দোলের আগের রাতে মেদিনীপুর শহরে সিপিএম, সিপিআই, ডিওয়াইএফআই এবং বিজেপি-র একাধিক দলীয় কার্যালয়ে হামলার অভিযোগ উঠল। একই সঙ্গে কলকাতার কাছে যাদবপুরে লেনিনের একটি মূর্তি নষ্ট করা নিয়েও উত্তেজনা ছড়াল। সব ঘটনাতেই অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। শাসক দলের তরফে অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
দলীয় সূত্রে খবর, বুধবার রাতে মেদিনীপুর শহরের রবীন্দ্রনগরে সিপিআইয়ের জেলা কার্যালয়ের লোহার গ্রিল ভাঙার চেষ্টা করা হয়। দলের কিছু পোস্টারও খুলে পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক সন্তোষ রাণা বলেন, “তৃণমূল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি।” অভিযোগ, শহরের পোস্ট অফিস রোডে সিপিএমের লোকাল কমিটির অফিসে দলের পোস্টার ও পতাকা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। একই ভাবে, কর্নেলগোলায় দলের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের অফিসেও হামলা করে পোস্টার ছিঁড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কোতবাজারে সিপিএমের শাখা কমিটির অফিসেও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ দলের কর্মী-সমর্থকদের। সিপিএমের শহর জোনাল কমিটির সম্পাদক সারদা চক্রবর্তীর অভিযোগ, “এক সঙ্গে এতগুলি পার্টি অফিসে এর আগে কখনও এ ভাবে হামলা হয়নি। তৃণমূলের লোকজনই এই কাজ করেছে।”
বিজেপি-র অভিযোগ, সুভাষনগরে তাদের দলীয় কার্যালয়ে পোস্টার-ফেস্টুন-পতাকা ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে। বিজেপি-র শহর সভাপতি অরূপ দাস বলেন, “আমাদের উত্থান যে শাসক দলকে ভাবাচ্ছে এই ঘটনা তারই প্রমাণ।” প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রেই তৃণমূলের নামে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। যদিও এই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “এ রকম কোনও ঘটনা ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। যদি কেউ এই কাজ করেও থাকে, তবে তার সঙ্গে দলের কোনও রকম সম্পর্ক নেই।” পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনার সঙ্গে কারা যুক্ত, তদন্তে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকালে মেদিনীপুর শহরে বামেদের প্রতিবাদ মিছিল হয়।
যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ডের কাছে লেনিনের মূর্তি নষ্ট করার ঘটনাতেও অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের দিকে। পুলিশে অভিযোগ দায়েরের পাশাপাশি এ দিন ওই ঘটনার প্রতিবাদে যাদবপুর থানায় ঘেরাও-বিক্ষোভ করে সিপিএম। সন্ধ্যায় প্রতিবাদ সভারও আয়োজন হয়েছিল। সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, “অসভ্য এবং তোলাবাজদের দল সরকার চালাচ্ছে এখন। তারা লুঠের টাকা ছাড়া পৃথিবীর আর কিছু বোঝে না! তারা বুঝেছে লেনিন মানেই সিপিএম! তাই মূর্তি নষ্ট করে বীরত্ব দেখাচ্ছে ভেবেছে!” সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষও এমন ‘ভণ্ডামি’র কড়া নিন্দা করে অপরাধীদের গ্রেফতার দাবি করেছেন।
তৃণমূলের তরফে কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁদের দলের কেউই যাদবপুরে লেনিন-মূর্তিতে আক্রমণের সঙ্গে জড়িত নয়। তাঁর বক্তব্য, “তৃণমূলের কেউ এই ধরনের সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করেন না। আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও মনীষীদের হেয় করার নিন্দা করেন। আমাদের কর্মীদের এমন মানসিকতা নেই।” সিপিএমকে শোভনের পাল্টা কটাক্ষ, “লেনিন মূর্তি কে বা কারা ভেঙেছে, তার জন্য তৃণমূলকে দায়ী করা সিপিএম এই অভ্যাসটা ত্যাগ করুক!”