পূর্বে নজর দিতেই বাংলার দখল চান মোদী

দেশের পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে নিজের উন্নয়ন মানচিত্রে তুলে আনার লক্ষ্যেই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে শাসনক্ষমতায় দেখতে চান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই মর্মে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহকেও তিনি বার্তা দিয়েছেন। বস্তুত, মোদীর ওই স্বপ্নকে সফল করতেই এ রাজ্যে তৎপরতা বেড়েছে অমিতের। ঝাড়খণ্ড এবং দিল্লির বিধানসভা ভোটে জেতা এই মুহূর্তে অমিতের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তার মধ্যেও তিনি ৩০ নভেম্বর কলকাতায় সভা করবেন। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি হওয়ার পর দু’ মাসের মধ্যে দ্বিতীয় বার বঙ্গ সফর করছেন তিনি।

Advertisement

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৪ ০২:২২
Share:

দেশের পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে নিজের উন্নয়ন মানচিত্রে তুলে আনার লক্ষ্যেই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে শাসনক্ষমতায় দেখতে চান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই মর্মে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহকেও তিনি বার্তা দিয়েছেন। বস্তুত, মোদীর ওই স্বপ্নকে সফল করতেই এ রাজ্যে তৎপরতা বেড়েছে অমিতের। ঝাড়খণ্ড এবং দিল্লির বিধানসভা ভোটে জেতা এই মুহূর্তে অমিতের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তার মধ্যেও তিনি ৩০ নভেম্বর কলকাতায় সভা করবেন। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি হওয়ার পর দু’ মাসের মধ্যে দ্বিতীয় বার বঙ্গ সফর করছেন তিনি।

Advertisement

লোকসভা ভোটের প্রচারের সময় মোদী বলেছিলেন, দেশের পশ্চিমের রাজ্যগুলি অপেক্ষাকৃত উন্নত হলেও পূর্বের রাজ্যগুলি পিছিয়ে রয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর পূর্বের উন্নয়ন করাই হবে তাঁর অগ্রাধিকার। এখন প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসে মোদী বুঝছেন, পূর্বাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির সামগ্রিক উন্নয়ন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে সমন্বয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের যে অপরিসীম ভূমিকা রয়েছে, মমতা-জমানায় তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ফলে অন্যান্য রাজনৈতিক কারণ যা-ই থাক, শুধুমাত্র উন্নয়নের স্বার্থেই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ক্ষমতায় যাওয়া দরকার। বিজেপির শীর্ষ সূত্রের বক্তব্য, মোদীর কাছ থেকে এই বার্তা পেয়েই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের দু’ বছর আগে থেকেই তা নিয়ে সক্রিয় হয়েছেন অমিত। বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের সঙ্গে তাঁর ঘন ঘন বৈঠকও ওই সক্রিয়তারই ফসল।

প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের এক কর্তার মতে, অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় উত্তর-পূর্বকে যে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল, মোদী ওই অঞ্চলকে তার থেকেও অনেক বেশি গুরুত্ব দেন। প্রাক্তন সেনাপ্রধান ভি কে সিংহকে উত্তর-পূর্বের প্রতিমন্ত্রী করে আদৌ সন্তুষ্ট ছিলেন না মোদী। সে কারণে সম্প্রতি মন্ত্রিসভার রদবদলে সেই মন্ত্রক থেকে তাঁকে সরিয়ে বকলমে সেটি নিজের কাছেই রেখেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহকে ওই মন্ত্রকের দায়িত্ব দিয়ে মোদী নিজেই এ বারে উত্তর-পূর্বের উন্নয়নের বিষয়টি দেখবেন। এ মাসের শেষে প্রধানমন্ত্রী উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি সফর করবেন। সেখানে ওই রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গেও পৃথক বৈঠক করবেন তিনি। মায়ানমারে গিয়েও মোদী জানিয়েছেন, নরসিংহ রাওয়ের আমলে যে ‘পুবে তাকাও’ নীতি ঘোষণা করা হয়েছিল, এখন সেটির বদলের সময় এসেছে। এখন ‘লুক ইস্ট’-এর বদলে ‘অ্যাক্ট ইস্ট’-এর মন্ত্র নিয়ে এগোতে হবে। আর উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করে পশ্চিমবঙ্গ। যে রাজ্যের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভৌগোলিক কারণে বাংলার যে গুরুত্ব রয়েছে, তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। ফলে হোঁচট খাচ্ছে মোদীর উন্নয়নের স্বপ্নও।

Advertisement

এই প্রেক্ষিতেই বিধানসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা দখলের জন্য যা যা করণীয়, তা করার জন্য অমিতকে নির্দেশ দিয়েছেন মোদী। প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, কেন্দ্রে ও রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় থাকলে পশ্চিমবঙ্গের যেমন উন্নয়ন হবে, তেমনই পশ্চিমবঙ্গকে কেন্দ্র করে দেশের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গেও সামগ্রিক যোগাযোগের ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে। যার সুফল পাবে বাংলাও।

এই সূত্র ধরেই পরশু রাতে অমিত রাহুলবাবু ও কেন্দ্রের তরফে রাজ্যের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলা দখলের ছক চূড়ান্ত করেছেন। অমিতের নির্দেশে আজও দিল্লি রয়ে গিয়েছেন রাহুলবাবু। আজ তিনি দেখা করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে। মমতা সরকারের উপর চাপ বাড়াতে তিনি রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার অভিযোগ জানিয়ে রাজনাথকে রিপোর্ট পেশ করেছেন। বাংলাদেশের সীমান্ত বরাবর গরু পাচার ও অন্যান্য চোরাচালান কী ভাবে অবাধে হচ্ছে, সে ব্যাপারেও মন্ত্রীকে নালিশ জানিয়েছেন রাহুলবাবু। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজুর সঙ্গেও পৃথক বৈঠক করে তিনি সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়াক আবেদন জানান। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অফিসারদের নির্দেশও দিয়েছেন রাজনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement