সারদা-সহ বিভিন্ন লগ্নি সংস্থার দশ হাজার কোটি টাকা নয়ছয়ের ঘটনার শিকড়সন্ধানের দায়িত্ব বর্তেছে সিবিআইয়ের উপরে। আর সেই কাজে নামার আগে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি চাইছে যাবতীয় আটঘাঁট বেঁধে নিতে।
তাই প্রস্তুতিপর্বে প্রয়োজনীয় নথি ও তথ্য সংগ্রহে সর্বাধিক জোর দেওয়া হচ্ছে। জানা গিয়েছে, সারদা তদন্তের জন্য গঠিত সিবিআইয়ের বিশেষ দল (সিট) আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে তথ্য সংগ্রহ সেরে ফেলে চলতি মাসের শেষাশেষি এফআইআর দায়ের করবে। সিবিআই-সূত্রের বক্তব্য: কোথায় এফআইআর দায়ের করা হবে, তা স্থির হবে মামলার নথিপত্র হাতে পেলে।
সারদা কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা পশ্চিমবঙ্গে পাঁচশোর বেশি। সেগুলোর তদন্ত করছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার গঠিত সিট। সারদা কাণ্ডকে ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ’ হিসেবে অভিহিত করে সুপ্রিম কোর্ট গত শুক্রবার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয়। কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো সূত্রে বলা হয়েছে, বৃহত্তর ষড়যন্ত্রটি আসলে কী, এবং তাতে কারা জড়িত, সেটা খুঁজে বার করাই তাদের মূল কাজ। এ জন্য সোমবার ৩০ সদস্যের সিট গড়েছে সিবিআই। তারা পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের কাছ থেকে তো বটেই, কেন্দ্রীয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এবং সিরিয়াস ফ্রড ইনভেস্টিগেশন অফিস (এসএফআইও)-এর কাছ থেকেও সারদা তদন্ত সংক্রান্ত নথিপত্র জোগাড় করবে। সারদা কাণ্ড নিয়ে গত ক’মাস ধরে রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি ইডি এবং এসএফআইও তদন্ত করছে। ইডি এ-ও জানিয়েছে, আগামী জুলাইয়ে তারা চার্জশিট জমা দেবে।
এমতাবস্থায় মঙ্গলবার সারদা-তদন্তের গতি-প্রকৃতি নির্ধারণে দিল্লির ব্যুরো সদরে বৈঠকে বসেছিলেন সিবিআই কর্তারা। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সিটে সিবিআইয়ের তরফে থাকবেন ন’জন অফিসার। বিশেষ তদন্ত দলের মাথায় রয়েছেন সিবিআইয়ের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় যুগ্ম অধিকর্তা রাজীব সিংহ। বাকি আট জনের মধ্যে আছেন সিবিআইয়ের কলকাতার বিশেষ অপরাধদমন শাখার (এসসিবি) ডিআইজি শঙ্খব্রত বাগচী, কলকাতার এসপি (এসসিবি) উপেন্দ্রকুমার অগ্রবাল, গুয়াহাটির এসপি (এসসিবি) নবজ্যোতি গগৈ, পটনার আর্থিক দুর্নীতিদমন শাখার অতিরিক্ত এসপি পিবি কর্ণ। এ ছাড়া থাকছেন ব্যুরোর দুই ডিএসপি ও দুই ইন্সপেক্টর। আর তদন্ত প্রক্রিয়ায় তাঁদের সাহায্য করবেন দিল্লি ও পটনার দুর্নীতিদমন শাখার দুই অফিসার। এ দিন এক সিবিআই কর্তা জানান, তাঁদের সারদা সিটের অগ্রগতি নিয়মিত খতিয়ে দেখবেন ব্যুরোর বিশেষ অধিকর্তা অনিলকুমার সিংহ।
সিবিআই জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে তাদের তরফে সারদা মামলার তদন্ত করবেন উপেন্দ্র অগ্রবাল। তিনি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। সারদা তদন্তের স্বার্থে এ দিনই তাঁকে দুর্নীতিদমন শাখা থেকে বদলি করে বিশেষ অপরাধদমনে আনা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ওড়িশা-ঝাড়খণ্ড-ত্রিপুরা-অসমেও সারদা সংক্রান্ত বিবিধ মামলা রয়েছে। এমনকী সারদা-কেলেঙ্কারির আন্তর্জাতিক ব্যাপ্তিও রয়েছে বলে সর্বোচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ। ওড়িশায় সারদা মামলার দেখভালের দায়িত্ব পেয়েছেন কলকাতার ডিআইজি (এসসিবি) শঙ্খব্রত বাগচী।
এ দিকে সারদা কাণ্ডে কলকাতা পুরসভা ও মেয়রের ভূমিকা খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়ে মঙ্গলবার সিবিআইয়ের আর্থিক দুর্নীতিদমন শাখার এসপি রঞ্জন বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা করেন পুর-কাউন্সিলর প্রকাশ উপাধ্যায়। অভিযোগ, ডায়মন্ড হারবার রোডের এক ঠিকানায় সারদার ৪৩টি অফিসের লাইসেন্স দিয়েছে পুরসভা। সে সংক্রান্ত বিভিন্ন নথির প্রতিলিপিও তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন। ‘‘আমাকে সিবিআইয়ের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যুগ্ম অধিকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে”, বললেন প্রকাশবাবু।