একটি বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থা আমানতকারীদের টাকা জমা নিয়েও পরে তা ফেরত দেয়নি বলে কলকাতা হাইকোর্টে অভিযোগ করা হয়েছে। ওই সংস্থার ‘ব্রশিওর’ বা পুস্তিকায় প্রধান পরামর্শদাতা হিসেবে রাজ্যের মন্ত্রী থেকে শাসক দলের সাংসদের নাম আছে কেন, সেই প্রশ্ন তুললেন মামলার আবেদনকারীদের কৌঁসুলি।
কোচবিহারের বাসিন্দা ধনপতি দাস ওই অর্থ লগ্নি সংস্থায় টাকা রেখেছিলেন। কিন্তু মেয়াদ ফুরোনোর পরেও টাকা না-পেয়ে প্রথমে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। সেখানে কোনও সুরাহা না-মেলায় শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ধনপতিবাবু এবং তাঁর মতো আরও ১৪ জন আমানতকারী।
মঙ্গলবার ওই মামলার শুনানিতে ধনপতিবাবুদের আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য ওই সংস্থার একটি পুস্তিকা জমা দেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের এজলাসে। সেখানে সংস্থার প্রধান পরামর্শদাতাদের একটি তালিকা ছাপা হয়েছে। ওই তালিকার প্রথম নাম রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের। পরের নাম প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তৃণমূল সাংসদ সুলতান আহমেদের। এ ছাড়াও নাম রয়েছে ওই দলেরই আরও দুই সাংসদ তাপস পাল ও শতাব্দী রায়ের এবং কংগ্রেস বিধায়ক আবু নাসের খান চৌধুরীর।
বিকাশবাবুর প্রশ্ন, এই ধরনের একটা অর্থ লগ্নি সংস্থার প্রধান পরামর্শদাতা হিসাবে রাজ্যের মন্ত্রী, সাংসদদের নাম থাকবে কেন? মন্ত্রী-সাংসদেরা এর মধ্যে আছেন বলেই কি পুলিশ ওই অভিযোগের তদন্ত করছে না? বিকাশবাবু এই ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে তদন্তের আর্জি জানান।
আবেদনকারীদের বক্তব্য, উত্তরবঙ্গের পাঁচটি জেলা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা, এমনকী অন্য রাজ্যেও টাকা তুলেছে ওই সংস্থা। কিন্তু মেয়াদ ফুরোনোর পরেও তাঁরা টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। এমনকী ওই সংস্থা কত টাকা তুলেছে, তারও হিসেব পাওয়া যাচ্ছে না। এ দিনের শুনানিতে কেন্দ্রীয় এনফোর্সমেন্ট বিভাগ (ইডি), সেবি এবং সিরিয়াস ফ্রড ইনভেস্টেগেশন অফিস (এসএফআইও)-এর আইনজীবীরাও হাজির ছিলেন।
সব শুনে বিচারপতি ৭ এপ্রিলের মধ্যে কোচবিহারে দায়ের হওয়া ১৫টি মামলার সমস্ত নথি-সহ কেস ডায়েরি ইডি-র হাতে তুলে দেওয়ার জন্য পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন। ইডি এবং এসএফআইও মিলিত ভাবে ওই নথি দেখে একটি রিপোর্ট তৈরি করবে। ২২ এপ্রিল আদালতের কাছে সেই রিপোর্ট জমা দিতে হবে। সে-দিনই ফের শুনানি হবে। ইডি এবং এসএফআইও-কে এ কাজে সহায়তা করবেন কোচবিহারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। সেই রিপোর্ট সেবিকেও দেওয়া হবে। সেবি রিপোর্ট পড়ে কী করা উচিত, তার ব্যাখ্যা দেবে।
অভিযোগের ব্যাপারে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী বলেন, “একটা সময় ছিল, যখন রোজই নতুন নতুন সংস্থার নানা অনুষ্ঠান হতো। অনেক অনুষ্ঠানে আমাদের যেতেও হতো। এগুলোর মধ্যে কে যে ‘চিটফান্ড’, আর কে নয়, তা বোঝা সম্ভব নয়। তবে যে-সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাদের সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই।” আর সুলতান আহমেদ বলেন, “এই নিয়ে মামলা চলছে। আদালতই বিচার করবে। তবে এ-রকম কোনও সংস্থার সঙ্গে আমি কোনও ভাবে যুক্ত নই।”