মুন্ডেকে শ্রদ্ধা, শাসকের কাছে তপন ব্রাত্যই

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গোপীনাথ মুন্ডের জন্য রাহুল গাঁধী যা পারলেন, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তপন শিকদারের জন্য তা পারলেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! দিল্লিতে মঙ্গলবার সকালে পথ দুর্ঘটনায় মৃত মুন্ডের মরদেহে শ্রদ্ধা জানাতে বিজেপি-র সদর দফতরে হাজির হয়েছিলেন কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল। সঙ্গে ছিলেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হরিশ রাওয়াত। কেন্দ্রে সরকার গঠনের পরেও বিজেপি-র সঙ্গে কংগ্রেসের তিক্ত লড়াই চলছে। কিন্তু বিজেপি নেতা মুন্ডের মৃত্যুতে সেই তিক্ততার রেশ রাখতে দেননি কংগ্রেস নেতৃত্ব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৪ ০৩:০০
Share:

সৌজন্য। বিজেপি কার্যালয়ে তপন শিকদারের মরদেহে মালা দিচ্ছেন মহম্মদ সেলিম। মঙ্গলবার দীপঙ্কর মজুমদারের তোলা ছবি।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গোপীনাথ মুন্ডের জন্য রাহুল গাঁধী যা পারলেন, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তপন শিকদারের জন্য তা পারলেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!

Advertisement

দিল্লিতে মঙ্গলবার সকালে পথ দুর্ঘটনায় মৃত মুন্ডের মরদেহে শ্রদ্ধা জানাতে বিজেপি-র সদর দফতরে হাজির হয়েছিলেন কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল। সঙ্গে ছিলেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হরিশ রাওয়াত। কেন্দ্রে সরকার গঠনের পরেও বিজেপি-র সঙ্গে কংগ্রেসের তিক্ত লড়াই চলছে। কিন্তু বিজেপি নেতা মুন্ডের মৃত্যুতে সেই তিক্ততার রেশ রাখতে দেননি কংগ্রেস নেতৃত্ব। সাম্প্রতিক কালে গাঁধী পরিবারের কেউ বিজেপি দফতরে পা না-রাখলেও শোকের আবহে এ দিন সৌজন্য দেখাতে উপস্থিত হয়েছিলেন রাহুল। অথচ কলকাতায় বিজেপি নেতা তপনবাবুর শেষ যাত্রায় রয়ে গেল সেই অসৌজন্যের কাঁটা! না মমতার সরকার, না তাঁর দল কারও পক্ষ থেকেই এ দিন শ্রদ্ধা জানানো হল না তপনবাবুর মরদেহে। অথচ সিপিএম-সহ সব দলের নেতারাই রাজনৈতিক মতপার্থক্য সরিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন।

তপনবাবু ছিলেন এক সময় তৃণমূলেরই জোটসঙ্গী। এনডিএ মন্ত্রিসভায় এ রাজ্য থেকে তৃণমূল নেত্রীরই সহকর্মী ছিলেন বিজেপি-র প্রাক্তন এই রাজ্য সভাপতি। তাঁর মৃত্যুতে শাসক দল ও সরকারের এমন আচরণে স্বভাবতই ক্ষোভ গোপন করেননি বিজেপি-র বর্তমান রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। সরকার ও শাসক দলের অসৌজন্যের কড়া নিন্দা করে তাঁর মন্তব্য, “হয়তো মুখ্যমন্ত্রী ইডেনে কেকেআরের বিজয় উৎসব পালনে বেশি ব্যস্ত ছিলেন। নয়তো সচেতন ভাবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ফুল বা নিদেনপক্ষে শোকবার্তাও না পাঠানোর!” রাজ্য সরকারের কেউ না এলেও রাজ্যপালের প্রতিনিধি অবশ্য তপনবাবুর মরদেহে মালা দিয়ে গিয়েছেন।

Advertisement

তৃণমূল ছাড়া আর সব দলের তরফে তপনবাবুকে শ্রদ্ধা জানানো নিয়ে বিজেপি-র ক্ষোভ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের বক্তব্য, “ওঁরা ওঁদের কথা বলেছেন। যে দিন তপনবাবু মারা যান, মুখ্যমন্ত্রী সে দিন উত্তরবঙ্গে সরকারি কাজে ব্যস্ত ছিলেন। আমি কিন্তু একটি চ্যানেলে তপনবাবুর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছি।” রাজ্য সরকারের তরফে শ্রদ্ধা না জানানো নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মুকুলবাবু বলেছেন, “আমি যত দূর জানি, কেউ রাজ্য বিধানসভার সদস্য (বর্তমান বা প্রাক্তন) না হলে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয় না।” তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের এক কর্তারও ব্যাখ্যা, রাজ্যের প্রোটোকল বিধি অনুযায়ী প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মৃত্যুতে শ্রদ্ধা-সম্মান জানানোর কোনও সংস্থান নেই। তবে সরকার চাইলে সৌজন্যবশত সরকারি প্রতিনিধি গিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে থাকেন। তপনবাবুর ক্ষেত্রে সরকারি ভাবে তেমন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

মৃত্যুর পরেও অসৌজন্য প্রদর্শনের অভিযোগ বঙ্গ রাজনীতিতে অবশ্য নতুন নয়। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল সেনের মৃত্যুতে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু শ্রদ্ধা না-জানানোয় বিতর্ক হয়েছিল এক সময়। আরও আগে পুলিশমন্ত্রী কালীপদ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে বিধানসভায় শোকপ্রস্তাবে অংশ নিতে রাজি হননি তদানীন্তন বিরোধী দলনেতা জ্যোতি বসু। অসৌজন্যের সে পরম্পরাই ছায়া ফেলল তপনবাবুর অন্তিম যাত্রায়।

দিল্লির ছবি কিন্তু এ দিন ছিল আলাদা। অশোক রোডে বিজেপি-র দফতরে গিয়ে মুন্ডের মরদেহের সামনে হাতজোড়ে প্রণাম সেরেছেন রাহুল। কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীও মুন্ডের স্ত্রী প্রদন্যাকে চিঠি লিখে শোকপ্রকাশ করেছেন। সনিয়া লিখেছেন, ‘জীবনে কিছু ঘটনা থাকে, যার উপরে কারও নিয়ন্ত্রণ থাকে না এবং তা মেনে নিতে হয়’। সাধারণ পরিবার থেকে যে ভাবে পরিশ্রমের জোরে উঠে এসেছিলেন মুণ্ডে, তাতে সকলের জন্যই অনুপ্রেরণা আছে বলেও সনিয়া বুঝিয়েছেন।

তপনবাবুর দেহ এ দিন সকালে ‘পিস হেভ্ন’ থেকে বার করে মধ্য কলকাতায় মালদা সম্মিলনী ঘুরে শ্যামবাজারে তাঁর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। তপনবাবুর আত্মীয়স্বজনদের পাশাপাশি প্রাক্তন বিচারপতি শ্যামল সেন সেখানে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন। বিজেপি-র রাজ্য দফতরে মরদেহ দলের বহু নেতা-কর্মী শ্রদ্ধা জানান। এখানেই তপনবাবুকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন সিপিএমের দুই নেতা মহম্মদ সেলিম ও রবীন দেব। মালা দিয়ে যাওয়ার সময় সেলিম বলেন, “রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও তপনবাবু ব্যক্তিগত সম্পর্কে তার ছাপ ফেলতে দেননি।” প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে জয়প্রকাশ মজুমদার শ্রদ্ধা জানান। বহু মানুষের ভিড়ে তপনবাবুর শেষযাত্রা যায় নিমতলা শ্মশানে।

দিল্লিতে তাঁর দলের সাংসদরা কেউ মুন্ডেকে শ্রদ্ধা জানাতে না গেলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা কিন্তু ফেসবুকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রয়াত কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে। মুন্ডেকে স্মরণ করে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘তাঁর আকস্মিক ও দুঃখজনক মৃত্যুতে আমি মর্মাহত। দীর্ঘ দিন ধরে ব্যক্তিগত ভাবে আমি ওঁকে চিনতাম’। তপনবাবুর জন্য এমন কোনও ই-বার্তাও ছিল না!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement