রাজধানীতে মমতা

রাষ্ট্রপতির দেখা না পেলে ফুল দিয়ে চলে আসব

সারদা কেলেঙ্কারিতে দল প্রবল চাপে। সেই চাপ কাটাতে আসরে নামা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ দিল্লি এসেও খড়্গহস্ত হলেন সিবিআই এবং বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি জড়ালেন অন্য জল্পনায়। আজ সন্ধ্যায় দিল্লি বিমানবন্দরে পা রেখেই মমতা অভিযোগ করেছেন, রাজনৈতিক চক্রান্তের কারণেই প্রতিশোধমূলক মনোভাব নিচ্ছে সিবিআই। বেছে বেছে গ্রেফতার করা হচ্ছে কেবল তাঁর দলের নেতাদেরই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৩০
Share:

সারদা কেলেঙ্কারিতে দল প্রবল চাপে। সেই চাপ কাটাতে আসরে নামা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ দিল্লি এসেও খড়্গহস্ত হলেন সিবিআই এবং বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি জড়ালেন অন্য জল্পনায়।

Advertisement

আজ সন্ধ্যায় দিল্লি বিমানবন্দরে পা রেখেই মমতা অভিযোগ করেছেন, রাজনৈতিক চক্রান্তের কারণেই প্রতিশোধমূলক মনোভাব নিচ্ছে সিবিআই। বেছে বেছে গ্রেফতার করা হচ্ছে কেবল তাঁর দলের নেতাদেরই। মমতার মতে, তাঁর দলকে বেকায়দায় ফেলার পিছনে মূল মাথা হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের। তাই আজ জেলবন্দি সহারা কর্তা সুব্রত রায়ের সঙ্গে অমিত শাহের ঘনিষ্ঠতার প্রসঙ্গ তুলেও মোদীকে বিঁধতে ছাড়েননি তৃণমূল নেত্রী।

গোড়ায় দিল্লি এসে প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির সামনে ধর্নায় বসার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত সুর পাল্টে অসুস্থ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করাই তাঁর উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছেন মমতা। কিন্তু আগামিকাল প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর দেখা হওয়াটাই অনিশ্চিত। প্রণববাবু এখনও হাসপাতালে। তাঁর সঙ্গে সকলকে দেখা করতে অনুমতি দিচ্ছেন না ডাক্তাররা। তাই সাক্ষাতের সময় চেয়েও তা পাননি মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

রাষ্ট্রপতি ভবন সূত্রে বলা হচ্ছে, মমতার সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎকার হবে কিনা তা আগামিকাল ডাক্তাররা পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেবেন। তার পর তা মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হবে। গত কাল প্রধানমন্ত্রী গিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেছেন। কিন্তু চিকিৎসকরা সবাইকে তাঁর কেবিনে যেতে দিতে চাইছেন না। কারণ, বাইরে থেকে কেউ এলে সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যায়। যদিও অন্যান্য রাজনৈতিক দল, এমনকী তৃণমূলের মধ্যেও জল্পনা, সারদা বিতর্কের মুখে তা হলে কি তৃণমূল নেত্রীকে এড়িয়েই চলতে চাইছেন রাষ্ট্রপতি? মমতা আজ বলেন, “আমি সব কাজ ছেড়ে রাষ্ট্রপতিকে দেখতে এসেছি। কিন্তু দিল্লি রওনা হওয়ার মুখে রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ফোন করে আমাকে না-আসতে বলা হয়। কিন্তু ভাবলাম, বেরিয়ে যখন পড়েছি, তখন ঘুরেই আসি। আমি দেখেছি প্রধানমন্ত্রী ওঁকে দেখতে গিয়েছেন। অসুস্থ মানুষকে বিরক্ত করতে চাই না। যদি দেখা না পাই তা হলে বাইরে থেকে ফুল দিয়ে চলে আসব।”

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ অনিশ্চিত হলেও সারদা নিয়ে সুর চড়াতে দলীয় সাংসদদের নিয়ে আগামিকাল সংসদের সেন্ট্রাল হলে বৈঠকে বসবেন মমতা। সে জন্য দিল্লিতে উপস্থিত সব তৃণমূল সাংসদকে কাল দুপুরে সংসদে আসতে বলা হয়েছে। মমতার নির্দেশে শীতকালীন অধিবেশনের গোড়া থেকেই তৃণমূল সাংসদেরা অভিনব পদ্ধতিতে বিজেপির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। কখনও হাতে ছাতা বা লাল ডায়েরি নিয়ে অথবা মুখে ঠুলি বেঁধে সংসদ চত্বরে শ্লোগান দিতে দেখা যাচ্ছে তাঁদের। মমতা চাইছেন ওই বিরোধিতাকে চড়া স্বরে নিয়ে যেতে। তৃণমূলের এক সাংসদের কথায়, “অধিবেশনের বাকি এক সপ্তাহে সরকার বিরোধিতাকে কী ভাবে আরও উচ্চগ্রামে নিয়ে যাওয়া যায় সম্ভবত সেই নির্দেশিকাই দেবেন দলনেত্রী।”

কিন্তু আগের ঘোষণামতো মমতা বিক্ষোভে সামিল হলেন না কেন? তা হলে কি তিনি পিছু হঠলেন?

তৃণমূল শীর্ষ সূত্রের দাবি, আসলে তাড়াহুড়ো না-করে গোটা বিষয়টি আগে বুঝেতে চাইছেন মমতা। কারণ সারদা নিয়ে বিক্ষোভের দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি রয়েছে তাঁর। আজ বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যে চড়া সুরে আক্রমণ করেছেন মমতা, সেটা তাঁর পিছু না হঠার নিদর্শন বলেই ওই সূত্রটির দাবি।

মমতা আজ বলেন, “সারদা তো আমাদের সময়ে তৈরি হয়নি, ২০০৬ সালে সিপিএম জমানায় হয়েছিল। কিন্তু এখন বেছে বেছে সিবিআই আমাদেরই নেতা-মন্ত্রীদেরই গ্রেফতার করছে। সহারা কেলেঙ্কারিতে তো বিজেপির সভাপতি অমিত শাহের

নাম এসেছে। কিন্তু তাঁকে তো সিবিআই আগ বাড়িয়ে গ্রেফতার করতে যাচ্ছে না।”

প্রসঙ্গত, গত কয়েক দিন ধরেই সহারার কর্ণধার সুব্রত রায়ের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর ছবি দেখিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে তৃণমূল। মমতার নির্দেশে একটি রহস্যময় লাল ডায়েরির কথাও দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। সহারার সেই ‘গোপন ডায়েরি’তে নাকি জনৈক ‘এনএম’ এবং অমিত শাহের নাম রয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রের অবশ্য খবর, এমন ডায়েরির কোনও অস্তিত্বই নেই। গোটা ব্যাপারটাই কাল্পনিক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement