সুপ্রিম কোর্ট সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তভার সিবিআই-কে দেওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, তিনি দায়-মুক্ত হলেন। তাঁর সরকারকে আর ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা মেটাতে হবে না। কেন্দ্রই ওই টাকা দেবে। এ কথা বললেও নবান্ন সূত্রে খবর, ভোট মিটতেই অর্থমন্ত্রীকে সারদার সব আমানতকারীকে টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করতে বলেন মমতা।
সে নির্দেশ মেনে শুক্রবার অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, অর্থসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী বৈঠক করেন শ্যামল সেন কমিশনের সদস্য অম্লান বসুর সঙ্গে। নবান্ন সূত্রের খবর, ক্ষতিপূরণ মেটাতে রাজ্যের কাছে আরও ১২০ কোটি টাকা চেয়েছে কমিশন। অর্থ দফতরের কর্তারা তাঁকে জানান, জুন নাগাদ ৩৫-৪০ কোটি টাকা দেওয়া হবে। এক কমিশন-কর্তা বলেন, “সারদা তহবিলে এ পর্যন্ত ১৬৬ কোটি টাকা দিয়েছে রাজ্য। ক্ষতিপূরণ দিতে গিয়ে তা শেষের মুখে। এখনই আরও টাকা না পেলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া ব্যাহত হবে।”
১০ হাজার টাকা পর্যন্ত লগ্নি করেছিলেন, এত দিন তাঁদেরই টাকা ফিরিয়েছে কমিশন। কমিশনের হিসেবে, প্রথম দফায় যে ১৭ লক্ষ ৫৪ হাজার আবেদন এসেছে, তার সাড়ে ১২ লক্ষই সারদায় লগ্নি করে ক্ষতিগ্রস্ত। বাকি পাঁচ লক্ষ অন্যান্য সংস্থায় টাকা রেখেছিলেন। এ পর্যন্ত ৩ লক্ষ ৯৫ হাজার আমানতকারীর নামে চেক বিলি হয়েছে। তাই সারদা-সহ অন্যান্য লগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে সর্বস্বান্ত হয়েছেন, এমন মানুষকে ক্ষতিপূরণ দিতে লাগবে আরও ৭৭০ কোটি। কিন্তু তা এখনই দেওয়া অসম্ভব, মুখ্যমন্ত্রীর দফতরকে জানিয়েছে অর্থ দফতর। রাজ্যের এই বার্তা পেয়ে কমিশন ঠিক করেছে, ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত লগ্নি করা আমানতকারীদেরই দ্বিতীয় দফায় টাকা ফেরানো হবে।
মুখ্যমন্ত্রী টাকা ফেরতের প্রক্রিয়া জারি রাখতে বললেন কেন? এক প্রবীণ মন্ত্রীর মতে, চলতি বছরেই ১৭টি পুরসভায় ভোট হওয়ার কথা। পরের বছর কলকাতা পুরসভার ভোট। এর মধ্যেই সিবিআই তদন্ত চলবে। তাতে জনতার মনে সারদা-কাণ্ডের দাগ রয়ে যাবে। বাড়তে পারে ক্ষোভও। তা প্রশমনেই টাকা ফেরানোর প্রক্রিয়া চালু রাখতে চাইছে রাজ্য। বিভিন্ন লগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘চিট ফান্ড সাফারার্স অ্যাসোসিয়েশন’। জেলায় জেলায় তারা বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। তা তৃণমূলের উপরে চাপ বাড়াচ্ছে। সম্প্রতি গড়িয়ায় রেল অবরোধ করতে গিয়ে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের হাতে মার খান ওই সংগঠন-সদস্যরা। প্রশাসনের একাংশ বলছে, “সিবিআইকে সারদার তদন্ত করতে বললেও কমিশনকে কাজ চালাতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। তা বন্ধ হলে আদালত অবমাননার মুখে পড়তে পারে রাজ্য। ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা ফেরানো ছাড়া অন্য পথ নেই।”
কুণালের চিঠি
সারদা-কেলেঙ্কারি নিয়ে তদন্তরত এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) হাতে এল এই মামলায় গ্রেফতার হওয়া কুণাল ঘোষের লেখা একটি চিঠি। ইডি সূত্রের খবর, তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হওয়া এই সাংসদের বাংলায় লেখা ৯১ পাতার একটি চিঠি তদন্তকারীরা পেয়েছেন। সেই চিঠিতে সারদা-তদন্ত সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য এবং একাধিক ব্যক্তির নাম রয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। একটি সূত্রের বক্তব্য, ওই চিঠিতে নিজের প্রাণহানির আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন কুণাল।