ধৃত বিজেপি নেতা, প্রশ্ন পুলিশের ভূমিকা নিয়ে

এফআইআর হয়েছে শনিবার গভীর রাতে। রবিবার সন্ধ্যাতেই পুলিশ গ্রেফতার করল তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতিকে খুনের চেষ্টায় অভিযুক্ত বিজেপি নেতাকে। আর এই সূত্র ধরেই বীরভূম জেলা পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগে সরব হয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁদের বক্তব্য, খুন, খুনের চেষ্টা বা থানায় ঢুকে পুলিশ পেটানোর মতো গুরুতর অভিযোগ থাকলেও পুলিশ শাসকদলের দাপুটে নেতাদের ধরছে না। জেরা পর্যন্ত করছে না। অথচ, বিরোধী নেতা-কর্মীদের ক্ষেত্রে সেই পুলিশই অতি-তৎপর!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বোলপুর ও কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২৫
Share:

বোলপুর আদালতে ধৃত বিজেপি নেতা নিমাই দাস। বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর তোলা ছবি।

এফআইআর হয়েছে শনিবার গভীর রাতে। রবিবার সন্ধ্যাতেই পুলিশ গ্রেফতার করল তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতিকে খুনের চেষ্টায় অভিযুক্ত বিজেপি নেতাকে।

Advertisement

আর এই সূত্র ধরেই বীরভূম জেলা পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগে সরব হয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁদের বক্তব্য, খুন, খুনের চেষ্টা বা থানায় ঢুকে পুলিশ পেটানোর মতো গুরুতর অভিযোগ থাকলেও পুলিশ শাসকদলের দাপুটে নেতাদের ধরছে না। জেরা পর্যন্ত করছে না। অথচ, বিরোধী নেতা-কর্মীদের ক্ষেত্রে সেই পুলিশই অতি-তৎপর!

শনিবার রাতে বাড়ি ফেরার পথে দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হন বোলপুরের সর্পলেহনা-আলবাঁধা পঞ্চায়েত এলাকার তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি শিবপদ ঘোষ। তাঁর ছেলে ওই রাতেই ১১ জন বিজেপি নেতা-কর্মীর নামে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেন। তার প্রথম নাম পাড়ুই এলাকার বিজেপি নেতা (আগে ছিলেন বিক্ষুব্ধ তৃণমূল) নিমাই দাসের। রবিবার সন্ধ্যায় পাড়ুইয়ের বাঁধনবগ্রামের বাড়ি থেকে নিমাইবাবুকে পুলিশ ধরে। সোমবার বোলপুর আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক ধৃতকে এক মাস জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

Advertisement

এই গ্রামেই গত বছর পঞ্চায়েত ভোটের আগের রাতে খুন হয়েছিলেন সে সময়ের বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মী (অধুনা নিমাইবাবুর সঙ্গে বিজেপি-তে নাম লেখানো) হৃদয় ঘোষের বৃদ্ধ বাবা সাগরচন্দ্র ঘোষ। এবং পাড়ুই-কাণ্ডে প্রথম দিন থেকেই নিমাইবাবু হৃদয় ঘোষদের পাশে থেকেছেন। সেই আক্রোশ থেকেই তাঁর স্বামীকে ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নিমাইবাবুর স্ত্রী তথা স্থানীয় কসবা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শঙ্করী দাস। এ দিন আদালত চত্বরে নিমাইবাবু বলেন, “আমি ওই ঘটনা নিয়ে কিছুই জানি না। তবু পুলিশ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে রাতভর থানায় থানায় ঘোরালো।” নিমাইবাবুকে দেখতে এসে আদালত চত্বরে হৃদয়বাবু দাবি করেন, “বাবার খুনের পরে নিমাইদা সব সময় পাশে থেকে সাহায্য করেছেন। ওই অপরাধেই তৃণমূল ওঁকে ফাঁসালো।”

সাগরবাবুর খুনের ঘটনার এফআইআরে প্রথম নাম থাকা বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে এ দিন বারবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। ‘দাদা ব্যস্ত আছেন’ বলে ফোন কেটে দিয়েছেন কোনও তৃণমূল কর্মী। মুখে কুলুপ এঁটেছেন জেলার পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়াও। এসএমএসের জবাব দেননি। বিজেপি-র জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলের দাবি, “পাড়ুই-কাণ্ডে অভিযুক্ত অনুব্রত মণ্ডল বা জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীকে গ্রেফতার তো দূর অস্ৎ, আজ পর্যন্ত জেরা করার সাহসও দেখাতে পারেনি পুলিশ। অথচ তারাই আমাদের নেতাকে মিথ্যা অভিযোগে ধরতে কতটাই না তৎপরতা দেখাল!”

বস্তুত, পাড়ুই-কাণ্ডের শুরু থেকেই পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট ওই ঘটনার সিবিআই-তদন্তের নির্দেশ দিয়ে তৃণমূলের অস্বস্তি আরও বাড়িয়েছে। বিচারপতি হরিশ টন্ডনের ওই রায়ের বিরুদ্ধেও রাজ্য সরকার হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আপিলও করেছে। এ দিনই বিচারপতি টন্ডনের রায়ের উপর স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়িয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ।

বিচারপতি জয়ন্তকুমার বিশ্বাস এবং বিচারপতি ঈশানচন্দ্র দাসের এজলাসে মামলার প্রথম শুনানিতে সরকার পক্ষের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, “পাড়ুই-কাণ্ডে নির্দিষ্ট দুই রাজনৈতিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার না করলেই তদন্ত সঠিক হচ্ছে না, আদালত তা বলতে পারে না।” তিনি এই অভিযোগও করেন, হাইকোর্ট একাধিক বার মামলার শুনানি চলাকালীন ঘটনার তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। আদালত তা করতে পারে না। এ দিন ডিভিশন বেঞ্চে নিহত সাগরবাবুর পুত্রবধূ শিবানীদেবীর আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি আবার নিম্ন আদালতে পাড়ুই মামলাটি মুলতুবি রাখার আবেদন জানান। ডিভিশন বেঞ্চ সেই আবেদন গ্রাহ্য করেনি। তবে, বেঞ্চ জানিয়েছে, ওই মামলা নিয়ে কোনও বক্তব্য থাকলে হাইকোর্টকে তা জানানো যাবে। ডিভিশন বেঞ্চে মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ২৭ অক্টোবর।

যে পাড়ুই আজ শাসকদলের গলার কাঁটা, সেখানে বিজেপি-র সংগঠন বাড়াতে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছেন সদ্য গ্রেফতার হওয়া নিমাই দাস। গত পঞ্চায়েত ভোট থেকেই বোলপুর ব্লকের কসবা-সহ ৯টি পঞ্চায়েত এলাকায় নিমাই দাসদের নেতৃত্বেই একজোট হন এলাকার বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। তবে, একমাত্র কসবাতেই তাঁরা অনুব্রত-অনুগামীদের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিতে পেরেছিলেন। বিক্ষুব্ধরাই কসবা পঞ্চায়েতে বোর্ড গড়েছেন। লোকসভা ভোটের পরে হৃদয় ঘোষের সঙ্গে তাঁরাও বিজেপিতে যোগ দেন। দলের জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলের দাবি, “পঞ্চায়েত ভোটে নিমাইবাবুদের বিদ্রোহ তৃণমূল নেতৃত্বকে ক্ষুব্ধ করেছিল। পাড়ুই-কাণ্ডে হৃদয়দের লড়াইয়ের সঙ্গী হয়ে সেই ক্ষোভ আরও বাড়িয়েছিলেন।

বর্তমানে ওর নেতৃত্বে এলাকায় আমাদের সংগঠন বাড়ছে। নিমাইবাবু তাই বহু দিন থেকেই শাসক দলের টার্গেট।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement