জয়ের পরে জুন মালিয়া ও তৃণমূল কর্মীরা। —নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের এক কালের ঘনিষ্ঠ শিশির অধিকারীর ভোটেই এগরা-২ পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী আসন হারাতে হয়েছিল জোড়াফুল শিবিরকে। এ বার তৃণমূলনেত্রীর আস্থাভাজন জুন মালিয়ার ভোটে ওই পঞ্চায়েত সমিতির সমস্ত আসন পুনরুদ্ধার করল তৃণমূল।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে এগরা-২ পঞ্চায়েত সমিতির ২৪ আসনের মধ্যে ১২টিতে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। বাকি ১২ আসন জিতেছিল বিজেপি। লটারির মাধ্যমে সভাপতির আসন পায় তৃণমূল। সহসভাপতির দায়িত্ব পায় বিজেপি। কিন্তু স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ নির্বাচনে কাঁথির তৎকালীন সাংসদ শিশিরের ভোট যায় বিজেপির পক্ষে। তিনি তখনও খাতায়কলমে তৃণমূল। মেদিনীপুরের বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ এবং উত্তর কাঁথির বিজেপি বিধায়ক সুমিতা সিংহের ভোটের জোরে সব ক’টি কমিটিরই দখল নিয়েছিল বিজেপি। তবে বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরের তৃণমূল সাংসদ জুনের ভোটে পঞ্চায়েত সমিতির সমস্ত স্থায়ী সমিতির ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করল তৃণমূল। অন্য দিকে, ক্ষমতা হাতছাড়া হতে পারে বুঝতে পেরে আগেভাগেই ভোটাভুটিতে হাজিরা এড়িয়েছেন বিজেপির সদস্যরা।
সূত্রের খবর, অবস্থানগত ভাবে এগরা-২ পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনে ভোট দেওয়ার অধিকার পান কাঁথির সাংসদ, উত্তর কাঁথির বিধায়ক, এগরার বিধায়ক ও মেদিনীপুরের সাংসদ। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের পরে এগরা-২ পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী সমিতি গঠনের ভোটে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক, জেলা পরিষদের সদস্য মিলিয়ে তৃণমূলের ঝুলিতে ছিল ১৯টি ভোট। অন্য দিকে, মেদিনীপুরের বিজেপি সাংসদ ও উত্তর কাঁথির বিজেপি বিধায়কের ভোট মিলিয়ে গেরুয়া শিবিরের ঝলিতেও ছিল ১৯টি ভোট। ওই সময়ে শিশিরের ভোটটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওই সময় তৃণমূল সাংসদ হয়েও শিশির অধিকারীর সাংসদ কোটার ভোট গিয়েছিলেন বিজেপির ঝুলিতে। শিশির জানিয়েছিলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অঙ্গ হিসেবে তিনি ভোট দিয়েছেল বিজেপির পক্ষে। সে দিন শিশিরের সমর্থনে ২০টি ভোট পাওয়ায় পঞ্চায়েত সমিতির সব ক’টি স্থায়ী সমিতির ক্ষমতা যায় বিজেপির দখলে। তবে পট পরিবর্তন হয় ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর আসনটি তৃণমূলের হাতে যাওয়ার পর। জুনের ভরসায় তৃণমূলের পক্ষে মোট ২০টি ভোট নিশ্চিত জেনে স্থায়ী সমিতিগুলির দখল নিতে অনাস্থা প্রস্তাব আনে তৃণমূল। বৃহস্পতিবার সেই অনাস্থার ভোটাভুটিতেই জয়ী হয় তৃণমূল।
এগরা-২ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি স্বরাজ খাঁড়ার বলেন, ‘‘তৃণমূল সাংসদ শিশির অধিকারী দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। সে দিন শিশির অধিকারীর ভোটের জোরেই ক্ষমতা হাতছাড়া হয়েছিল তৃণমূলের। আজ সাংসদ জুন মালিয়ার ভোট পেয়ে ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করেছি আমরা। পদ হাতছাড়া হবে বুঝতে পেরেই বিজেপির সদস্যরা কেউ ভোটাভুটিতে আসেননি।”
বিজেপির মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক অমলেশ পাহাড়ী বলেন, ‘‘স্বাভাবিক নিয়মেই ক্ষমতা ফিরে পেল তৃণমূল। মেদিনীপুর লোকসভা হারানোর জন্য বিজেপির ভোট হত ১৯টি৷ এতে আমাদের কিছু করার ছিল না।”