আরএসএসের কর্মশালায়। রবিবার শহিদ মিনারে সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।
সারদা কেলেঙ্কারিতে শাসক তৃণমূল কোণঠাসা। বিরোধী সিপিএম-ও এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এই অবস্থায় রাজ্যে নতুন শক্তি হিসেবে দ্রুত উঠে আসছে বিজেপি। কিন্তু সদস্য সংগ্রহ অভিযানে নেমে তার প্রতিফলন পাচ্ছেন না দলের নেতারা। প্রথম ধাপে বিফল হওয়ার পরে উত্তরপ্রদেশ মডেলে এ রাজ্যে সদস্য সংগ্রহের পরামর্শ দিয়েছেন বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
পশ্চিমবঙ্গে দলের সম্ভাবনা দেখে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ এ রাজ্যে সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৩০ লক্ষ থেকে বাড়িয়ে করেছিলেন এক কোটি। রাজ্য নেতৃত্বও সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবের মাটিতে নেমে হালে পানি পাচ্ছেন না বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব। প্রথম দু’মাস কেটে যাওয়ার পরে রাজ্য বিজেপি সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার ধারে-কাছেও পৌঁছতে পারেনি। সদস্য সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ১৩ লক্ষ। তার মধ্যে কলকাতা ও তার লাগোয়া এলাকা থেকেই হয়েছে চার লক্ষ। রাজ্যের বাকি অংশ থেকে মাত্র ন’লক্ষ।
সদস্য সংগ্রহের প্রথম ধাপে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির এই ব্যর্থতায় যারপরনাই ক্ষুব্ধ অমিত-সহ বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ এবং সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমলেন্দু চট্টোপাধ্যায়কে রবিবার দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়েছিলেন অমিতরা। কিন্তু রাহুলবাবু এবং অমলেন্দুবাবুর পূর্ব-নির্ধারিত অনুষ্ঠান থাকায় তাঁদের বদলে এ দিন দিল্লি পৌঁছেছেন দলের যুগ্ম সংগঠন সম্পাদক সুব্রত চট্টোপাধ্যায় এবং রাজ্য কমিটির সহ-সভাপতি ও সদস্য প্রমুখ সুশান্ত পাল। বিজেপি সূত্রের খবর, ওই দুই নেতার কাছ থেকে সদস্য সংগ্রহ অভিযানের এমন ভরাডুবির কারণ জানতে চেয়েছেন দলের জাতীয় সংগঠন সম্পাদক রামলাল এবং বিনয় সহস্রবুদ্ধ। পাশাপাশি, এ রাজ্যে আগামী দু’মাস উত্তরপ্রদেশ মডেলে সদস্য সংগ্রহ অভিযানকে আরও জোরদার করার পরামর্শও দিয়েছেন ওই দুই নেতা।
বিজেপি সূত্রের খবর, সদস্য সংগ্রহ অভিযানে এ বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাতকেও ছাপিয়ে গিয়েছে উত্তরপ্রদেশ। গত দু’মাসে উত্তরপ্রদেশে সদস্যসংখ্যা ৫৮ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। তার পরেই রয়েছে গুজরাত। সেখানে সদস্য সংগ্রহ হয়েছে ৪৩ লক্ষের কিছু বেশি। এর পরে রয়েছে উত্তরাখণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, কর্নাটক, রাজস্থান এবং দিল্লি। সারা দেশে এ দিন পর্যন্ত সদস্য সংগ্রহ হয়েছে তিন কোটি ৮৮ লক্ষ ৮১ হাজার।
তবে শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযানে দেশের পূর্ব এবং উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিই পিছিয়ে রয়েছে। এতে যথেষ্ট চিন্তায় রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দলের এক নেতার কথায়, “লোকসভা নির্বাচনের পরে যে ভাবে দল এ রাজ্যের আন্দোলনে প্রথম সারিতে উঠে এসেছে, তার প্রতিফলন সদস্য সংগ্রহ অভিযানে পড়েনি। সেটাই চিন্তায় ফেলে দিয়েছে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে। আপাতত তাঁরা এই অভিযানকে আরও আক্রমণাত্মক করার উপরেই জোর দিয়েছেন।” ওই নেতার কথায়, “কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করেন, এ রাজ্যে এক কোটি প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ হলে তার মাত্র ১০ শতাংশ সক্রিয় ভাবে ময়দানে নামবে। বিধানসভা ভোটে ভাল ফল করতে গেলে ওই পরিমাণ সক্রিয় সদস্যকে ময়দানে নামাতেই হবে।”
পশ্চিমবঙ্গ সদস্য সংগ্রহে প্রথম ধাপে ব্যর্থ, রাহুলবাবু অবশ্য তা মানছেন না। তাঁর বক্তব্য, “লক্ষ্যমাত্রা এক কোটি নয়। ৫০ লক্ষ। আমাদের গত বছর সদস্য ছিল ১লক্ষ ২৫ হাজার। এ বছর ইতিমধ্যেই আমরা ১৩ লক্ষে পৌঁছে গিয়েছি। আশা করছি, ৫০ লক্ষের কাছাকাছি পৌঁছে যাব। এই সাফল্যকেও খাটো করে দেখা যাবে না।”
মাস দুয়েক আগে থেকে বিজেপি মোবাইল ফোনে ‘মিস্ড কল’-এর মাধ্যমে সারা দেশে সদস্য সংগ্রহ অভিযানে নেমেছে। খাতায়-কলমে সদস্য সংগ্রহ করতে গেলে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ওঠে বলেই এ বারে মোবাইল ফোনকে মাধ্যম হিসাবে বেছে নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। এ জন্য বিশেষ সফ্টওয়্যারও তৈরি করা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে সদস্য সংগ্রহে বিজেপি দাগ কাটতে না পারলেও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-এর কর্মসূচি কিন্তু এখানে থেমে নেই। এ দিনই শহিদ মিনার ময়দানে আরএসএস-এর কলকাতা শাখার বার্ষিক কার্যক্রমে বক্তৃতা করেছেন সংগঠনের সহ সরকার্যবাহ সুরেশ সোনি। তোষণের রাজনীতির বিরোধিতা করে তিনি বলেন, “আমাদের দেশে জাতীয়বাদের ভিত্তিতে ভোট চাওয়া হয় না। ভোট চাওয়া হয় বিশেষ ধর্মকে তোষণের ভিত্তিতে। কিন্তু তোষণের রাজনীতিতে দেশের উন্নতি হয় না। এতে বিচ্ছিন্নতাবাদ বাড়ে।”