ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার চার বছরের মধ্যে সিপিএমের পার্টি সদস্য এবং সর্বক্ষণের কর্মী (হোলটাইমার) সংখ্যা দ্রুত হারে কমতে শুরু করেছে। ২০১১ সালে যেখানে পার্টির সদস্য সংখ্যা ছিল ২ লক্ষ ৬৯ হাজার। চার বছরের মধ্যে তা ৪৩ হাজার কমে দাঁড়িয়েছে ২ লক্ষ ২৬ হাজার। সর্বক্ষণের কর্মী সংখ্যা এই চার বছরে ৩৩৮৬ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২২৮৩-তে। ছাত্রফ্রন্ট ছাড়া বাকি প্রতিটি ফ্রন্টে কমেছে সর্বক্ষণের কর্মী সংখ্যা। অর্থাৎ শুধু জনসমর্থনে রক্তক্ষরণ হয়নি, পার্টির মধ্যেও হয়েছে। সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনের রিপোর্টেই তা স্পষ্ট।
পার্টির সদস্য সংখ্যা কেন এ ভাবে কমল? দলের এক রাজ্য নেতার ব্যাখ্যা, “ক্ষমতায় থাকার কারণে যারা দলের সদস্য হয়েছিল, ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে তাদের একাংশ দ্রুত সরে যাচ্ছে।” দলের সর্বক্ষণের কর্মী সংখ্যার এই বিপুল হ্রাসের কারণ কী? রাজ্য পার্টির এক নেতার ব্যাখ্যা, “এর কারণ দু’টি। প্রথমত, সর্বক্ষণের কর্মী ভাতা এত কম যে, এই বাজারে তাতে সংসার চালানো অসম্ভব। বাম আমলে সর্বক্ষণের কর্মীদের পরিবারের এক জনকে বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়া যেত। কিন্তু এখন তৃণমূল আমলে আর তা সম্ভব নয়। তাই কমেছে সর্বক্ষণের কর্মীও।” সেই সঙ্গে দলের আদর্শের থেকে ব্যক্তিগত স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় অনেকেই স্বেচ্ছায় সর্বক্ষণের কর্মীর পদ নিতে অস্বীকার করেছেন।
২০১১ সালে রাজ্য ও জেলা পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী ছিলেন ১১৫৭ জন। ২০১২ সালে তা কমে হয় ১২৭৯। ২০১৩ সালে আরও কমে হয় ১২০৬ এবং লোকসভা ভোটে বামেদের বিপর্যয়ের পরে হয় ১১৪৫ জন। অর্থাৎ চার বছরে সিপিএমের সর্বক্ষণের কর্মী সংখ্যা ২৬%-এর বেশি কমেছে। শ্রমিক ফ্রন্টে ২০১১ সালে সর্বক্ষণের কর্মী ছিলেন ৫০২ জন। তা ৩৪% কমে হয়েছে ৩২৮ জন। কৃষক ফ্রন্টে সর্বক্ষণের কর্মী ৩৪% কমে ৫২০ থেকে দাঁড়িয়েছে ৩৪১ জনে। মহিলা ফ্রন্টে ১১১ জন থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৭৫ জন। এই কমার হারও ৩২%। যুব ফ্রন্টে ১১৫ জন থেকে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬৬ জন। কমার হার ৪২%। অন্যন্য ফ্রন্টে ৫৩৬ জন থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২৮২ জন। কেবল মাত্র ছাত্র ফ্রন্টেই কমেনি। ২০১১ সালে যেখানে সর্বক্ষণের কর্মী ছিলেন ৪৫ জন, এখন সেখানে ৪৬ জন।
দলের সদস্য সংখ্যা সব থেকে বেশি কমেছে কোচবিহার জেলায়। সেখানে ওই হ্রাসের হার ৩৪%। তার পরে পশ্চিম মেদিনীপুরে ২৭%, মালদহে ২৭%, কলকাতায় ২৮% এবং বাঁকুড়ায় ২৬%। তবে সব জেলায় কিন্তু সদস্য কমেনি। জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর, নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদে সদস্য সংখ্যা বড়েছে। সামান্য কমেছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায়। কেন রবীন দেব, অমিয় পাত্র, দীপক সরকারদের জেলায় সদস্য কমল, অথচ অন্য কয়েকটি জেলায় বাড়ল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।