আপদে-বিপদে তারকা-প্রার্থীরা সহজলভ্য হবেন না, লোকসভা ভোটের প্রচারে এই কথাকেই হাতিয়ার করতে চাইছে কংগ্রেস। তারকা-প্রার্থীদের তুলনায় রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত কর্মীদের প্রাধান্য দেওয়ার অনুরোধ নিয়েই মানুষের দরবারে হাজির হবেন কংগ্রেস প্রার্থীরা।
দলের প্রচার কৌশল কেমন হবে, তা নিয়ে রবিবার আলোচনায় বসেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। সেখানে ঠিক হয়েছে, তৃণমূল বা বিজেপি’র তারকা প্রার্থীরা যে আদতে ভোটদাতাদের ‘কাছের মানুষ’ নন, তা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বুঝিয়ে দিতে হবে মানুষকে। তৃণমূল, বামফ্রন্ট এবং বিজেপি-র বিরুদ্ধে রাজ্যের ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রেই অস্তিত্ব প্রমাণ করে নিজেদের ‘বিকল্প শক্তি’ হিসেবে গ্রহণ করার আবেদনও করতে হবে। তৃণমূলের রাজনৈতিক কর্মীদের বঞ্চিত করে যে তারকাদের প্রার্থী করা হয়েছে এবং তাতে ওই দলের অন্দরেই যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে, তা মানুষের কাছে এই প্রচারকেও তুলে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। দলের দীর্ঘদিনের কর্মীদের বঞ্চিত করাকে ‘রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা’ বলে বৈঠকের পরে মন্তব্য করেছেন অধীর।
দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ দিন বেশ কয়েক জন প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের অধীর বুঝিয়ে বলেন যে, তৃণমূলের প্রতিশ্রুতিভঙ্গের উদাহরণ তুলেই প্রার্থীদের প্রচার চালাতে হবে। প্রচারে গুরুত্ব দিয়ে তাঁদের বোঝাতে হবে যে, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি যদি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসে, তা হল দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। শুধু দলের শক্ত ঘাঁটিতে থমকে থাকলেই হবে না, রাজ্যের দুর্বলতম কেন্দ্রগুলির বুথ স্তর পর্যন্ত কংগ্রেসের উপস্থিতি প্রমাণে আজ, সোমবার থেকেই কার্যালয় তৈরি করে কর্মীদের সেখানে বসার নির্দেশও দিয়েছেন প্রদেশ সভাপতি। এত দিন সাধারণত ব্লক স্তর পর্যন্ত কার্যালয় ছিল কংগ্রেসের। কিন্তু কংগ্রেস সূত্রের খবর, এ বার বুথ স্তরে পৌঁছতে যে কোনও ভাবে ছাউনি দিয়ে অস্থায়ী কার্যালয় তৈরি করেও সেখানে দলীয় পতাকা নিয়ে মানুষের পাশে থাকতে বলেছেন অধীর।
জোট ছাড়ার পর থেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি বঞ্চনার যে অভিযোগ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করে আসছেন, তার মোকাবিলায় রাজ্যে কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির বরাদ্দ সম্পর্কিত তথ্য হাতিয়ার করতে বলেছেন অধীর। গত আড়াই বছরে কেন্দ্র বিভিন্ন প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গকে কত আর্থিক সাহায্য দিয়েছে এবং সেই সব প্রকল্পের কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে, তা নিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে শ্বেতপত্র প্রকাশেরও দাবি জানিয়েছেন প্রদেশ সভাপতি। একক শক্তিতে লোকসভায় এ রাজ্য থেকে নিজেদের আসন ৬ থেকে বাড়াতে হবে, তেমন লক্ষ্য নিয়েই এগোতে চাইছে প্রদেশ কংগ্রেস।
পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্য নির্বাচন কমিশনে একাধিক বার অভিযোগ জানিয়েও সুরাহা হয়নি বলে এ দিন বৈঠকে অনেকেই অভিযোগ তোলেন। এ বার যাতে তার পুনরাবৃত্তি না হয়, তার জন্য আগেভাগেই কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে কংগ্রেস। একই সঙ্গে প্রার্থী এবং দলের সঙ্গেও প্রতি মুহূর্তে যোগাযোগ রেখে কাজ করার জন্য বিধায়ক মানস ভুঁইয়া, দলের নেতা নির্বেদ রায় এবং দেবব্রত বসুকে নিয়ে একটি কমিটি গড়া হচ্ছে বলে অধীর জানান।