দক্ষিণের কড়চা

তাঁকে সৈয়দ মুজতবা আলি বলেছিলেন ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য লস্ট কজেস’। কেন? আলিসাহেব লিখছেন, ‘তার বাংলাদেশে দু’জন কিংবা তিন জন হয়তো লেখাটি পড়বে, তিনি দিতেন ছাপিয়ে, কারণ দার্শনিক রামানন্দ জানতেন ‘কান্টিয় দর্শন ও পতঞ্জলির পথমধ্যে কোলাকুলি’ জাতীয় প্রবন্ধ লিখতে পারে এমন লোক দ্বিজেন্দ্রনাথের মতো আর নেই’।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:০৪
Share:

দেড়শোয় রামানন্দ

Advertisement

তাঁকে সৈয়দ মুজতবা আলি বলেছিলেন ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য লস্ট কজেস’। কেন? আলিসাহেব লিখছেন, ‘তার বাংলাদেশে দু’জন কিংবা তিন জন হয়তো লেখাটি পড়বে, তিনি দিতেন ছাপিয়ে, কারণ দার্শনিক রামানন্দ জানতেন ‘কান্টিয় দর্শন ও পতঞ্জলির পথমধ্যে কোলাকুলি’ জাতীয় প্রবন্ধ লিখতে পারে এমন লোক দ্বিজেন্দ্রনাথের মতো আর নেই’।

হয়তো সে কারণেই জন্মের সার্ধশতবর্ষেও রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় প্রায় বিস্মৃত। অতি সম্প্রতি ‘কোরক’ পত্রিকার বিশেষ রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে, দু’একটি রচনাসংকলন জাতীয় বইও প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু সম্পাদক হিসেবে রামানন্দের পূর্ণ মূল্যায়ন আজও হয়নি। তাঁর জন্মশহর বাঁকুড়ায় একটি স্মরণসভা হয়েছে সম্প্রতি ‘বাঁকুড়ার খেয়ালী’ পত্রিকার উদ্যোগে। কিন্তু এ নেহাতই অকিঞ্চিকর। সম্পাদক, প্রবাসী ও দ্য মডার্ন রিভিউ পত্রিকার মাধ্যমে এ দেশের নবচেতনার অন্যতম প্রচারক রামানন্দ আজও যথার্থ সমগ্রতায় অধরা। বাংলা সাময়িক পত্রিকার ইতিহাসে রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় (১৮৬৫-১৯৪৩) এক কিংবদন্তি হয়ে আছেন। সম্পাদক হিসেবে তাঁর সম্পাদিত ‘প্রবাসী’ (১৯০১-১৯৬৪) বিশ শতকের প্রথম পাদে ছিল বাংলার সাহিত্য, সংস্কৃতি ও চিন্তাধারার সবচেয়ে প্রভাবশালী মত ও পথ নির্দেশক। জাতীয়তাবাদী চিন্তাচেতনা ও মননশীলতায় ওই সময়ে একই রকম প্রভাবশালী ছিল তাঁর সম্পাদিত ইংরেজি পত্রিকা ‘দ্য মডার্ন রিভিউ’। প্রবাসীর সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক ছিল রবীন্দ্রনাথের। ৩০ বছরেরও বেশি কাল ধরে তাঁর নানা ধরনের লেখা ছাপা হয়েছে এই পত্রিকায়।

Advertisement

রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় বিশ্বভারতীর অবৈতনিক অধ্যাপক ও অধ্যক্ষ ছিলেন ১৯২৪-২৫ সালে। পাশাপাশি তাঁর নিজের লেখা বইগুলিও আজ নতুন করে প্রকাশিত হওয়া দরকার। রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের সম্পাদক পরিচয়ের আড়ালে ঢাকা পড়েছে তাঁর সাহিত্য-গবেষণা কীর্তি। তাঁর রচিত-অনূদিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে আরব্যোপন্যাস, রাজা রবি বর্মার জীবনী, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। সম্পাদিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে কৃত্তিবাসী রামায়ণ; সচিত্র অষ্টাদশ পর্ব মহাভারত; টুওয়ার্ডস হোম রুল; রামমোহন রায় অ্যান্ড মডার্ন ইন্ডিয়া; চ্যাটার্জি’স্ পিকচার অ্যালবাম, দ্য গোল্ডেন বুক অভ টেগোর।

রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে রামানন্দের সম্পর্ক সত্যই ‘গোল্ডেন’। রবীন্দ্রনাথ লিখছেন, ‘আপনি যদি আমাকে সময়মতো ঘুষ না দিতেন তা হলে কোন মতেই ‘গোরা’ লেখা হতো না। নিতান্ত অতিষ্ঠ না হলে আমি অধিকাংশ বড় বা ছোট গল্প লিখতুম না।’ সঙ্গের ছবিতে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ ও রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় (বাঁ পাশে)।

সোপানের স্বপন

সত্তরের দশকে, ‘শোকস্তব্ধ বিহ্বলতার’ দিনে শুরু করেছিলেন তিনি। রাঢ়বঙ্গের এক প্রান্তিক জনপদ থেকে প্রকাশ কর্মকার না হয় পূর্ণেন্দু পত্রীর প্রচ্ছদে ছিমছাম ‘সোপান’ পত্রিকা। সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তখনও ‘গুম গুম শব্দ করে ছুটে যাচ্ছে পাঁচটার লোকাল।’ শাল জঙ্গলের সরু পথটুকু পেরোলেই আরও তীব্র গলি। কুয়োতলা ঘিরে পড়ে রয়েছে তাঁর বাড়ি—‘জন্মভূমি একমাত্র জননী আমার’। শব্দময় শহরে পেশার তাগিদে পৌঁছেও তাই বার বারই ফিরে যেতে চেয়েছেন সেই একান্ত লালমাটির ঢিপির সন্নিকটে, ‘আদিবাসী গ্রামের মাদল’, তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থের কাছে। অতঃপর একের পর এক তিনি লিখছেন, ‘আঁকাবাঁকা’, ‘সাপলুডো’, ‘অন্ধ সময়ের খেলা’। তবু মন তাঁর পড়ে থাকে সেই ‘খঞ্জ গ্রামে’ যেখানে ‘বৃক্ষ শীর্ষে হাসে পেঁচা’। একের পর এক চাকুরিক্ষেত্র বদলে সেই তো তাঁকে ফিরে আসতে হয় তাঁর প্রিয় বিষ্ণুপুরের মেঠো জনপদে। আর তিনি সোচ্চারে বলেন এত দিন--‘আমাকে তুমি ডুবিয়ে ছিলে, ভাসিয়ে ছিলে জলে/ আমাকে তুমি হাসিয়ে ছিলে, তুমুল কোলাহলে।’ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে, কখনও নিবিড় মফস্সলে কখনও বা ঘোর কল্লোলিনীর উঠোনে স্বপনের সেই কবিতা চর্চায় ক্লান্তি আসেনি। একের পর এক লিখেছেন এগারোটি বই। সেই সব কাব্যগ্রন্থ নিয়ে ‘সোপান’ বইমেলায় প্রকাশ করেছে স্বপনের কবিতা সংগ্রহ।

পঁচিশে প্রাসাদ

সম্প্রতি দেশের পঁচিশটি স্মারককে আদর্শ সৌধ (মনুমেন্ট) হিসেবে ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক, এ রাজ্যে সেই তালিকায় এক মাত্র ঠাঁই হয়েছে হাজারদুয়ারির। বাংলা, বিহার ও ওড়িশার নবাব নাজিম হুমায়ুন জাঁ-র (১৮২৪-১৮৩৮) আমলে গড়া হয়েছিল প্রাসাদটি। ব্রিটিশ স্থপতি ডানকান ম্যাকলিয়ডের পরিকল্পনায় ১৮২৯ সালের ৯ অগস্ট মুর্শিদাবাদের লালবাগে নির্মাণকাজ শুরু হয়, শেষ ১৮৩৭ সালে। প্রথমে ছিল বিচারবিভাগে হাতে, ১৯৮৫ সালে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ সেটি অধিগ্রহণ করে। তাদের অধীনে থাকা প্রায় ৩৬৮০টি স্মারকের মধ্যে থেকে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে আর্কষণীয় পঁচিশটিকে আদর্শ সৌধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সর্বেক্ষণের অধিকর্তা (পূর্ব মণ্ডল) পিকে মিশ্র জানাচ্ছেন, আদর্শ স্মারক যোজনার অধীনে প্রাসাদটিকে আন্তর্জাতিক মানের সৌধ করে তোলা হবে।

তাম্রলিপ্ত

শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলা দেখে প্রভাতের সূর্য লজ্জায় তাম্রবর্ণ ধারণ করে সমুদ্র উপকূলের যে স্থানে মুখ লুকিয়ে ছিলেন, তারই নাম ‘তাম্রলিপ্ত’— বৈষ্ণব সাহিত্যে এমনটাই কথিত। সম্রাট অশোক তাঁর কয়েক জন অতিথিকে জাহাজে তুলে দিতে এখানে এসেছিলেন বলেও জনশ্রুতি। মহাভারতে এই অঞ্চলের উল্লেখ রয়েছে। ফা-হিয়েন এবং হিউয়েন সাংয়ের সঙ্গেও যোগ ছিল তাম্রলিপ্তের। আর এই জনপদের ইতিহাস, ভুগোল, ভাষা, সংস্কৃতি, বনেদি বাড়ি, গুণিজনদের বৃত্তান্ত নিয়েই সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে তাম্রলিপ্তের কথা। আঞ্চলিক ইতিহাস নিয়ে এর আগেও নানা গবেষণাধর্মী বই করেছেন মেদিনীপুরের এক দৈনিকের সম্পাদক তাপস মাইতি। তবে তিনি একা নন, আঞ্চলিক ইতিহাসে আগ্রহী এক দল গবেষক-লেখকও রয়েছেন তাঁর সঙ্গে। সকলের মিলিত চেষ্টাতেই তমলুকের ইতিহাস-ভূগোল-সংস্কৃতি ফের উঠে এল দুই মলাটের ভিতরে।

খেলার বর্ধমান

বহুচর্চিত বিষয়ে কথা বলতে কে না পারে? যেমন উপমহাদেশে ক্রিকেট বা আটলেটিকো ডি কলকাতা। কিন্তু কোথায় গাঁ-গঞ্জের আনাচে-কানাচে কত ছোট চারাগাছ নিরলস সাধনায় লালন করা হচ্ছে, তার খবর কে রাখে? বিশেষ করে যখন তার কোনও লিখিত ইতিহাস নেই? সূত্র বলতে এক মাত্র স্মৃতিকথন? ঠিক সেই পথেই হেঁটেছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন স্পোর্টস অফিসার রথীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। বর্ধমান রাজপরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায় ক্রীড়াচর্চা থেকে শুরু করে রয়েছে কৃতী খেলোয়াড়দের পরিচিতিও। লেখক নিজে স্কুল-কলেজ জীবনে ক্রিকেট, ফুটবল, বাস্কেটবল, হকি খেলেছেন চুটিয়ে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল ও বাস্কেটবল কোচ এবং স্পোর্টস অফিসার হন। বর্ধমানের খেলাধুলো প্রসঙ্গে বইয়ে কোনও বিশেষ খেলা নিয়ে বাছবিচার করেননি তিনি। যা দেখেছেন, শুনেছেন, পড়েছেন, লিপিবদ্ধ করে গিয়েছেন। কারও কাছে জরুরি তথ্য থাকলে তা-ও জানানোর আবেদন জানিয়ে রেখেছেন।

বনগাঁর কাঁচাগোল্লা

‘মামাবাড়ির ভূতগুলো আগে খুব সাহসী ছিল’, কিন্তু এখন তারা লঝঝরে বুড়ো ভূত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পঁচিশে কি কেউ বুড়োয়? যদিও কার পঁচিশ তা দেখা দরকার। তিনশো বছর বাঁচবে যে কাছিম তার পঁচিশ, না কি বসন্তদিন ফুরোলেই ঝরে যাবে যে প্রজাপতি তার পঁচিশতম রজনী? তোমার-আমার পঁচিশ মানে ফুরফুরে যৌবন, সন্দ নেই। কিন্তু ধার-দেনা করে, গ্যাঁটের কড়ি গচ্চা দিয়ে বের করা ছোট পত্রিকার পঁচিশ? সে কি মুখের কথা? ‘পঁচিশ বছর ধরে ছোট ছোট আলো আর জল’ নিয়ে সেই জাফরি বুনে চলেছে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ থেকে প্রকাশিত সুচেতনা। সম্পাদক অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য গল্পচ্ছলে বলেছেন, কী ভাবে শুরুর দিনগুলোয় আনন্দবাজার পত্রিকার অফিসে ঢুকে গৌরকিশোর ঘোষের কাছ থেকে কবিতা আদায় করতে হয়েছিল। কী ভাবে কিশোর সম্পাদকের অত্যাচার থেকে সাগরময় ঘোষকে বাঁচাতে এক কথায় লেখা দিয়েছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, জয় গোস্বামী, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়েরা। সকলের দক্ষিণা বাঁধাধরা— এক প্যাকেট বনগাঁর বিখ্যাত কাঁচাগোল্লা। স্রেফ ছাপাই-বাঁধাই যে কলমের জোরকে ছাপিয়ে যেতে পারে না, পঁচিশেও তার স্বাক্ষর রয়েছে।

অনিল স্মরণে

‘হেমন্তের দিনগুলি ফুরিয়ে আসার আগেই আমাদের কাছের মানুষ অনিল ঘড়াই হঠাৎ ব্রহ্মাণ্ড ভ্রমণে বেরিয়ে পড়লেন’— এই ভাবেই ধরতাইটা ধরেছেন সম্পাদক রণজিৎ অধিকারী। ফিনফিনে হলুদ মলাটে যেন কালো স্লেটে লেখা পত্রিকার নাম— পূর্ব। গল্পকার অনিল ঘড়াই স্মরণ দিয়ে যার সূচনা। তার পর অক্টাভিও পাজ হয়ে প্রসঙ্গ এগিয়ে গিয়েছে আবুল বাশারের ‘ফুলবউ’ কেন শুধু উপন্যাস নয়, বরং এক আন্দোলন, সে নিয়ে তন্নিষ্ঠ আলোচনার দিকে। কিন্তু সম্পাদকের সম্ভবত মনে হয়েছে, এ-ও যথেষ্ট নয়। বরং ‘আমরা কাঙালের মতো হাঁ করে আছি কবে সৃষ্টিশীলতার সঙ্গে একটু বিচারবুদ্ধি (বিবেক?) এসে মিশবে’— বলছেন তিনি। দুই মেদিনীপুর ছুঁয়ে প্রকাশ হয়ে চলা পত্রিকাটির এই সংখ্যার প্রচ্ছদ করেছেন বিশ্বজিৎ অধিকারী।

লাকি টেগোর

আর কিছু না, তিনি টেগোর হতে চান। এই টেগোর বা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঠিক রবি ঠাকুর নন। তাঁর কাছে আসলে রবি ঠাকুর মানে ভালবাসা। যে কোনও কাজের প্রতি ভালবাসাই মানুষকে পৌঁছে দিতে পারে সাফল্যের কাছাকাছি।

এমনটাই বলে বেড়ান তিনি, বছর চৌত্রিশের কাশ্মীরী যুবক লাকিজি গুপ্ত। একক নাটক করে বেড়ান দেশ জুড়ে— ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের ‘মা মুঝে টেগোর বনা দে’। নান্দীকার নাট্যোৎসবেও ছিলেন তিনি। পরনে কালো জিনস আর তাপ্পি মারা খাকি শার্ট। নাটকে নেই কৃত্রিম আলো, মেকআপ, মঞ্চসজ্জা। বরং বাঁধা মঞ্চের বদলে খোলা জায়গায় অভিনয় করতেই ভালবাসেন লাকি। নাটকের একমাত্র চরিত্র বুদ্ধুরাম যেমন কোনও প্রথাগত শিক্ষার মধ্যে দিয়ে যায়নি, লাকিরও নেই অভিনয়ের প্রথাগত শিক্ষা।

নিতান্ত সাদামাঠা কাহিনী। বুদ্ধুরামের বাবা ইটভাটায় কাজ করেন। বহু কষ্টে স্কুলের পড়া শেষ করলেও তার পরে ছেলেকে পড়ানোর সামর্থ তাঁর আর নেই। তাই হোটেলে থালা ধোওয়ার পার্টটাইম কাজ নেয় বুদ্ধু। সেই রোজগারের জোরেই ভর্তি হয় কলেজে। কিন্তু প্রথম দিন পরীক্ষা দিয়ে ফিরে সে দেখে, বাবা মারা গিয়েছেন। পড়ার স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। কিন্তু শেষ হয়ও না। বরং প্রথাগত শিক্ষার বাইরেই চলে তার পাঠ।

গোটা নাটকে একমাত্র অভিনেতা লাকি। বুদ্ধু, তার বাবা, মা, শিক্ষক, হোটেলকর্মী— সব চরিত্রের অভিনেতা হিসাবে তিনি বলে চলেন সংলাপ। বাকিটা দর্শকের প্রতিক্রিয়া। নাটক করার জন্য কোনও নির্ধারিত টাকা নেন না। অভিনয়ের পরে যে যেমন পারে তুলে দেয় হাতে, সেটুকুই সম্বল। মাঝ-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই ভাবেই গোটা দেশে ৬৫২ বার নাটক করে ফেলেছেন, জানালেন লাকি।

সম্প্রতি নবদ্বীপের একটি স্কুলেও ছেলেমেয়েদের মাঝখানে অভিনীত হল ‘টেগোর বনা দে’। নাটকের শেষে ছাত্রদের বুদ্ধুরাম বলল, আমার মতো অবস্থা তো তোমাদের নয়। পড়াশোনা প্রথার বাইরে গিয়েও করা যায়, যেমনটা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু তোমাদের বাবা মা এখনও তোমাদের পড়াতে পাঠাচ্ছেন। সুযোগটা কাজে লাগাও।

পূর্ণিমা

ইলামবাজার হাইস্কুলের বাংলা বিভাগের দুই শিক্ষক-শিক্ষিকার বিয়ে নিয়ে ২০০৩ সালে তুমুল হইচই হয়েছিল রাজ্য জুড়ে। শিক্ষকের নাম জুলফিকার আলি জিন্না, শিক্ষিকা পূর্ণিমা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে অবশ্য ধীরে-ধীরে সব থিতিয়ে যায়। শিক্ষক দম্পতি বীরভূমেরই বোলপুরে বাড়ি করে বসবাস শুরু করেন। ‘আমরা সবুজ’ নামে একটি নাট্যদলও চালাতেন তাঁরা। জেলা ও রাজ্যস্তরে দলটি যথেষ্ট সমাদর পেয়েছিল। মূলত শিশু-কিশোরদের নাটকই বেশি মঞ্চস্থ করেছেন তাঁরা। তবে বেশ কিছু ধ্রুপদী নাটকও মঞ্চস্থ করা হয়েছে, যেখানে প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করেছেন পূর্ণিমা। বিশ্বভারতী থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখেছিলেন তিনি। মাত্র ৩৯ বছর বয়সে ক্যানসার কেড়ে নিল তাঁকে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় আর জি কর হাসপাতালে মারা গিয়েছেন পূর্ণিমা। তাঁর ইচ্ছাপত্র অনুসারে মৃতদেহ দান করা হয়েছে। জিন্না এবং তিন বছরের একটি শিশুসন্তান পিছে রয়ে গেল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement