এসএসসি

পার্থের বৈঠক সেরে বেরিয়েই মমতাকে চেয়ে পথ অবরোধ

দীর্ঘ আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্বে মুখ্যমন্ত্রীকে নিজেদের মধ্যে পেয়েছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। সেই দৃষ্টান্তে আস্থা রেখে অনশন-মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেও স্কুলশিক্ষকের পদপ্রার্থীরা এ-পর্যন্ত তাঁকে পাশে পাননি। তাই তাঁদের সমস্যায় মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে সল্টলেকে রাস্তা অবরোধ করলেন তাঁরা। এবং সল্টলেকের করুণাময়ী মোড়ে সেই অবরোধ হল সোমবার শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পরেই! ঘণ্টা তিনেক পরে পুলিশের অনুরোধে অবরোধ ওঠে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৩
Share:

ময়ূখ ভবনের সামনে এসএসসি-র বিক্ষোভকারীরা। নিজস্ব চিত্র

দীর্ঘ আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্বে মুখ্যমন্ত্রীকে নিজেদের মধ্যে পেয়েছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। সেই দৃষ্টান্তে আস্থা রেখে অনশন-মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেও স্কুলশিক্ষকের পদপ্রার্থীরা এ-পর্যন্ত তাঁকে পাশে পাননি। তাই তাঁদের সমস্যায় মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে সল্টলেকে রাস্তা অবরোধ করলেন তাঁরা।

Advertisement

এবং সল্টলেকের করুণাময়ী মোড়ে সেই অবরোধ হল সোমবার শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পরেই! ঘণ্টা তিনেক পরে পুলিশের অনুরোধে অবরোধ ওঠে। কিন্তু তত ক্ষণে ভরবিকেলের ওই অবরোধের জেরে মহাসমস্যায় পড়ে গিয়েছেন ঘরমুখো মানুষজন। পরিস্থিতি এতটাই ঘোরালো হয়ে ওঠে যে, ওই এলাকায় থমকে যাওয়া গাড়ি অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরিয়ে দিতে হয়। উপাচার্য-সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আধিকারিককে ঘেরাওমুক্ত করার জন্য যাদবপুরে লাথি-কিল-চড়-ঘুষির বন্যা বইয়ে দিয়েছিল পুলিশ। এ দিন কিন্তু রাস্তা মুক্ত করার জন্য পুলিশ সে-পথ নেয়নি। নিষেধ ছিল তাদের উপরে।

বস্তুত, স্কুলশিক্ষকের পদপ্রার্থীরা দীর্ঘ আন্দোলনে বারবার ১৪৪ ধারা ভাঙলেও গায়ের জোর খাটানো তো দূরের কথা, এ-পর্যন্ত তাঁদের বিরুদ্ধে তেমন কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি পুলিশ। বেশ কয়েক বার আশ্বাস দেওয়ার পরে এ দিন তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু তাতে যে বিশেষ কাজ হয়নি, বৈঠকের পরে প্রার্থীদের পথ অবরোধই তার প্রমাণ।

Advertisement

যাদবপুর তো বটেই, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়েরও বেশ কিছু পড়ুয়া ইতিমধ্যে ওই আন্দোলনকারীদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন। এ দিনের অবরোধেও যোগ দেন ওই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রছাত্রী। যাদবপুরের ‘হোক কলরব’-এর আদলে এই আন্দোলনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘হোক আলোড়ন’। এর মধ্যে টানা অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়ায় কয়েক জনকে হাসপাতালে পাঠাতে হয়। আন্দোলনকারীরা জানান, এ দিনও অনশনে অসুস্থ এক তরুণীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে। আন্দোলনকারীদের স্বাস্থ্য নিয়ে বিভিন্ন সময়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেও শিক্ষামন্ত্রী বারে বারেই বলেছেন, কমিশনের নিয়মবিধি মেনে ওই প্রার্থীদের চাকরির ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়।

২০১২ সালে রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নিয়েছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে তার ফল বেরোয়। সেই ফলাফলের ভিত্তিতে তৈরি মেধা-তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও সকলকে চাকরি দেওয়া হয়নি। নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামেন এক দল প্রার্থী। আন্দোলন চলছে সেই থেকেই। সপ্তাহ দুয়েক আগে ১৪৪ ধারা ভেঙে সল্টলেকে এসএসসি ভবনে ঢুকে অনশনে বসেন কিছু প্রার্থী।

সেই অনশন-আন্দোলন চলার মধ্যেই প্রার্থীদের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে এবং প্রার্থীদের সঙ্গেও তিনি কথা বলতে পারেন বলে আশ্বাস দেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। রাজভবনেও যান অনশনকারীদের প্রতিনিধিরা। ত্রিপাঠীর সাক্ষাতের ব্যাপারে রাজভবনের তরফে তাঁদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল বলে প্রার্থীদের দাবি। এখনও অবশ্য তাঁরা রাজ্যপালের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ পাননি। এরই মধ্যে অনশন-মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লেখেন আন্দোলনকারীরা। শুক্রবার ১৪৪ ধারা ভেঙে বিকাশ ভবনে শিক্ষামন্ত্রীর দফতরে যান কয়েক জন প্রার্থী। স্মারকলিপিও দেন। সে-দিন দেখা না-করলেও শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবু এ দিন আন্দোলনকারীদের সাত জন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে বসেন।

আন্দোলনকারীদের তরফে নিত্যানন্দ বিশ্বাস জানান, তাঁরা আট দফা দাবি সংবলিত একটি চিঠি শিক্ষামন্ত্রীকে দেন। তাঁদের দাবি, মেধা-তালিকায় ঠাঁই পাওয়া সকলকে চাকরি দিতে হবে। এই নিয়োগ নিয়ে সরকারই বিভ্রান্তি তৈরি করছে বলে আন্দোলনকারীদের অভিযোগ। প্রায় ৪০ মিনিট পরে বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসেন আন্দোলনকারীরা। তার পরেই মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে করুণাময়ী মোড়ে শুরু হয় অবরোধ।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবু জানান, তিনি এবং শিক্ষা দফতরের কয়েক জন কর্তা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসেছিলেন। ওই আন্দোলনকারীরা যে সত্যিই বঞ্চিত, তার কোনও প্রমাণ থাকলে সাত দিনের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে। “আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, ওদের টেট শংসাপত্র দেওয়া হবে। আগামী তিন বছর নিয়োগের সময় শুধু নির্দিষ্ট বিষয়ের পরীক্ষা দিলেই হবে,” আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।

তবে প্রার্থীরা কতটা আশ্বস্ত হয়েছেন, তা নিয়ে সংশয় থেকেই গিয়েছে। কেননা, বৈঠকের পরেই তাঁরা অবরোধ শুরু করে দেন! সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা দফতর ও প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে খবর পাঠায় পুলিশ। সরকারি সূত্রের খবর, আন্দোলনকারীদের উপরে বল প্রয়োগ করতে নিষেধ করা হয় পুলিশকে। বিধাননগরের এডিসিপি দেবাশিস ধর দফায় দফায় আলোচনা করেন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে। পুলিশের কাছে প্রার্থীদের দাবি ছিল, মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। পুলিশ তাঁদের জানায়, প্রোটোকল মেনে এ কাজ করা যায় না। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে যোগাযোগ করতে হলে পুলিশ কমিশনারের দফতরের মাধ্যমে সেটা করতে হয়। আজ, মঙ্গলবার এই ব্যাপারে বিধাননগর পুলিশের সদর দফতরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। তার পরেই, সন্ধ্যা সওয়া ৭টা নাগাদ অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।

“পুলিশের কথা মেনে আপাতত অবরোধ তুলে নেওয়া হয়েছে,” বলেন আন্দোলনকারীদের অন্যতম নেতা হরিপদ ছটুই। সেই সঙ্গে প্রার্থীরা জানিয়ে দেন, তাঁদের দাবি পূরণ না-হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement