গাড়িতে ওঠার আগে সোনালি। ছবি: অনির্বাণ সেন।
টিভি পর্দায় তাঁর ‘আই অ্যাম গভর্নমেন্ট’-হুঙ্কার তত ক্ষণে শুনে ফেলেছে জনতা। হাওড়ার হোমিওপ্যাথের উদ্দেশে তাঁর হুমকি-শাসানিও সিসিটিভি ফুটেজের দৌলতে ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। বুধবার গভীর রাতের তাঁর ওই কর্মকাণ্ডের খবর প্রকাশ্যে আসতেই নানা মহলে সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছে।
আর বৃহস্পতিবার মাঝরাতে বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার সেই সোনালি গুহ হঠাৎ-ই সপার্ষদ হাজির হলেন বীরভূমে। সরকারি কাজে নয়। আগমনের উপলক্ষ: দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামাতো ভাইয়ের মেয়ের বিয়ের নিমন্ত্রণ রক্ষা করা।
বৃহস্পতিবার রাত দেড়টা নাগাদ রামপুরহাটে নেমে তৃণমূল বিধায়ক উঠেছিলেন সরকারি বাংলোরামপুরহাট থানার মাঝখণ্ড গ্রাম লাগোয়া জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের ‘পান্থশ্রী’ পরিদর্শন কুঠিতে। শুক্রবার সকাল ১০টা নাগাদ সেখান থেকেই মমতার মামাবাড়ি, রামপুরহাট ১ ব্লকের কুশুম্বা গ্রামে যাওয়ার জন্য বেরোচ্ছিলেন সোনালি। তখনই সামনে পড়লেন সাংবাদিকেরা। পরনে হালকা কমলা ও সবুজ রঙের আঁচলের কাজ করা সিল্ক শাড়ি। কপালে লাল টিপের উপর সিঁথিতে লম্বা করে সিঁদুর। লাল শাল। গাড়িতে ওঠার আগে সাংবাদিক দেখে দাঁড়ালেন। মুখশুদ্ধি চিবোতে চিবোতে জিজ্ঞাসা করলেন, “কী ব্যাপার, আপনারা এখানে কেন?”
প্রশ্ন: আপনার আসার খবর পেয়ে তো এলাম।
জবাব: কই, অন্য সময় তো আপনাদের দেখতে পাওয়া যায় না! (গাড়ির দরজা খুলতে খুলতে) আপনাদের কিছু বলার থাকলে বলুন।
প্রশ্ন: রাজ্যজুড়ে তোলপাড় চলছে। দল আপনাকে শো-কজ করবে ভাবছে। আপনার কী প্রতিক্রিয়া?
জবাব: দল যদি সিদ্ধান্ত নেয় শো-কজ করবে, দলের অনুগত সৈনিক হিসেবে আমি সেটা মেনে নেব। সঠিক সময়ে শো-কজের জবাব দেব। এখন অবধি আমার কাছে শো-কজের কোনও খবর আসেনি।
প্রশ্ন: হঠাৎ রামপুরহাটে?
জবাব: আমার একটা পারিবারিক অনুষ্ঠান আছে।
প্রশ্ন: আপনি চিকিৎসককে জুতোপেটা করে মারধর করেছেন?
জবাব: (খানিক অপ্রস্তুত হয়ে) আমি ওই চিকিৎসকের ঘরই চিনি না। জুতো দিয়ে মারধর করার ব্যাপারেও কিছু জানি না। (একটু সামলে, লাল ফ্রেমের বড় চশমাটা উঁচু করে) আমার সঙ্গে ওঁর শুধু বাক্যালাপ হয়েছে।
প্রশ্ন: সিসিটিভি ফুটেজে তো আপনারই গলা শোনা গিয়েছে!
জবাব: আমি যতটুকু বলেছি, তার বাইরে অনেকটা কথা শোনা গিয়েছে। উত্তমকুমার মারা গিয়েছিলেন ১৯৮০ সালে। তার পরে ‘ওগো বধূ সুন্দরী’ রিলিজ হয়েছিল। তখন ডাবিং হতে পারে, এখন প্রযুক্তি তো অনেক উন্নত। ডাবিং করাটা কোনও ব্যাপার?
প্রশ্ন: তবে অভিযোগ উঠছে কেন?
জবাব: বিজেপির ইচ্ছে হয়েছে, তাই অভিযোগ তুলেছে। আমি মা হিসেবে অন্য মা-কে বাঁচাতে যাই। তার পরেও দল যে নির্দেশ দেবে, অনুগত সৈনিক হিসাবে পালন করব।
প্রশ্ন: বিজেপি কি চক্রান্ত করছে?
জবাব: বিজেপি তো কত রকমের চক্রান্তই করছে।
প্রশ্ন: আজই ফিরে যাবেন?
জবাব: তারাপীঠে মায়ের থানে এসেছি। রাতে তারাপীঠে থাকব। সকালে পুজো দিয়ে বেরিয়ে যাব।
এর পরেই ‘ভাল থাকবেন’ জানিয়ে ‘পান্থশ্রী’-ত্যাগ সোনালির।
আধ ঘণ্টার মধ্যেই কুশুম্বায় পৌঁছে যান সোনালি। তাঁকে দেখে কিছুটা অবাকই হয়েছিলেন মমতার মামাতো ভাই নীহার মুখোপাধ্যায়। নেমন্তন্ন করা হলেও বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার যে সত্যিই বিয়েতে আসবেন, তা ওই পরিবার ভাবেনি! সকালে নীহারবাবু বলেন, “আমাদের এই খুশির দিনে সামিল হতে অনেকেই এসেছেন। সোনালিদিও এসেছেন। তবে, উনি যে আসবেন, এ খবরটা জানা ছিল না।”
এ দিন সকালে কুশুম্বায় পৌঁছে দেখা যায় বাড়ির ভিতরে বসে রয়েছেন সোনালি। সংবাদমাধ্যমকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বৃহস্পতিবারই সেখানে সপরিবার পৌঁছেছেন মমতার ভাই অমিত বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী লতাদেবী (নীহারবাবুর দিদি)। এসেছেন আরও আত্মীয়স্বজন। মমতার মামা অনিল মুখোপাধ্যায় নাতনির বিয়ের তদারকি করছেন। পরিবার সূত্রের খবর, তাঁর সঙ্গে দিনভর হাত লাগিয়েছেন সোনালিও। সন্ধ্যায় আরও একবার বাড়িতে যেতেই এগিয়ে এলেন নীহারবাবু। সোনালি নিয়ে প্রশ্ন করতেই বললেন, “দেখুন সোনালিদির সঙ্গে আমাদের পরিবারের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। বাবা-মা নিজে গিয়ে তাঁকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। আমার মেয়ের বিয়েতে আসা নিয়ে প্লিজ জলঘোলা করবেন না।”