সাত বছর আগের ডায়েরি-ক্যাসেট দেখবে এনআইএ

খয়েরি রঙের একটি পকেট ডায়েরি। তাতে রয়েছে বাংলাদেশের কয়েকটি জায়গা সম্পর্কে তথ্য এবং কয়েক জনের নাম ও ফোন নম্বর। যাবতীয় ফোন নম্বরই বাংলাদেশের। সাড়ে সাত বছর আগে মুর্শিদাবাদ জেলার লালগোলার এক পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া ওই ডায়েরি এখন খাগড়াগড়-বিস্ফোরণের তদন্তে নেমে ঘেঁটে দেখতে চাইছে এনআইএ। তাদের সন্দেহ, ডায়েরিটিতে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর কয়েক জন চাঁইয়ের নম্বরই লেখা। আর সে জন্যই খাগড়াগড়-কাণ্ডের সূত্রে পাওয়া জঙ্গি চক্রের কয়েক জন পাণ্ডার হদিস ওই সব তথ্য থেকে মিলতে পারে বলে তদন্তকারীরা সন্দেহ করছেন।

Advertisement

সুরবেক বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৪
Share:

খয়েরি রঙের একটি পকেট ডায়েরি। তাতে রয়েছে বাংলাদেশের কয়েকটি জায়গা সম্পর্কে তথ্য এবং কয়েক জনের নাম ও ফোন নম্বর। যাবতীয় ফোন নম্বরই বাংলাদেশের।

Advertisement

সাড়ে সাত বছর আগে মুর্শিদাবাদ জেলার লালগোলার এক পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া ওই ডায়েরি এখন খাগড়াগড়-বিস্ফোরণের তদন্তে নেমে ঘেঁটে দেখতে চাইছে এনআইএ। তাদের সন্দেহ, ডায়েরিটিতে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর কয়েক জন চাঁইয়ের নম্বরই লেখা। আর সে জন্যই খাগড়াগড়-কাণ্ডের সূত্রে পাওয়া জঙ্গি চক্রের কয়েক জন পাণ্ডার হদিস ওই সব তথ্য থেকে মিলতে পারে বলে তদন্তকারীরা সন্দেহ করছেন।

লালগোলার ফতেপুর গ্রামের একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে ২০০৭-এর ৯ এপ্রিল পুলিশ জেহাদি মতাদর্শ ও দেশ-বিরোধী প্রচারের অভিযোগে চার জনকে ধরেছিল। ধৃতদের এক জনের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ওই ডায়েরি। কোনও অজ্ঞাত কারণে পুলিশ সে সময়ে এ নিয়ে তেমন এগোয়নি। ডায়েরিতে লেখা নাম ও ফোন নম্বর ধরে সেই সব ব্যক্তির পরিচয় জানা ও তাঁদের খোঁজ পাওয়ার চেষ্টা পুলিশ করেনি বলেই জেনেছে এনআইএ।

Advertisement

ওই ডায়েরি দেখতে আদালতে কিছু দিনের মধ্যে আবেদন করার কথা খাগড়াগড়-কাণ্ডের তদন্তকারীদের। লালগোলা থানায় রুজু হওয়া মামলাটি লালবাগ আদালতে বিচারাধীন। তাই, ওই মামলায় বাজেয়াপ্ত জিনিসপত্র কাউকে দেখতে হলে আদালতের অনুমতি লাগবে। মুর্শিদাবাদ পুলিশ সূত্রের খবর, লালগোলা থানার মালখানায় ওই ডায়েরি এখন রাখা রয়েছে বহু জিনিসপত্রের সঙ্গে।

এনআইএ-র এক কর্তার কথায়, “খাগড়াগড়-তদন্তে জঙ্গি-চক্রের শিকড় খুঁজতে অনেক পুরনো মামলা সম্পর্কে খোঁজ নিতে হচ্ছে। লালগোলায় ২০০৭-এর ওই মামলা তো সে ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।” ওই অফিসার বলেন, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সূত্রে পাওয়া জঙ্গি নেটওয়ার্কের হদিস ২০০৭-এ সম্ভবত লালগোলাতেই পেয়েছিল পুলিশ। খাগড়াগড়ে হদিস মেলা জঙ্গি-চক্রটি ভারতে প্রথম ঘাঁটি গেড়েছিল লালগোলারই মকিমনগর মাদ্রাসায়।

