শুধু খুঁটি পোঁতা নয়। নয় নিছক আলোর আশ্বাস। গ্রামের ঘরে ঘরে আলো চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আক্ষরিক অর্থেই। তাই সুন্দরবনের উপকূলবর্তী অঞ্চল ও সাগরদ্বীপ-সহ সাতটি জেলায় সব ঘরে বিদ্যুৎ দিতে ৩৭০ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে রাজ্য সরকার। শুক্রবার নবান্নে মমতার উপস্থিতিতে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
টাকা আসবে কোথা থেকে?
ঠিক হয়েছে, এই আলোক প্রকল্প রূপায়ণে রাজ্য বাজেটের পরিকল্পনা খাত থেকে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাকে দেবে ওই টাকা দেবে অর্থ দফতর। কারণ, বণ্টন সংস্থাই গ্রামীণ বিদ্যুদয়নের কাজ করবে। ২০১৪-’১৫ থেকে তিনটি আর্থিক বছরে বাজেটের পরিকল্পনা খাত থেকে প্রকল্পের জন্য ধাপে ধাপে ৩৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে। বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন প্রশাসনের একাংশ।
আবার রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, রাজ্যের যে-ক’টি দফতরে কিছু কাজ হয়েছে, বিদ্যুৎ তার অন্যতম। ২০০১-এর জনগণনা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে বাড়ি ছিল প্রায় এক কোটি ১০ লক্ষ। বিদ্যুৎ দফতরের হিসেব, ২০১১ সালের জনগণনায় রাজ্যে গ্রামীণ এলাকায় বাড়ির সংখ্যা বেড়ে প্রায় এক কোটি ৮০ লক্ষ হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ পেয়েছে ৬৫-৭০% বাড়ি। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সম্প্রতি নবান্নে এক বৈঠকে বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্তকে সময়সীমা বেঁধে জরুরি ভিত্তিতে সর্বত্রই গ্রামীণ বিদ্যুদয়নের কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
আপাতত কোচবিহার, দার্জিলিং, নদিয়া, বর্ধমান, হাওড়া, হুগলি ও উত্তর ২৪ পরগনা আসবে এই প্রকল্পের আওতায়। তার সঙ্গে যুক্ত হবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর, কুলপি, গোসাবা ও পাথরপ্রতিমা ব্লক এবং সাগরদ্বীপ। সুন্দরবন-সাগরদ্বীপে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে বাড়তি আগ্রহ দেখিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই জেলা হিসেবে দক্ষিণ ২৪ পরগনা এই প্রকল্পে না-থাকলেও সুন্দরবনের ৩৯টি এবং সাগরদ্বীপের ৪২টি মৌজার সব বিপিএল (দারিদ্রসীমার নীচে থাকা) এবং এপিএল (দারিদ্রসীমার উপরে থাকা) পরিবারে বিদ্যুৎ দেওয়া হবে বলে মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রাজ্যের বিদ্যুৎসচিব গোপালকৃষ্ণ জানান, ২০১৬ সালের এপ্রিলের মধ্যে রাজ্যের প্রতিটি জেলার প্রতিটি বিপিএল এবং এপিএল পরিবারের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে। সেই লক্ষ্যমাত্রা নিয়েই প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়েছে। তাঁর দাবি, অন্য যে-কোনও রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে দ্রুত গ্রামীণ বিদ্যুদয়নের কাজ চলছে।
কেন্দ্রের রাজীব গাঁধী গ্রামীণ বিদ্যুৎ যোজনা প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে গোটা দেশেই। ওই প্রকল্পের ৯০% অর্থ অনুদান হিসেবে দিচ্ছে কেন্দ্র। বাকি ১০% অল্প সুদে ঋণ হিসেবে রাজ্যগুলির কাছে আসছে কেন্দ্রীয় সংস্থা ‘রুরাল ইলেকট্রিফিকেশন কর্পোরেশন’ বা গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন নিগমের মাধ্যমে। অর্থাৎ এই প্রকল্পে রাজ্যগুলির আর্থিক দায় সেই অর্থে নেই বললেই চলে। জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এই ১১টি অনুন্নত জেলায় ‘ব্যাকওয়ার্ড রিজিওন গ্রান্ট ফান্ড’ নামে কেন্দ্রের একটি বিশেষ তহবিলের টাকায় গ্রামে বিদ্যুৎ পাঠানোর কাজ চলছে। এই কাজের জন্য ওই তহবিল থেকে বিদ্যুৎ দফতরকে ২৫০০ কোটি টাকা দিয়েছে রাজ্য সরকার। তবে কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে মূলত বিপিএল পরিবারগুলিতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার জন্য। রাজ্য সরকার অবশ্য চায়, বিপিএল-এপিএল সব বাড়িতেই বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হোক। এমনকী শহরাঞ্চলেও যে-সব বিপিএল এবং এপিএল পরিবার রয়েছে, তাদের ঘরেও যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বিদ্যুৎসচিব জানান, গ্রামাঞ্চলের যে-সব বাসিন্দা এখনও বিদ্যুৎ পাননি, তাঁদের মধ্যে ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ বিপিএল তালিকাভুক্ত। তাই তাঁরা বিনামূল্যে বিদ্যুৎ-সংযোগ পাবেন। আবার এমন কিছু পরিবার রয়েছে, দারিদ্রসীমার নীচের বলে চিহ্নিত না-হলেও সাধারণ গ্রাহকদের মতো টাকা জমা দিয়ে বিদ্যুৎ-সংযোগ নেওয়ার সঙ্গতি যাদের নেই। সেই সব পরিবারেও কার্যত নিখরচায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবে রাজ্য সরকার।