বয়স্কদের নিয়ে উদাসীনতায় উদ্বেগ

প্রবীণদের উপরে নির্যাতন পশ্চিমবঙ্গে এখনও কিছুটা কম। কিন্তু বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে তাঁদের জন্য সরকারি প্রকল্প সম্পর্কে সচেতনতা— সব কিছুতেই পিছিয়ে আছে এই রাজ্য। এ দেশে ইউনাইটেড নেশনস পপুলেশন ফান্ড (ইউএনএফপিএ)-এর রিপোর্টে এই তথ্য উঠে এসেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৮:৩০
Share:

প্রবীণদের উপরে নির্যাতন পশ্চিমবঙ্গে এখনও কিছুটা কম। কিন্তু বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে তাঁদের জন্য সরকারি প্রকল্প সম্পর্কে সচেতনতা— সব কিছুতেই পিছিয়ে আছে এই রাজ্য। এ দেশে ইউনাইটেড নেশনস পপুলেশন ফান্ড (ইউএনএফপিএ)-এর রিপোর্টে এই তথ্য উঠে এসেছে।

Advertisement

রাষ্ট্রপুঞ্জের জনসংখ্যা বিশ্লেষক শাখাটির তরফে এই প্রথম বয়স্কদের অবস্থা নিয়ে এ দেশের সাতটি রাজ্যের পরিস্থিতি যাচাই করে রিপোর্ট তৈরি করা হল। বয়স্ক জনসংখ্যার আধিক্যের ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, তামিলনাডু, কেরল, মহারাষ্ট্র, পঞ্জাব, হিমাচলপ্রদেশকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। এ রাজ্যে প্রশাসনিক তথ্য জড়ো করে এবং প্রায় ১৩০০ পরিবারের সঙ্গে কথা বলে ওই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।

রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গ বিষয়ক রিপোর্টটি প্রকাশ করার আগেই এ দেশে ইউএনএফপিএ-র প্রতিনিধি ফ্রেডারিকা মেইজের এই ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পশ্চিমবঙ্গে যাঁরা সমীক্ষা করেছেন, সেই ক্যালকাটা মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউট অব জেরন্টলজি-র অধিকর্তা তথা বার্ধক্যবিজ্ঞান বিশারদ ইন্দ্রাণী চক্রবর্তী বলেন, “এ রাজ্যে অর্ধেকের বেশি প্রবীণই নবীন প্রজন্মের সঙ্গে মানসিক ব্যবধান, সন্তানদের দূরে থাকা, স্বামী বা স্ত্রীর মৃত্যু বা স্মৃতিলোপের মতো উপসর্গে ভোগেন।” রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, সমীক্ষার অন্তর্ভুক্ত অন্য রাজ্যগুলিতে এই সমস্যা অনেক কম।

Advertisement

ফ্রেডারিকা এ রাজ্যে বয়স্কদের আরও কয়েকটি সমস্যা তুলে ধরেন। গোটা দেশে ৪৪ শতাংশ প্রবীণ নাগরিক শারীরিক ভাবে দিব্যি সুস্থ। পশ্চিমবঙ্গে এমন তরতাজা বুড়োবুড়ি মোটে ২১ শতাংশ। দেখা, শোনা, হাঁটাচলার সমস্যা এখানেই বেশি। ফ্রেডারিকা বলেন, “সঞ্চয়ের অভাবে পরিবার বা সরকারি সাহায্যের উপরে নির্ভরশীল প্রবীণের সংখ্যা (৬০%) বা গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য দৈনিক ভাতা বা বেতনের মুখাপেক্ষী প্রবীণের সংখ্যা (৯০%) পশ্চিমবঙ্গেই বেশি। আবার সরকারি প্রকল্প নিয়ে সচেতনতার খামতিতেও এ রাজ্য এক নম্বরে।”

এই সমস্যাটি যে পুরনো রোগ, ব্রাত্যবাবুর কথাতেও সেটা পরিষ্কার। তিনি বলেন, “২০১১ সালে বিধায়ক হওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট পুর বোর্ডে বার্ধক্য ভাতা বিলির ক্ষেত্রে দুর্নীতির বিষয়টি আমার চোখে পড়ে।” ইউএনএফপি-র দাবি, সাম্প্রতিক রিপোর্টেও রাজনৈতিক পক্ষপাতের দরুন প্রবীণদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পর রূপায়ণে খামতি ধরা পড়ছে। তবে বয়স্কদের বিরুদ্ধে হিংসার ঘটনা এ রাজ্যে ঘটলেও সমীক্ষার অন্তর্ভুক্ত অন্য রাজ্যগুলির তুলনায় তা কম। ভারতে ষাটোর্ধ্ব জনসংখ্যার হার বৃদ্ধির পটভূমিতে এই সমীক্ষা শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের হিসেবে ২০৫০ সালের মধ্যে এ দেশে প্রবীণেরা সংখ্যায় বেড়ে (এখন ৮.৬%) মোট জনসংখ্যার ২২ শতাংশ হয়ে উঠবেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও উন্নত চিকিৎসায় আয়ু বৃদ্ধির ফলে বয়স্কের সংখ্যা বাড়লেও তাঁদের জীবনযাপনের মান অনেকটাই নিচু। বয়স্ক নীতি রূপায়ণে কেন্দ্রকে সাহায্য করছে ইউএনএফপিএ। ইতিমধ্যে যোজনা কমিশনের সঙ্গে তাদের আলোচনা হয়েছে। এ বার বয়স্কদের পরিচর্যা নীতি রূপায়ণে পরামর্শ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে রাজ্য স্তরে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement