দত্ত এজলাসে এমডি নিয়েও ধাক্কা রাজ্যকে

কলকাতা হাইকোর্টে ফের ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার। এ বার এমডি পাঠ্যক্রম নিয়ে। হাইকোর্ট বৃহস্পতিবার জানিয়ে দিয়েছে, ভিন্ রাজ্যের পড়ুয়ারাও পশ্চিমবঙ্গের কোটায় এমডি পরীক্ষায় বসতে পারবেন। ওই পাঠ্যক্রমে আপন রাজ্য ও পররাজ্য ভেদাভেদ চলবে না। গত ডিসেম্বরে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায়, ভিন্ রাজ্যের যে-সব ছাত্রছাত্রী বাংলা থেকে এমবিবিএস পাশ করেছেন, তাঁরা এ রাজ্যের কোটায় এমডি পরীক্ষায় বসতে পারবেন না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৬
Share:

কলকাতা হাইকোর্টে ফের ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার। এ বার এমডি পাঠ্যক্রম নিয়ে। হাইকোর্ট বৃহস্পতিবার জানিয়ে দিয়েছে, ভিন্ রাজ্যের পড়ুয়ারাও পশ্চিমবঙ্গের কোটায় এমডি পরীক্ষায় বসতে পারবেন। ওই পাঠ্যক্রমে আপন রাজ্য ও পররাজ্য ভেদাভেদ চলবে না।

Advertisement

গত ডিসেম্বরে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায়, ভিন্ রাজ্যের যে-সব ছাত্রছাত্রী বাংলা থেকে এমবিবিএস পাশ করেছেন, তাঁরা এ রাজ্যের কোটায় এমডি পরীক্ষায় বসতে পারবেন না। তাঁদের সর্বভারতীয় কোটায় ওই পরীক্ষা দিতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের কোটায় তাঁরাই এমডি পরীক্ষা দিতে পারবেন, যাঁরা এ রাজ্যের বাসিন্দা। এমডি-তে রাজ্যের কোটা মানে মোট আসনের ৫০ শতাংশ। তার মধ্যে ২০ শতাংশ আবার এখানকার চাকরিরত চিকিৎসকদের জন্য বরাদ্দ করা আছে।

এই বিজ্ঞপ্তির কারণ হিসেবে স্বাস্থ্য দফতরের ব্যাখ্যা: পশ্চিমবঙ্গে চিকিৎসকের ঘাটতি অনেক। অথচ অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে, ভিন্ রাজ্যের অনেক ছাত্রছাত্রীই এ রাজ্যের খরচে এমডি পড়ে তাঁদের এলাকায় বা অন্য রাজ্যে অথবা বিদেশে চলে যান। ফলে এ রাজ্যের মানুষ তাঁদের কাছ থেকে চিকিৎসা পরিষেবা পান না। অর্থাৎ এখান থেকে এমডি করা সত্ত্বেও ওই সব ছাত্রছাত্রী আখেরে বাংলার কোনও কাজে আসেন না। তাই এ বার থেকে অন্য রাজ্যের কোনও বাসিন্দা পশ্চিমবঙ্গের কোটার আসনে এমডি পড়তে পারবেন না। এমডি পরীক্ষায় বসতে হলে প্রার্থীকে প্রমাণ দিতে হবে যে, তিনি বাংলারই বাসিন্দা। অন্যথায় সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে এমডি করার জন্য সর্বভারতীয় পরীক্ষায় বসতে হবে।

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতরের এই বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রায় ৩০০ পড়ুয়া হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন। চলতি বছরের এমডি পরীক্ষা ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়ার কথা। এই প্রেক্ষিতে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত বুধবার ওই মামলার শুনানিতে প্রশ্ন তোলেন, বাংলার বাসিন্দা হয়েও কোনও চিকিৎসক যে ভিন্ রাজ্যে বা বিদেশে চলে যাবেন না, তার কী নিশ্চয়তা আছে? সরকার কি সেটা নিশ্চিত করে বলতে পারবে? সে-দিন প্রশ্নটি অমীমাংসিত থেকে গিয়েছিল।

বৃহস্পতিবার ফের ওই মামলার শুনানি হয়। আবেদনকারীদের আইনজীবী কৌশিক চন্দ ও লোকনাথ চট্টোপাধ্যায় আদালতে জানান, রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের ওই বিজ্ঞপ্তি অসাংবিধানিক। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রয়েছে, এমডি পরীক্ষার ক্ষেত্রে মেধাকে প্রাধান্য দিতে হবে। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর অমান্য করতে পারে না।

মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এমসিআই)-র আইনজীবী সৌগত ভট্টাচার্যও এ দিন আদালতে জানান, রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর কেন্দ্রীয় আইনকে পাশ কাটিয়ে এই ধরনের বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারে না। এমডি পরীক্ষায় কী ভাবে বসতে হবে এবং কারা ওই পরীক্ষা দিতে পারবেন, সেই ব্যাপারে এমসিআইয়ের নিজস্ব আইন রয়েছে। আর সেটাই কেন্দ্রীয় আইন।

সরকারি আইনজীবী প্রদীপ দত্ত অবশ্য আদালতে জানান, স্বাস্থ্য দফতরের বিজ্ঞপ্তির কোথাও বলা নেই যে, ভিন্ রাজ্যের পড়ুয়ারা এমডি পরীক্ষায় বসতে পারবেন না। তাঁরা অবশ্যই এমডি করতে পারেন। সর্বভারতীয় কোটা (মোট আসনের ৫০ শতাংশ)-য় তাঁরা তো ওই পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেনই।

সব পক্ষের সওয়াল শুনে বিচারপতি দত্ত রায় দেন, ভিন্ রাজ্যের পড়ুয়ারাও পশ্চিমবঙ্গের কোটায় এমডি পরীক্ষায় বসতে পারবেন। বিচারপতির নির্দেশ, অনলাইনে এমডি পরীক্ষার ফর্ম পূরণের মেয়াদ আগামী সোমবার পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে হবে। এবং যে-সব পরীক্ষার্থী হাতে হাতে ওই ফর্ম পূরণ করতে চান, তাঁদের সময় দিতে হবে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement