রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: রয়টার্স।
যুদ্ধ থামছে না। গত কালই রাশিয়া জানিয়ে দিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ইউক্রেন যদি নেটোতে যোগ দেওয়ার মনোবাঞ্ছা ত্যাগও করে, তারা সেনা প্রত্যাহার করবে না। বরং আজ অন্য একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তাতে জানানো হয়েছে, যে সব ইউক্রেনীয় নাগরিক ওই দেশ ছেড়ে রাশিয়ায় চলে আসবেন, তাঁদের বিশেষ আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। পেনসনভুক্ত মানুষ, অন্তঃসত্ত্বা মহিলা, শারীরিক ভাবে অক্ষম ব্যক্তি, সকলের জন্যই থাকবে বহু সুযোগ-সুবিধা।
রাশিয়ার সরকারি ওয়েবসাইটে আজ এই ঘোষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। তাতে জানানো হয়েছে, ১৮ ফেব্রুয়ারির পর থেকে যাঁদের ইউক্রেন ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হতে হয়েছে, রাশিয়ায় তাঁদের প্রতি মাসে ১০ হাজার রুবল (১৭০ ডলার) পেনশন দেওয়া হবে। প্রতিবন্ধীদেরও একই মাসিক সাহায্য দেওয়া হবে। অন্তঃসত্ত্বা মহিলা ও তাঁর স্বামী একত্রে একটিই অর্থঅঙ্ক সাহায্য পাবেন। ঘোষণাপত্রে এ-ও আলাদা করে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইউক্রেনের নাগরিক ও স্বঘোষিত ‘ডনেৎস্ক অ্যান্ড লহানস্ক পিপলস রিপাবলিক’-এর বাসিন্দাদের এই অর্থসাহায্য দেওয়া হবে।
যুদ্ধচলাকালীন অর্থের ‘টোপ’ অবশ্য নতুন নয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরুর আগেই পুতিন ঘোষণা করেছিলেন, যাঁরা ইউক্রেনের ডনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল ছেড়ে রাশিয়ায় চলে আসবেন, তাঁদের ১০ হাজার রুবল দেওয়া হবে। ইউক্রেনের যে সব অঞ্চল রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সে সব জায়গায় ক্রেমলিন নিজেদের এক জন প্রশাসক নিয়োগ করেছে। এ সব জায়গার বাসিন্দাদের রুশ পাসপোর্ট দেওয়াও শুরু করেছে তারা। মাঝে এ-ও শোনা গিয়েছিল, তাদের অধিকৃত অঞ্চলে দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করা হবে। ইউক্রেন-সহ তার মিত্র দেশগুলি, যেমন আমেরিকা, ব্রিটেন সরাসরি এর প্রতিবাদ জানায়। রাশিয়ার এই কর্মকাণ্ড আইনবিরুদ্ধ বলেও আক্রমণ করে তারা। নির্বাচনের খবর না মিললেও পাসপোর্ট বিলির বিষয়টি আটকানো সম্ভব হয়েছে কি না, জানা যায়নি। তবে মস্কোর নানা ধরনের প্রলোভন দেওয়া বন্ধ হয়নি।
এর পাশাপাশি নিজেদের সেনাবাহিনী আড়েবহরে বাড়ানোর উদ্যোগও নিয়েছে রাশিয়া। সম্প্রতি একটি ঘোষণাপত্রে সই করেছেন পুতিন। তাতে বলা হয়েছে, রুশ সশস্ত্র বাহিনীতে সাড়ে ১১ লক্ষ সেনা নিয়োগ করা হবে। যা বর্তমান সেনা-সংখ্যার থেকে ১ লক্ষ ৩৭ হাজার বেশি। এই মুহূর্তে রুশ সেনাবাহিনীতে ১০ লক্ষ সেনা নিযুক্ত রয়েছেন। এ ছাড়া বিশেষ যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ৯৯ হাজার সাধারণ নাগরিক বাহিনীর হয়ে কাজ করছেন। এ পর্যন্ত যুদ্ধে বহু সেনার মৃত্যু হয়েছে। অনেকেরই ধারণা, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাশিয়া সেনাবাহিনীতে নিয়োগ শুরু করেছে। এমনকি কারাগারগুলিতে গিয়েও দেশের হয়ে লড়ার জন্য যোগ্য বন্দি খোঁজা হচ্ছে। এর মধ্যে পুতিনের একাধিক ঘোষণাপত্রে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বিশেষ করে, তাঁর সরকার যখন স্পষ্টই জানাচ্ছে, যুদ্ধ থামবে না।