ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে বুধবার সমাবেশ করে ১৯ সেপ্টেম্বর পরিবহণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। একই দিনে এবং প্রায় একই সময় কমবেশি ২০০ মিটারের মধ্যে পৃথক একটি সভা থেকে রাজ্য সরকারকে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে সরকারি কর্মীদের সংগঠন কো-অর্ডিনেশন কমিটি জানিয়ে দিয়েছে, ৪৯% বকেয়া মহার্ঘ ভাতা না-পেলে পুজোর পরে বৃহত্তর আন্দোলন শুরু করবে তারা। রানি রাসমণি রোডে এ দিনের ওই সভায় সরকারি কর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
বিকেলে সভা শুরুর আগে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে বকেয়া মহার্ঘ ভাতা এবং অন্য কয়েকটি দাবিতে স্মারকলিপি দেন সিপিএম প্রভাবিত কো-অর্ডিনেশনের নেতারা। নবান্নে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আলোচনা হয় তাঁদের মধ্যে। তবে শিক্ষামন্ত্রী পরে এই বিষয়ে কিছু জানাননি। কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনোজ গুহ বলেন, “যথেষ্ট সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। আমাদের দাবিদাওয়া নিয়ে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রী। বলেছেন, মহার্ঘ ভাতা নিয়ে কর্মীদের উদ্বেগের বিষয়টি তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাবেন।” শুধু তা-ই নয়, সরকার কী ভাবে রাজস্ব বাড়াতে পারে, শিক্ষামন্ত্রী সেই ব্যাপারে সংগঠনের নেতাদের কাছে পরামর্শ চেয়েছেন বলে দাবি করেন মনোজবাবু।
২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতার হাতবদলের পর থেকে সরকার-বিরোধী কর্মী সংগঠনগুলির বিভিন্ন দাবিদাওয়াকে সরকারের কর্তাদের তরফে তেমন কোনও গুরুত্ব দিতে দেখা যায়নি। এমনকী মুখ্যমন্ত্রীর হুমকির জেরে গত তিন বছরে রাজ্য জুড়ে সাধারণ ধর্মঘটের দিন উপস্থিতি নিয়ে কাজে যোগ দিয়েছিলেন কো-অর্ডিনেশন কমিটির প্রথম সারির বেশ কয়েক জন নেতাও। বিভিন্ন সময়ে সরকারের বিরুদ্ধে সমাবেশের ডাক দিলেও তা সফল হয়নি। এই পরিপ্রেক্ষিতে এ দিন সভার চেহারা দেখে অবশ্য সংগঠনের নেতারা খুশি।
শুধু যে সভার উদ্যোক্তারাই খুশি তা-ই নয়, কো-অর্ডিনেশন কমিটি এ দিনের জমায়েত থেকে বাড়তি অক্সিজেন পাবে বলে মনে করছেন শাসক দল প্রভাবিত কর্মী সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের নেতারা। ওই সংগঠনের এক নেতার কথায়, “রাজ্যে পালাবদলের পরেও কো-অর্ডিনেশন কমিটি নিজেদের সংগঠন মোটামুটি ধরে রেখেছে। তার উপরে এখন কেন্দ্রীয় কর্মীদের ন্যূনতম বেতন যেখানে ২০ হাজার টাকা, সেখানে এ রাজ্যে তা মাত্র ১১ হাজারের মতো। স্বভাবতই সরকারের উপরে বিরক্ত সরকারি কর্মীদের অনেকেই নতুন করে কো-অর্ডিনেশন কমিটির দিকে ঝুঁকছেন।” শাসক দলের পক্ষ থেকে সরকারি কর্মী সংগঠনের দায়িত্বে রয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবুই। সম্প্রতি রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের নেতারা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে জানিয়ে দিয়েছেন, অবিলম্বে এক কিস্তি ডিএ না-দিলে কর্মীদের ক্ষোভ কোনও ভাবেই প্রশমন করা যাবে না।
অন্য দিকে, পরিবহণ কর্মী সংগঠনের সভায় সিটু নেতা শ্যামল চক্রবর্তী পুলিশের উদ্দেশে বলেন, “শাসক দলের গুন্ডারা পুলিশকে মারছে। থানা ভাঙচুর করছে। আপনারা কিছুই করতে পারছেন না। আপনারা অর্ধেক বেতন পান। তা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে জানি। এই অবস্থায় আমাদের ধর্মঘটে আপনারা বাধা দেবেন না। আমাদের সাহায্য করুন।”