বিজেপির বেলায় হাইকোর্টে মুখ পুড়েছিল। সিপিএমের বেলা তাই জল বেশি দূর গড়াতে দিল না পুলিশ। এক বার ‘না’ বলেও ভোল বদলে শহিদ মিনারে তাদের সভার ছাড়পত্র দেওয়া হল।
ফোন করে সেই ‘হ্যাঁ’ যখন জানানো হল, তখন হাইকোর্টে যাওয়া নিয়ে তৈরি হতে শুরু করেছে সিপিএম। দলের নেতারা হাইকোর্টের উল্টো দিকে নিজেদের আইনজীবীর ঘরে বসে মামলার কাগজপত্র সাজাতে শুরু করেছেন!
১৬ ডিসেম্বরের ওই সভার জন্য দু’মাস আগেই অনুমতি চেয়েছিল সিপিএম। চাওয়া হয়েছিল ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনের জায়গাটি। ঠিক যেখানে গত রবিবার সভা করলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। সিপিএমকে কিন্তু অনুমতি দেয়নি পুলিশ। তখন শহিদ মিনারে সভা করার সিদ্ধান্ত নেয় বামেরা। কিন্তু সোমবারই কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১৬ তারিখ শহিদ মিনার ময়দানে সভা করতে দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, তার আগে একটি ধর্মীয় সংগঠনের সভা রয়েছে। ১৬ তারিখ সভা করতে হলে মঞ্চ বাঁধার জন্য মাঠ চাই ১৫-তেই। কিন্তু ধর্মীয় সংগঠনের সভা শেষ হওয়ার পরে ১৬ তারিখের আগে খালি মাঠ সিপিএমের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব নয়, জানিয়েছিল পুলিশ।
এই পরিস্থিতিতে বুধবার দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর দুই সদস্য মানস মুখোপাধ্যায় ও সুভাষ মুখোপাধ্যায় কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার রাজীব মিশ্রের সঙ্গে দেখা করে বিকল্প হিসেবে ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে সভা করার অনুমতি চান। তাঁরা যুক্তি দেন, সিপিএমকে মানা করা হলেও সম্প্রতি বিজেপিকে সভা করতে দেওয়া হয়েছে। তাই তাঁদেরও অনুমতি দেওয়া হোক।
পুলিশের পক্ষ থেকে পাল্টা জানানো হয়, তা সম্ভব নয়। কারণ, বিজেপি-র সভার অনুমতি পুলিশ দেয়নি। হাইকোর্টের নির্দেশে বিজেপি সভা করেছে। পুলিশের এই আপত্তির কথা শুনে শেষ পর্যন্ত সিপিএম-ও বিজেপির পথে হেঁটে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়। বিকেল ৪টের পরে তাঁরা যখন দলের আইনজীবী প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন, তখন পুলিশের তরফে ফোন করে জানানো হয়, শহিদ মিনার ময়দানে সিপিএমের ১৬ তারিখের সভা করতে কোনও অসুবিধা নেই। ১৫ তারিখেই ফাঁকা মাঠ তাদের হাতে তুলে দেবে পুলিশ।
সিপিএম নেতাদের পাল্টা প্রশ্ন, দু’ঘণ্টায় কী করে সিদ্ধান্ত বদলাল? পুলিশের তরফে বলা হয়, যে ধর্মীয় সংগঠনের সভা করার কথা ছিল, তারা এক দিন আগে সভা করে মাঠ ছেড়ে দেবে বলেছে! পুলিশের এই ভূমিকায় বামেদের সভার অন্যতম উদ্যোক্তা নেপালদেব ভট্টাচার্যের তির্যক মন্তব্য, “পুলিশকে ধন্যবাদ। দায়িত্বশীল বিরোধী দল হিসেবে আমরা আইন-আদালত না করে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শহিদ মিনার ময়দানেই সভা করব।”
এই মতবদল নিয়ে পুলিশের যুগ্ম কমিশনার রাজীব মিশ্র কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে, লালবাজারে তিনি জানান, ১৬ ডিসেম্বর মঙ্গলবার, কাজের দিন। ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে সভা করলে যানবাহনের সমস্যা হতে পারে। তাই শহিদ মিনারে সভার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।