মনিরুলের মন্তব্যের বিরোধিতায় বিধায়ক

দুষ্কৃতীদের বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালাক পুলিশ, কয়েক দিন আগে বলে গিয়েছেন তাঁর দলেরই এক বিধায়ক। তার সমালোচনায় এ বার মুখ খুললেন কেতুগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ। লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ইসলামের সেই বক্তব্য প্রসঙ্গে এ দিন তিনি সাফ বললেন, “আমাদের নেত্রী এ রকম উস্কানিমূলক বক্তব্য অনুমোদন করেন না। পুলিশই বা আমাদের মতো বিধায়কদের নির্দেশ শুনবে কেন?”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৩৪
Share:

এক্তিয়ার নেই, তবু লালবাতি লাগানো গাড়িতে কাটোয়া আদালতে হাজির অনুব্রত। জিজ্ঞেস করায় শুধু বলেন, “আমি লাল আলো পাই।” নিজস্ব চিত্র

দুষ্কৃতীদের বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালাক পুলিশ, কয়েক দিন আগে বলে গিয়েছেন তাঁর দলেরই এক বিধায়ক। তার সমালোচনায় এ বার মুখ খুললেন কেতুগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ। লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ইসলামের সেই বক্তব্য প্রসঙ্গে এ দিন তিনি সাফ বললেন, “আমাদের নেত্রী এ রকম উস্কানিমূলক বক্তব্য অনুমোদন করেন না। পুলিশই বা আমাদের মতো বিধায়কদের নির্দেশ শুনবে কেন?”

Advertisement

কেতুগ্রামের বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বাদশা শেখকে খুনের ঘটনা নিয়ে তৃণমূলের দু’টি পক্ষের মধ্যে চাপানউতোর শুরু হয়েছে গত সপ্তাহ থেকেই। তাঁরা তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি তথা কেতুগ্রামের পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামী হওয়ায় দলের অন্য গোষ্ঠী খুন করেছে বলে অভিযোগ করেছিলেন নিহতের পরিজনেরা। কেতুগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জাহের শেখ-সহ তৃণমূলের বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের করা হয়। জাহের আবার দলে সাহানেওয়াজের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। ঘটনার পরে সাহানেওয়াজ দাবিও করেছিলেন, “খুনের সঙ্গে যাঁদের নাম জড়ানো হচ্ছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।” এর দিন কয়েক পরেই নিহতের বাড়িতে এসে মনিরুল পুলিশের উদ্দেশ্যে মন্তব্য করেন, “যারা সন্ত্রাস করছে তাদের বাড়িটা ভাঙুন।”

সোমবার কাটোয়া আদালতে পুরনো একটি মামলায় হাজিরা দিতে আসেন অনুব্রত ও সাহানেওয়াজদু’জনেই। সেখানেই সাহানেওয়াজ বলেন, “পুলিশ তো তাদের উপরতলার নির্দেশ মেনে কাজ করবে। একটা কথা মনে রাখা দরকার, শুধু পুলিশ নয়, সাধারণ প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিরা হাত মিলিয়ে কাজ করে থাকেন।” তৃণমূল সূত্রে খবর, উস্কানিমূলক মন্তব্যের জন্য শনিবার কালীঘাটে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সদস্য পার্থ চট্টোপাধ্যায় সতর্ক করেন মনিরুলকে। মনিরুল যদিও এ নিয়ে আর কোনও কথা বলতে চাননি।

Advertisement

ঘটনাচক্রে, এ দিন সাহানেওয়াজ যখন উস্কানিমূলক মন্তব্যের বিরোধিতা করছেন, তাঁর থেকে খানিকটা দূরেই দাঁড়িয়েছিলেন অনুব্রত, যাঁর বিরুদ্ধে একাধিক বার এই রকম বক্তব্য রাখার অভিযোগ উঠেছে। অনুব্রত অবশ্য এ দিন বলেন, “এফআইআরে কাদের নাম আছে জানার দরকার নেই, পুলিশ দোষীদের খুব তাড়াতাড়ি ধরবে।”

এ দিন সকাল থেকেই কাটোয়া আদালত চত্বরে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়। দুপুরে ছ’টি গাড়ির কনভয় নিয়ে লালবাতি লাগানো গাড়ি চড়ে হাজির হন অনুব্রত। সঙ্গে ছিলেন লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ও দলের জেলা নেতা রানা সিংহ। পিছনে একটি গাড়িতে নিরাপত্তা রক্ষীর দল। গাড়ির বহর দেখে ভিড়ের মধ্যে কয়েক জন আইনজীবীর মন্তব্য, “দেখে মনে হচ্ছে, কোনও সিনেমার নায়ক এসেছেন!” গাড়ি থেকে নেমে এপিপিদের ঘরে চলে যান অনুব্রত। পরে এসিজেএম এজলাসে পৌঁছে গিয়েছেন শুনে আদালত কক্ষে যান। অনুব্রত আসার কিছুক্ষণ আগে আদালত চত্বরে আসেন কেতুগ্রামের বিধায়ক সাহানেওয়াজ। গাড়ি থেকে নেমে সোজা আদালত কক্ষে চলে যান তিনি।

দলে অনুব্রত ও সাহানেওয়াজ বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা হিসেবে পরিচিত। এ দিন প্রথমে তাঁদের মধ্যে দূরত্ব থাকলেও কোর্ট থেকে বেরোনোর সময়ে অনুব্রত সাহানেওয়াজকে ডেকে নেন। তাঁরা এক সঙ্গে দাবি করলেন, “আমাদের দলে কোনও গোষ্ঠী নেই।”

অনুব্রতর আইনজীবী সমীর চট্টরাজ জানান, ২০১০ সালের ৫ মার্চ মঙ্গলকোটের মল্লিকপুরে বোমাবাজি ও লুঠের ঘটনায় ১৫ জনের নামে অভিযোগ করেন রহমত শেখ। তাতে ১৩ ও ১৫ নম্বরে নাম রয়েছে অনুব্রত ও সাহানেওয়াজের। ২০১১ সালের মে মাসে কাটোয়া আদালত থেকে জামিন নেন তাঁরা। অনুব্রতবাবু এ দিন বলেন, “সিপিএমের আমলে অনেক মিথ্যা অভিযোগ করা হয়। অসুস্থতার কারণে নিয়মিত হাজিরা দেওয়া হয়নি। আজ হাজিরা দিয়ে গেলাম।” এই মামলাতেই তিন জন অভিযুক্তের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। মাসখানেক আগে আর এক অভিযুক্ত আজাদ মুন্সির দেহ অজয়ের চর থেকে উদ্ধার করেছিল পুলিশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement