খাগড়াগড়ের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে বা সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের নিন্দা করে এখনও একটি বিবৃতিও দেননি! তিনিই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং পুলিশমন্ত্রী। অথচ বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণ-কাণ্ডের পরে বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ফেসবুকে তাঁর জেহাদ ঘোষণা অব্যাহত! বিজেপি-র কাজকর্মে জরুরি অবস্থার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে বলে এ বার মন্তব্য করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গেই তাঁর হুঁশিয়ারি, সহনশীলতাকে যেন দুর্বলতা বলে ধরে নেওয়া না হয়!
বর্ধমানের ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকার এনআইএ তদন্তের নির্দেশ দেওয়ায় রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হল বলে ফেসবুকেই মন্তব্য করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সরাসরি কোনও ঘটনার উল্লেখ না করেই বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পক্ষে অশনি সঙ্কেত দেখা যাচ্ছে। ফেসবুক পেজেই মঙ্গলবার মমতার নতুন মন্তব্য, ‘মাতৃভূমির প্রতি ভালবাসা রাজনৈতিক আনুগত্যের ঊর্ধ্বে। রাজনীতিতেও নৈতিকতা এবং বিষয় সংক্রান্ত সঠিক তথ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে, ইদানীং বিজেপি তাদের নানা প্রচার কৌশলের মাধ্যমে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করে চলেছে। অসংসদীয় কথা বলা হচ্ছে, চরিত্র হনন করা হচ্ছে! এমনকী, মহিলাদেরও ছাড় দেওয়া হচ্ছে না’। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘এই ঔদ্ধত্য এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ জরুরি অবস্থার দিনগুলির কথা মনে পড়িয়ে দিচ্ছে! গণতন্ত্রের সৌন্দর্যের অবমাননা আমি দেখতে চাই না’।
মহিলা বলতে তিনি নিজেকেই বোঝাতে চেয়েছেন বলে তৃণমূলের একটি সূত্রের ব্যাখ্যা। যদিও ঠিক কোন ঘটনা বা কীসের প্রেক্ষিতে তিনি এমন কথা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য থেকে তা স্পষ্ট নয়। মমতার ওই মন্তব্যের মধ্যেই আছে, ‘সহনশীলতা প্রশংসনীয় গুণ। কিন্তু ধৈর্যকে যেন দুর্বলতা বলে ভুল বোঝা না হয়। কখনও কথার চেয়ে নীরবতাই ভাল’। কেউ কেউ মনে করছেন, বর্ধমান-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী চুপ কেন, এই নিয়ে বিজেপি-সহ বিরোধীরা লাগাতার যে প্রশ্ন তুলে যাচ্ছে, সেই দিকেই ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন মমতা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, একই দিনে নিজের ফেসবুক পেজে বিজেপি-কে তোপ দেগেছেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলে যুবরাজ হিসাবেই যাঁর এখন উত্থান ঘটছে। বিজেপি-র উদ্দেশে যুবরাজ বলেন, তাঁর পিসিকে তাদের কাছ থেকে আদর্শ শিখতে হবে না!
বিজেপি-ও তৃণমূল নেত্রীর প্রতি আক্রমণ অব্যাহত রেখেছেন। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ এ দিনও বলেছেন, “উগ্রপন্থীদের মূলোচ্ছেদ করার আশ্বাস দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কোনও বিবৃতি নেই! তিনি রাজনৈতিক বিবৃতি দিচ্ছেন ওই ঘটনার এনআইএ তদন্তের বিরোধিতা করে! এখান থেকে উগ্রপন্থীরা বার্তা পাচ্ছে যে, সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী তাদের পাশে আছেন।” রাহুলবাবুর আরও দাবি, ২০০৭ সালে যখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ৩১ জনের স্থায়ী কমিটিতে মমতার উপস্থিতিতেই এনআইএ গঠন সংক্রান্ত আলোচনা হয়েছিল। দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে কেন্দ্রীয় সংস্থা এনআইএ সরাসরি সে ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারবে এই সিদ্ধান্তে মমতা আপত্তি করেননি। এই প্রেক্ষিতে রাহুলবাবুর প্রশ্ন, “তা হলে এখন এনআইএ তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে অমান্য করা হচ্ছে, এ সব কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন বলছেন?” এর জবাবে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য পাল্টা বলেছেন, “রাহুবাবু, হুলবাবুরা শুধুই উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা করছেন! কোন বৈঠকে উপস্থিত থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই নিয়ে সমর্থন জানান, এমন কোনও কাগজপত্র তাঁরা দেখাতে পারবেন কী? তা হলে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন কেন?”