রাজ্যে সারদা-কাণ্ড নিয়ে রাজনীতি যখন সরগরম, সেই সময় রাজ্যে বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার রমরমার জন্য একযোগে একমঞ্চ থেকে তৃণমূলকে নিশানা করল সিপিএম এবং বিজেপি।
সরকারি আধিকারিকদের সংগঠন ‘স্মল সেভিংস অফিসার্স অরগানাইজেশন’-এর ‘অরাজনৈতিক’ মঞ্চ থেকে শনিবার তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারের কাজকর্মকে দুষলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এবং বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য। এই ঘটনায় স্বভাবতই সিপিএম-বিজেপির ‘অশুভ আঁতাঁত’-এর গন্ধ পাচ্ছে শাসক তৃণমূল। তবে বিষয়টি স্বল্প সঞ্চয় এবং মঞ্চ ‘অরাজনৈতিক’ বলেই এ বিষয়ে বিশেষ সরব হতে চায়নি তারা।
মৌলালি যুবকেন্দ্রে এ দিন ওই সংগঠনের আলোচনাসভায় আমন্ত্রিত ছিলেন বাম, বিজেপি এবং কংগ্রেস নেতারা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তৃণমূলের কেউ সেখানে ছিলেন না। প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য আমন্ত্রিত হলেও আসতে পারেননি। বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবু সেখানে বলেছেন, ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্প বিশেষ জনপ্রিয় না হওয়ার জন্য আকর্ষণীয় সুদের অভাব-সহ কিছু কারণ রয়েছে। তা সত্ত্বেও বাম জমানায় ক্ষুদ্র সঞ্চয়ে পশ্চিমবঙ্গ দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য জায়গায় ছিল। তৃণমূলের জমানায় এ রাজ্যে ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের হাল শোচনীয় হয়েছে। তার কারণ বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির রমরমাই।
ক’দিন আগেই সারদা-কাণ্ড নিয়ে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে গিয়েছিলেন সূর্যবাবুরা। তাঁদের দাবি ছিল, সব কেন্দ্রীয় সংস্থা নিজেদের মধ্যে সমন্বয় রেখে তদন্তে গতি আনুক। বাম নেতারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ ভাবে দরবার করায় ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূর্যবাবু এ দিন বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশ জানাতে যাইনি। গিয়েছিলাম আমানতকারীদের স্বার্থে কেন্দ্রীয় সরকারকে সতর্ক করতে।” তাঁর দাবি, সারদা-সহ দুর্নীতির ঘটনায় অভিযুক্তদের শুধু গ্রেফতার করলেই হবে না। আমানতকারীদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে তিনি সভায় বলেছেন, “এখানে রাজনীতির কথা কিছু বলতে চাই না।”
তৃণমূল নেত্রী হামেশাই বলে থাকেন যে রাজ্যে বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার দৌরাত্ম্য বাম জমানাতেই শুরু। বিজেপির বিধায়ক শমীক এ দিন ওই প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “সিপিএম নেতাদের সঙ্গে চিটফান্ডের লোকের ছবি দেখানো হত। আর চিটফান্ডের হয়ে গুণগান করতে দেখা গিয়েছিল তৃণমূল নেতাদের!” শুধু সারদা নয়, অন্যান্য অর্থলগ্নি সংস্থাগুলোর দিকেও আঙুল তুলেছেন শমীক। তাঁর বক্তব্য, “অন্যগুলোয় যখন লালবাতি জ্বলবে, তখন তো রাজ্যে মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়ে যাবে।”
মঞ্চ ‘অরাজনৈতিক’ বলেই পাল্টা বিশেষ রাজনৈতিক আক্রমণে যেতে চাননি তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তবে তাঁর বক্তব্য, “যাঁরা এ সব বলছেন, তাঁদের মধ্যে এক জনের দল ৩৪ বছর সরকারে ছিল। তাঁরা স্বল্প সঞ্চয়ের টাকা ঋণ হিসেবে কাজে লাগিয়েছেন। অন্য দল বিজেপি কেন্দ্রে সরকারে এসে স্বল্প সঞ্চয়ের জন্য কিছুই করেনি।” পার্থবাবুর মতে, “বারেবারেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোাধ্যায় আবেদন করেছেন স্বল্প সঞ্চয়ে টাকা রাখার জন্য।” রাজনৈতিক প্রচারে কান না দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সেই আবেদনে সাড়া দিতে রাজ্যবাসীর কাছে আর্জি জানিয়েছেন পার্থবাবু।