ভোটের প্রচার চলাকালীন রটে গিয়েছিল, তিনি মারা গিয়েছেন! গুজব ওড়াতে রীতিমতো সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে তাঁকে জানান দিতে হয়েছিল, তিনি আছেন! তার দিন পনেরোর মধ্যে, সোমবার সন্ধ্যায় সেই তপন শিকদার দিল্লি থেকে ফিরলেন কফিনবন্দি হয়ে। কিডনির অসুখের সঙ্গে কঠিন লড়াই শেষ হয়ে গেল এ দিনই ভোর রাতে, এইম্সের শয্যায়।
অসুস্থ শরীরেই এ বার দমদম কেন্দ্র থেকে ভোটে লড়েছিলেন তপনবাবু। ফলাফল প্রকাশের পরেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে এইম্সে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সেখানেই জীবনাবসানের পরে সন্ধ্যায় প্রাক্তন এই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মরদেহ কলকাতায় নিয়ে এসে রাখা হয়েছে ‘পিস হাভেন’-এ। তার আগে দিল্লিতে বিজেপি-র সদর দফতরে তপনবাবুকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে গিয়েছেন দলের প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী, সর্বভারতীয় সভাপতি রাজনাথ সিংহ, সিদ্ধার্থনাথ সিংহ থেকে প্রদেশ কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্যও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সশরীরে শ্রদ্ধা জানাতে যেতে না-পারলেও টুইট করেছেন, “বিজেপি-কে তৈরি করতে তপন শিকদারের অবদান ও তাঁর এত বছরের জনসেবার জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।”
আজ, মঙ্গলবার তপনবাবুর দেহ প্রথমে নিয়ে যাওয়া হবে তাঁর প্রতিষ্ঠিত মালদা সম্মিলনীতে। তার পরে শ্যামবাজারে তাঁর বাড়ি ঘুরে বিজেপি-র রাজ্য দফতর হয়ে শেষকৃত্যের জন্য নিয়ে যাওয়া হবে নিমতলা শ্মশানে। এ রাজ্যে দীর্ঘ সময় তপনবাবুই ছিলেন বিজেপি-র অন্যতম মুখ। এখন বিজেপি-র উত্থানের সময়ে তাঁর প্রয়াণ দলের ক্ষতি করল বলে মন্তব্য করেছেন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। তাঁর কথায়, “তবে কর্ম করতে করতেই তাঁর এই চলে যাওয়া গৌরবেরও বটে।” তৃণমূলের সঙ্গে জোট থাকাকালীন দমদম থেকে ১৯৯৮ ও ’৯৯ সালে পরপর দু’বার লোকসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন তপনবাবু। তাঁর ওই জয়ই তৎকালীন সিপিএমের মধ্যে অন্তর্ঘাত প্রকাশ্যে আনে। অধুনা প্রয়াত জ্যোতি বসুকে যার জেরে বলতে হয়েছিল, “জীবদ্দশায় দেখে যেতে চাই, দমদম পুনরুদ্ধার হয়েছে।” পুনরুদ্ধারের যুদ্ধে সিপিএমের হয়ে যিনি জিতেছিলেন, সেই অমিতাভ নন্দীর প্রতিক্রিয়া, “রাজনৈতিক পরিচয় মানুষের জন্য কাজে কখনও ওঁর কাছে বাধা হয়নি।” গত দু’বার দমদম থেকে জয়ী তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ও তপনবাবুর ব্যবহারের মাধুর্যের কথা বলেছেন।