সিপিএমের ব্রিগেডের জন্য ট্রেন-সাহায্য প্রভুর

সিপিএমের ব্রিগেড সমাবেশ ‘সফল’ করার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল নরেন্দ্র মোদীর সরকার! সিপিএমের আর্জি মেনে নিয়ে আগামী রবিবার ব্রিগেড সমাবেশের দিন দলের কর্মী-সমর্থকদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য বাড়তি লোকাল ট্রেন মঞ্জুর করলেন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভাকর প্রভু। রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপরে সংশোধনী প্রস্তাবে রাজ্যসভায় ভোটাভুটিতে বাম ও তৃণমূল-সহ সব বিরোধী একজোট হয়ে পরাস্ত করেছিল শাসক বিজেপি-কে।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৫ ০২:২৯
Share:

সুরেশ প্রভু।

সিপিএমের ব্রিগেড সমাবেশ ‘সফল’ করার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল নরেন্দ্র মোদীর সরকার! সিপিএমের আর্জি মেনে নিয়ে আগামী রবিবার ব্রিগেড সমাবেশের দিন দলের কর্মী-সমর্থকদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য বাড়তি লোকাল ট্রেন মঞ্জুর করলেন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভাকর প্রভু।

Advertisement

রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপরে সংশোধনী প্রস্তাবে রাজ্যসভায় ভোটাভুটিতে বাম ও তৃণমূল-সহ সব বিরোধী একজোট হয়ে পরাস্ত করেছিল শাসক বিজেপি-কে। তার জেরে বাম-তৃণমূলের মধ্যে ‘আঁতাঁতে’র অভিযোগে সরব হয়েছিলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। ঘটনাচক্রে, রাহুল যে দিন বাম-তৃণমূল আঁতাঁতের অভিযোগ আনছেন, সে দিনই দিল্লিতে সিপিএম সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রভুর রেল মন্ত্রক জানিয়ে দিয়েছে বাড়তি ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্তের কথা। অনুরোধ মেনে নেওয়ার জন্য প্রভুকে আনুষ্ঠানিক ভাবে কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছেন সিপিএম নেতৃত্ব।

ঠিক হয়েছে, রবিবার ব্রিগেড সমাবেশের সকালে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় নামখানা ও ক্যানিং থেকে দু’টি বিশেষ ট্রেন চালানো হবে। সমাবেশের পরে এক জোড়া ট্রেন আবার ফিরেও যাবে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তীই বাড়তি ট্রেনের জন্য রেলের কাছে দরবার করেছিলেন। অতীতে কংগ্রেস জমানাতেও সিপিএমের বড় সমাবেশের দিন অতিরিক্ত ট্রেন চলেছে। কিন্তু বিজেপি-র সঙ্গে বামেদের রাজনৈতিক ‘সম্পর্কে’র নিরিখেই এ বারের সিদ্ধান্তকে তাৎপর্যপূর্ণ ধরা হচ্ছে। সুজনবাবু অবশ্য বলছেন, “আমাদের জেলার মানুষের জন্য বাড়তি ট্রেন দরকার ছিল। আবেদন করার পরে লেগে থেকে অনুমতি আদায় করতে হয়েছে। দিল্লিতে থেকে ঋতব্রতও সাহায্য করেছে। আগেও এমন ট্রেনের ব্যবস্থা হয়েছে।” দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভৌগোলিক অবস্থান মাথায় রেখে লক্ষ্মীকান্তপুর-সহ আরও দু-একটি জায়গা থেকে ট্রেন পেলে ভাল হত বলেই সিপিএম নেতৃত্বের মত। তবে এক জোড়া ট্রেন তাঁদের বিশেষ কাজে লাগবে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। সুজনবাবুর কথায়, “আমাদের লোকজন টিকিট কেটে ওই ট্রেনে উঠবেন। গত বছর লোকসভা ভোটের আগে ব্রিগেড সমাবেশের সময়েও ট্রেনের ব্যবস্থা করতে হয়েছিল।”

Advertisement

নিজে সাংসদ থাকার সময়ে দিল্লির বৃত্তে পরিচিতি ছিল সুজনবাবুর। সেই সূত্রেই প্রভুর সঙ্গে তাঁর পরিচয়। সেই পরিচিতি কাজে লাগিয়েই এ বার দক্ষিণ ২৪ পরগনার জন্য কাজ হাসিল করতে পেরেছেন সুজনবাবু। নদিয়া বা উত্তর ২৪ পরগনার জন্য বাড়তি লোকাল ট্রেন কিন্তু এ বার হয়নি। বিজেপি-র নেতারা অবশ্য রেলের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষপাতহীনতা হিসাবেই দেখছেন। রাজ্য বিজেপি-র অন্যতম সাধারণ সম্পাদক এবং বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যের কথায়, “নিয়ম মেনে আবেদন করলে কেন্দ্রীয় সরকার যে রাজনৈতিক বিভাজন করে না, এই সিদ্ধান্তে তা আবার প্রমাণিত।”

বিজেপি-র আর এক নেতা রীতেশ তিওয়ারির মন্তব্য, “মোদী সরকার যে সুশাসনের কথা বলে, এটা তারও উদাহরণ।” এরই পাশাপাশি রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলকে বিঁধে রীতেশ বলছেন, “মোদীর জন্য নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম দিতে গিয়েও এক দল ফিরিয়ে নেয়। আর একটা দল সিপিএমের আবেদন মেনে বাড়তি ট্রেনের ব্যবস্থা করে। দৃষ্টিভঙ্গির তফাত এটাই!”

ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পরে এখন ট্রেনের মতো গণ-পরিবহণে আগের চেয়ে বেশি নির্ভর করতে হচ্ছে সিপিএমকে। বাস বা গাড়ি ভাড়া করেও অবশ্য জেলা থেকে বহু মানুষ ব্রিগেডে আসবেন। কিন্তু এলাকা থেকে দল বেঁধে গাড়ি চেপে এলে তৃণমূলের শাসানির মুখে পড়তে হবে, এমন জায়গাও আছে বেশ কিছু। সে সব জায়গায় সাধারণ যাত্রীর মতো ট্রেনে চেপে আসা বামেদের কাছে এখন তুলনায় নিরাপদ। সেই ‘নিরাপত্তা’র আশ্বাসও বয়ে আনছে প্রভুর দেওয়া বাড়তি ট্রেন!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement