্লি এমসেও।
চিনের সব চেয়ে সংক্রামিত হুবেই প্রদেশে বসবাসকারী ভারতীয় আর তাঁদের আত্মীয়দের থেকে ঘনঘন ফোন আসছে বেজিংয়ের ভারতীয় দূতাবাসে। বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে দূতাবাস চিনা প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। খোঁজ রাখা হচ্ছে ভারতীয়দেরও। বেজিংয়ে ভারতীয় দূতাবাস জানিয়েছে— ‘‘চিনা কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছে, খাদ্য সরবরাহ-সহ অন্য সমস্ত রকমের সহায়তা করা হবে উহানের বাসিন্দাদের।’’ এখনও পর্যন্ত উহানের সুপারমার্কেট (মূলত সরকারি) এবং ই-বাণিজ্য পরিষেবা চালু রয়েছে। দূতাবাস ভারতীয় সাহায্যপ্রার্থীদের জন্য দু’টি হটলাইনও খুলে রেখেছে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি জানার জন্য দূতাবাসের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে চোখ রাখতে অনুরোধ করা হয়েছে ভারতীয়দের।
আরও পড়ুন: হিন্দু রাষ্ট্র গড়ার তাগিদে গণতন্ত্রকে বিপন্ন করছেন মোদী, দাভোস থেকে তোপ ধনকুবের সোরসের
গত কাল খবর মেলে সৌদি আরবের হাসপাতালে কর্মরত এক ভারতীয় নার্স করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। যদিও আজ সৌদির স্বাস্থ্য মন্ত্রক সে খবর অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, সে দেশে কেউ ওই ভাইরাসে আক্রান্ত নন। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে কাল বিষয়টি নিয়ে টুইট করা হয়েছিল। সে প্রসঙ্গে সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, ভারতীয় মন্ত্রীর টুইটে যাঁর কথা উল্লেখ করা হয়েছিল, তাঁর ‘মিডল ইস্ট রেসপিরাটরি সিন্ড্রোম’ (মার্স) হয়েছে।
হুবেই প্রদেশের উহান-সহ আরও মোট ১৩টি শহরের প্রবেশদ্বার কার্যত ‘তালাবন্ধ’ করে দিয়েছে চিন প্রশাসন। সরকারের নির্দেশ, বাইরের কেউ ভিতরে ঢুকবে না, শহরের ভিতরে থাকা কেউ বেরোবে না। এর মধ্যে কিছু শহরে সিনেমা হল, রেস্তোরাঁ, কারাওকে বারের মতো বিনোদন স্থানগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারণ একটাই, মারণ ভাইরাসটি শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ছড়ায়। ফলে যে কোনও ধরনের জমায়েতেই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন। ২৫ জানুয়ারি, শনিবার চিনা নববর্ষের অনুষ্ঠান তাই বন্ধের মুখে। চিনের ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে আজ জানানো হয়েছে, এ বছর ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠান পালন করা হবে না বেজিংয়ের দূতাবাসে। সোশ্যাল মিডিয়ায় জানানো হয়েছে, ‘‘পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে এই সিদ্ধান্ত। চিন সরকার যে কোনও অনুষ্ঠান, জনসমাবেশ বাতিল করার কথা বলছে। তাই এই সিদ্ধান্ত।’’
এত দিন পর্যন্ত হুবেই থেকেই শুধু মৃত্যুর খবর মিলছিল। বৃহস্পতিবার প্রথম হেবেই থেকে মৃত্যুর খবর মেলে। উত্তর-পূর্ব হেলওংজিয়াং প্রদেশেও এক জন মারা গিয়েছেন। সংক্রমিত অঞ্চলগুলো থেকে যাঁরা ফিরছেন, বেজিং, সাংহাই প্রশাসন তাঁদের ১৪ দিন বাড়িতেই ‘ইনকিউবেশন পিরিয়ড’-এ থাকতে বলছেন। রোগ সংক্রমণ আটকাতে এই নির্দেশ।
ভাইরাসের উৎস বলে চিহ্নিত উহান শহরে বহু ভারতীয় পড়ুয়া থাকেন। আশার কথা, চিনা নববর্ষের ছুটিতে তারা বেশির ভাগ আগেই দেশে ফিরেছেন। তবে যাঁরা এখনও চিনে রয়েছেন, তাঁদের সংখ্যাটা ঠিক কত, তা এখনও জানা যায়নি।