পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভায় তাদের একমাত্র নিশ্চিত আসনের জন্য লড়াই জমে উঠেছে সিপিএমের অন্দরে! দলের একাংশ চাইছে, রাজ্যে ধারাবাহিক নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে সিপিএমের মহিলা মুখ বৃন্দা কারাটকে রাজ্যসভায় পাঠানো হোক। দলেরই অন্য একাংশ আবার এই প্রস্তাবের ঘোরতর বিরোধী! তারা চাইছে, বিরোধী দলের চাহিদা খেয়াল রেখে এ রাজ্যেরই বলিয়ে-কইয়ে কোনও তরুণ মুখকে সাংসদ হওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক। একান্তই কোনও নতুন মুখ পাওয়া না-গেলে সিটুর রাজ্য সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তীকেই ফের মনোনয়ন দেওয়ার পক্ষপাতী দলের ওই অংশ।
রাজ্যসভায় এ বার বাংলা থেকে যে পাঁচটি আসন ফাঁকা হচ্ছে, তার মধ্যে সিপিএমেরই তিন সাংসদ শ্যামলবাবু, প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায় ও তারিণী রায়ের মেয়াদ ফুরোচ্ছে। বাকি দু’জনের কারও ফের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। সাম্প্রতিক কালে সিটুর রাজ্য সভাপতি হিসাবে শ্যামলবাবু যে ভাবে সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে কিছু ঘটনায় আন্দোলনের রাশ হাতে নিয়েছেন, তাতে তাঁকে ফের রাজ্যসভায় পাঠাতে আলিমুদ্দিনের বড় অংশেরই আপত্তি নেই। কিন্তু তাঁর ক্ষেত্রে প্রশ্ন হয়ে দেখা দিচ্ছে শারীরিক সমস্যা।
পলিটব্যুরোর মধ্যেও এই প্রশ্নে দ্বিমত আছে। মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যে নারী নিগ্রহের বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রতীক হিসাবে বৃন্দাকে ফের রাজ্যসভায় পাঠানোর পক্ষে যেমন মত আছে, তেমনই তার পাল্টা যুক্তিও আছে। শ্যামলবাবু নিজেই আগে দলকে জানিয়েছিলেন, তাঁর শরীর খুব ভাল যাচ্ছে না। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “শ্যামলবাবুর মতো বর্ষীয়ান নেতার ক্ষেত্রে ওই দিকটা মাথায় রাখতে হচ্ছে। তা ছাড়া, এখন আমাদের রাজ্যসভায় প্রতিনিধি পাঠানোর সুযোগ সীমিত। তাই নতুন বা তরুণ কোনও মুখকে সুযোগ দিতে পারলে সব চেয়ে ভাল হয়।”
দিল্লিতে মঙ্গলবার থেকে পলিটব্যুরোর যে বৈঠক শুরু হয়েছে, তার শেষ দিনে আজ, বুধবার বিষয়টি আলোচনায় ওঠার সম্ভাবনা। দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের ঘরণী বৃন্দা এর আগে অনিল বিশ্বাসের আমলে এ রাজ্য থেকেই রাজ্যসভায় গিয়েছিলেন। মেয়াদ ফুরনোর পরে তিনি অবশ্য পুনর্মনোনয়ন পাননি। এখন বিমান বসুরা আবার সে সুযোগ তাঁকে দিতে শেষ পর্যন্ত রাজি হবেন কি না, তার উপরেই নির্ভর করছে শ্যামলবাবুর ভাগ্য! তবে এরই মধ্যে তামিলনাড়ু থেকে এ দিন রাতে স্বস্তিদায়ক ইঙ্গিত পৌঁছেছে পলিটব্যুরোর কাছে। ওই রাজ্যে ৬টি রাজ্যসভা আসনে নির্বাচন ৭ ফেব্রুয়ারি। এডিএমকে নিজেদের জন্য ৪টি আসন সরাসরি জেতার পরে ৩৪ জন উদ্বৃত্ত বিধায়কের সমর্থন সিপিএমকে দিতে আপত্তি নেই বলে তামিলনাড়ুর সিপিএম নেতৃত্বকে ইঙ্গিত দিয়েছেন জয়ললিতা। শেষ পর্যন্ত তা-ই হলে ওই রাজ্যে রাজ্যসভার আসনটি ধরে রাখতে পারবেন কারাটেরা। গত বার সিপিআই এবং এ বার সিপিএম রাজ্যসভায় বামেদের জন্য আম্মার সমর্থনের হাত লোকসভা ভোটের আগে আশায় রাখছে কারাট-এ বি বর্ধনদের। এই পরিস্থিতিতে এ রাজ্যের পঞ্চম আসনটিতে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে দোটানায় পড়েছে কংগ্রেস। নির্দল, গ্রহণযোগ্য প্রার্থী দিয়ে বামেদের বাড়তি ভোট নিয়ে তাঁকে জিতিয়ে আনলে লোকসভা ভোটের আগে প্রচারের হাতিয়ার পেয়ে যেতে পারে তৃণমূল। আবার প্রার্থী না-দিলে তলে তলে তৃণমূলকে সমর্থনের বার্তা সামনে চলে আসবে। আপাতত কংগ্রেস তাই উভয় সঙ্কটে!