কলকাতা বিমানবন্দরে সৌগত রায় (বাঁ দিক থেকে) এবং কাকলি ঘোষদস্তিদারের সঙ্গে সুরেশ প্রভু। রবিবার সুদীপ ঘোষের তোলা ছবি।
প্রশাসনের কাছে দাবি-দাওয়া হোক কিংবা রাজনৈতিক গোলমাল— কোনও কিছুর জেরেই রেল যেন স্তব্ধ হয়ে না যায়। রবিবার কলকাতায় এসে রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সমস্ত সংগঠনের উদ্দেশে এই মর্মে আর্জি জানালেন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। তাঁর বক্তব্য: রেল অবরোধ করলে প্রশাসনের উপরে যত না চাপ সৃষ্টি হয়, তার অনেক বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয় আমজনতাকে। ‘‘ট্রেন রোখার আগে এটা সবার মাথায় রাখা উচিত।’’— মন্তব্য রেলমন্ত্রীর।
এবং এ প্রসঙ্গেই তিনি উদাহরণ টেনেছেন হরিয়ানা ও উত্তরবঙ্গের সাম্প্রতিক ঘটনাবলির। কী রকম?
চার দিন ধরে জাঠ সংরক্ষণ আন্দোলনে হরিয়ানা উত্তাল। রেল অবরোধের ফলে সাড়ে চারশোর বেশি ট্রেন বাতিল করতে হয়েছে। উন্মত্ত জনতা কয়েকটি স্টেশন ভেঙে-চুরে পুড়িয়েও দিয়েছে। নয়াদিল্লি থেকে কোনও ট্রেন হরিয়ানার উপর দিয়ে পঞ্জাব-হিমাচলে যেতে পারছে না। পাশাপাশি গ্রেটার কোচবিহারের দাবিতে কোচবিহারে রেল অবরোধের দরুণ শনিবার থেকে উত্তরবঙ্গে ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত। কমপক্ষে ৩০টি দূরপাল্লার ট্রেনের যাত্রাভঙ্গ হয়েছে। বাতিল করতে হয়েছে প্রায় ১৫টি ট্রেন। অনেক ট্রেন ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। উত্তরবঙ্গে আটকে পড়া ট্রেনে এক যাত্রীর মৃত্যুও হয়েছে।
সব মিলিয়ে দেশের দু’প্রান্তে অশেষ দুর্ভোগে পড়েছেন
ট্রেনযাত্রীরা। উপরন্তু রেল-কর্তাদের আক্ষেপ, রেলের আর্থিক অবস্থা এমনিতেই শোচনীয়। হরিয়ানায়
যে ভাবে সম্পত্তি নষ্ট করা হল, তাতে বোঝা আরও বাড়বে।
সঙ্গে রয়েছে বাতিল ট্রেনের টিকিটের টাকা ফেরতের ধাক্কা। রেলমন্ত্রীর কথায়, ‘‘নষ্ট সম্পত্তি মেরামতিতেই বিস্তর টাকা বেরিয়ে যাবে। উন্নয়ন হবে কী করে?’’ পশ্চিমবঙ্গে রেল অবরোধের ঐতিহ্য বহু পুরনো। শ্রমিক আন্দোলন, রাজনৈতিক বিরোধ, এমনকী পাড়ার কাজিয়াতেও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের চটজলদি উপায় হিসেবে রেলকে স্তব্ধ করে দেওয়ার ‘সহজপন্থা’টির সমান কদর যে দেশের অন্যত্রও, কোচবিহার ও হরিয়ানা তার জ্বলন্ত প্রমাণ। এ দিন কলকাতা বিমানবন্দরে রেলের এক অনুষ্ঠানে প্রভুর পর্যবেক্ষণ, ‘‘দেশের উন্নতির স্বার্থে পরিবহণের উন্নতি জরুরি। এ দেশে সবচেয়ে বড় পরিবহণ মাধ্যম হল রেল। তাকে আটকালে বা ক্ষতি করলে দেশ পিছোবে। যার প্রভাব পড়বে আমজনতার উপরেও।’’
দৃষ্টান্ত হিসেবে ফের হরিয়ানা-কোচবিহারের প্রসঙ্গ তুলেছেন রেলমন্ত্রী। উত্তরবঙ্গের রেল অবরোধে অনেক ট্রেন মাঝপথে থেমে গিয়েছে। বহু যাত্রীকে বাধ্য হয়ে ট্রেন ছেড়ে গাড়ি ভাড়া করতে হয়। হরিয়ানাতেও একই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে অসংখ্য মানুষকে। ‘‘মাঝপথে ট্রেন থামলে সবচেয়ে বিপদে পড়েন গরিব লোকেরা। গাড়ি ভাড়া করার মতো অত টাকা কি সবার কাছে থাকে?’’— প্রশ্ন প্রভুর। তাই তাঁর আবেদন, প্রতিবাদ-অসন্তোষ-বিক্ষোভ যতই থাক, সে সবের আঁচ থেকে রেলকে ছাড় দেওয়া হোক।
এ দিন বিমানবন্দরের অনুষ্ঠানটিতে রেলমন্ত্রী কলকাতার তিন রেল জোনের কয়েকটি প্রকল্পের কাজের সূচনা করেন। যেমন গড়িয়া-বিমানবন্দর মেট্রোপথের বিমানবন্দর থেকে যশোহর রোড পর্যন্ত অংশের। মেট্রো সূত্রের খবর: গড়িয়া
থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত লাইন আসার কথা ছিল মাটির উপর দিয়ে, উড়ালপুল মারফত। কিন্তু বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের আপত্তিতে ওখানে তা হচ্ছে না। ওই এলাকায় ট্রেন যাবে মাটির তলা দিয়ে, স্টেশনও হবে সুড়ঙ্গে। এ ছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সাঁকরাইল-সাঁতরাগাছি উড়ালপুল প্রকল্পের সূচনা করেছেন রেলমন্ত্রী। পূর্ব রেলের নৈহাটি ও রানাঘাট স্টেশনে একটি করে উড়ালপুলের উদ্বোধন হয়েছে। কলকাতা মেট্রো পরিষেবায় অতিরিক্ত ১৪টি ট্রেনের ঘোষণাও এ দিন শোনা গিয়েছে প্রভুর মুখে।
অনুষ্ঠানে দুই সাংসদ সৌগত রায় ও কাকলি ঘোষদস্তিদার উপস্থিত ছিলেন।