শনিবারই এনআইএ কলকাতার নগর দায়রা আদালতে আবেদন করে জানায়, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন (আইএম)-এর আড়কাঠি সন্দেহে ২০১৪-র জুলাইয়ে কলকাতায় ধৃত জাহিদ হোসেনকে তারা জেলে গিয়ে জেরা করতে চায়। বিচারক এনআইএ-র সেই আর্জি মঞ্জুর করেন। চলতি সপ্তাহে এনআইএ-র একটি দল প্রেসিডেন্সি জেলে গিয়ে জাহিদকে জেরা করবে বলে এখনও ঠিক আছে।

বাংলাদেশের নাগরিক জাহিদ ২০০৯ সালে নদিয়ার এক ব্যক্তির হাত দিয়ে ১৫ কেজি বিস্ফোরক পাঠিয়েছিল আইএমের তদানীন্তন ‘অপারেশনাল চিফ’ ইয়াসিন ভটকলের জন্য। কিন্তু খাগড়াগড়-কাণ্ডের সূত্রে পশ্চিমবঙ্গে যে জঙ্গি-চক্রের কথা জানা গিয়েছে, এনআইএ-র বক্তব্য, সেটি জেএমবি-র। তা হলে জাহিদ গুরুত্বপূর্ণ কেন?

এক তদন্তকারী অফিসারের বক্তব্য, “প্রথমত, জেএমবি, আইএম সব-ই জেহাদি জঙ্গি নেটওয়ার্কের অঙ্গ। একটি সংগঠন অন্যটির পরিপূরক হিসেবে কাজ করে।” অফিসার এ-ও জানান, বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জঙ্গি নেটওয়ার্ক চলার পিছনে জাহিদ হোসেন গুরুত্বপূর্ণ এক ব্যক্তি। এনআইএ-র ওই কর্তা বলেন, “বাংলাদেশ থেকে বেশ কয়েক জন জঙ্গি-চাঁইয়ের চোরাপথে ভারতে ঢোকার ক্ষেত্রে জাহিদ সাহায্য করেছে। খাগড়াগড়-কাণ্ডে ধৃত ও ফেরারদের কাউকে জাহিদ ভারতে ঢুকতে সাহায্য করেছিল কি না, সেই ব্যাপারেই ওকে আমরা জেরা করব।”

লালগোলায় বাজেয়াপ্ত একটি অডিও ক্যাসেটও পরীক্ষা করে দেখতে চান। লালগোলা থানার পুলিশের একটি দল বাঁশঝাড়ে ঘেরা জরাজীর্ণ বাড়িতে পৌঁছে দেখে, সামনে সাত-আট জন বসে আছে একটি ক্যাসেট রেকর্ডারের সামনে। আর তাতে বাজছে, ‘মুজাহিদরা জাগো, ওসামা বিন লাদেনের পথই সঠিক, আর দেরি নয়, চলো অস্ত্র হাতে যুদ্ধে নামি!’

খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণস্থল থেকে জেহাদি প্রচার সংক্রান্ত, বাংলাদেশ থেকে আসা কয়েকটি অডিও ও ভিডিও সিডি উদ্ধার করেছেন গোয়েন্দারা। লালগোলায় উদ্ধার হওয়া ওই ক্যাসেটের সঙ্গে খাগড়াগড়ে পাওয়া সিডি তাঁরা মিলিয়ে দেখবেন। তদন্তকারীদের মতে, ওই ক্যাসেটটিও বাংলাদেশ থেকেই ভারতে ঢোকে।

তবে এনআইএ-র এক তদন্তকারী বলেন, “সাড়ে সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে পড়ে থাকার পর ওই ক্যাসেট আদৌ শোনার মতো আছে কি না, সেটাই চিন্তার।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement