বাংলার জন্য রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষিত বহু প্রকল্পের বেলাইন হয়ে যাওয়াকে এ বার অস্ত্র করে পাল্টা আক্রমণে নামছে কংগ্রেস।
বাংলার প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার অভিযোগে এ বারের ভোটে সরব তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারই পাল্টা হিসাবে কংগ্রেস বলতে চাইছে, রেলমন্ত্রী থাকাকালীন রাজ্যের জন্য মমতার ঘোষিত প্রকল্পের অধিকাংশই আসলে বাস্তবসম্মত নয়। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর অভিযোগ, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন বাংলার জন্য বিভিন্ন রেল প্রকল্পের ঘোষণা করে যে নবজাগরণের বাণী শুনিয়েছিলেন, এখন বোঝা যাচ্ছে তা ছিল ফাঁকা প্রতিশ্রুতি।” পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়ায় ডিজেল মাল্টিপল ইউনিট থেকে শুরু করে জোকা-বিবাদি বাগ মেট্রো সম্প্রসারণের কাজ ইত্যাদি ২৭টি প্রকল্পের কাজ কী অবস্থায় রয়েছে, তার ‘স্টেটাস রিপোর্ট’ তিনি প্রকাশ করেছেন। তাঁর দাবি, “এই রিপোর্ট রেল মন্ত্রকেরই তৈরি করা। যে কেউ তথ্য জানার অধিকার আইনে জেনে নিতে পারেন।’’
প্রচারে মমতা-সহ তৃণমূল নেতৃত্ব বলছেন, তাঁর আমলে ঘোষিত রেলের প্রকল্প রূপায়ণে বর্তমান রেল মন্ত্রক টালবাহানা করছে। রেলের রিপোর্টকে হাতিয়ার করে অধীর পাল্টা বলছেন, “তৃণমূলের মন্ত্রীদের আমলে যে প্রকল্পগুলি ঘোষিত হয়েছিল, তা তো রেল মন্ত্রক এখন অস্বীকার করতে পারছে না। কিন্তু এই সমস্ত প্রকল্পের বাস্তবায়ন করতে গেলে যে পূর্ব শর্ত পালনের একটা ব্যাপার আছে, তা মানা হয়নি। ফলে প্রকল্পগুলি এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে!”
ওই রিপোর্ট অনুসারে, হলদিয়ার ডিজেল মাল্টিপল ইউনিট প্রকল্পে অর্থের অপচয়ই করা হয়েছে। কিন্তু শিলান্যাসের পরে ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে ২৫ কোটি টাকা অনুমোদন হওয়া সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় ‘স্ট্যাটুটরি ক্লিয়ারেন্স’ (ফ্যাক্টরি লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রশন) প্রক্রিয়া গত তিন বছরে কেন শেষ করা হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে রিপোর্টে। এমনকী, এই প্রকল্পে স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থানও হয়নি বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। আদ্রার এমএলআর ওয়ার্কশপ প্রকল্প সম্পর্কে বলা হয়েছে, ২০১০-১১’য় শিলান্যাসের দেড় বছর পরেও প্রকল্পের কাজে অগ্রগতি হয়নি। কারণ টাকার অভাব। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘প্রাক্তন রেলমন্ত্রী কি জানতেন না যে, এই প্রকল্পের জন্য পর্যাপ্ত টাকা বরাদ্দ করা উচিত ছিল? আর যদি জানতেন, তার ব্যবস্থা কেন করে যাননি?’’
মমতার পরে রেলের প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন তৃণমূলের মুকুল রায়। বাংলার প্রকল্পে কেন্দ্র টাকা বরাদ্দ করছে না বলেই তিনি অভিযোগ করেছেন। কিন্তু ওই রিপোর্টের সূত্রে অধীরের পাল্টা অভিযোগ, “বজবজে বগি ম্যানুফ্যাকচারিং ফ্যাক্টরির কাজ এগোয়নি রাজ্য সরকারের অনুমতি না মেলায়। আবার বরানগর থেকে ব্যারাকপুর এবং দক্ষিণেশ্বর অথবা জোকা-বিবাদি বাগ মেট্রো সম্প্রসারণের কাজ এক চুলও এগোয়নি জমি অধিগ্রহণের কাজে রাজ্য সরকারের সহযোগিতা না মেলায়।’’ এমনকী, ডানকুনির ‘ইলেকট্রিক লোকো অ্যাসেম্বলি অ্যান্ড অ্যানসিলিয়ারি ইউনিট প্রোজেক্ট’ প্রকল্পে মাটি ভরাটের কাজও হয়নি। ডানকুনিতেই ডিজেল লোকো কম্পোনেন্ট ফ্যাক্টরি প্রকল্পের কাজেও অগ্রগতি হয়নি বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। নিউ জলপাইগুড়িতে মমতার ‘স্বপ্নের প্রকল্প’ বলে পরিচিত ‘কিষাণ-ভিশন প্রোজেক্ট, ২০১১’ রূপায়ণে রাজ্য সরকার এখনও আইনগত অনুমোদন দেননি। আবার খড়্গপুরে ‘সেন্টার ফর এক্সেলেন্স ফর ওয়াগন প্রোটোটাইপিং’ প্রকল্প নিয়ে রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই কাজের ভার কে নেবে, তা এখনও নির্ধারিত হয়নি।
প্রাক্তন রেল প্রতিমন্ত্রী মুকুলবাবু অবশ্য এই সমস্ত অভিযোগকে কোনও গুরুত্ব না দিয়ে বলেছেন, “সব প্রকল্পেরই প্রয়োজনীয় অনুমতি রয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার সব সময়েই বাংলার সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ করে। আমাদের ঘোষিত প্রকল্প রূপায়ণে যে অর্থ দরকার, কেন্দ্র তা দিচ্ছে না। আমরা কেন্দ্রীয় সরকার থেকে বেরিয়ে আসার পরে যাঁরা মন্ত্রী হয়েছেন, তাঁদের কোমরের তেমন জোর নেই যে, কেন্দ্রের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে এসে কাজগুলি বাস্তবায়িত করবেন!” মেট্রোর সম্প্রসারণের মতো যে কাজ রাজ্য সরকারের সহযোগিতার অভাবে আটকে রয়েছে বলে অধীরবাবুদের অভিযোগ, তা নিয়ে মুকুলবাবু অবশ্য সরাসরি কোনও উত্তর দেননি। তিনি বলেন, “নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে অধীরবাবুদের অপপ্রচার বাংলার মানুষ মেনে নেবে না!’’ তাঁর দাবি, “কেন্দ্রে এ বার নতুন সরকার আসবে। তৃণমূল সেই সরকারের নির্ণায়ক শক্তি হবে এবং বাংলার জন্য ঘোষিত সমস্ত রেল প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।”