মায়াবীর মতো জাদুবলে শীত হঠাৎ ঘুরে দাঁড়াবে, এতটা আশা করলে বাড়াবাড়ি হবে। তবে টানা গরম থেকে আপাতত কিছুটা হলেও রেহাই পেতে পারে কলকাতা। রবিবার এমনই আশ্বাসের কথা শুনিয়েছে আলিপুর হাওয়া অফিস।
ছত্তীসগঢ়ের উপরে একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় সেটি আরও জোরালো হবে। তার দাক্ষিণ্যেই কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি মিলতে পারে বলে হাওয়া অফিসের বিজ্ঞানীরা আশা করছেন।
ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি বিদায় নিয়েছে শীত। তার পর থেকে দক্ষিণবঙ্গে পারদ ক্রমশই ঊর্ধ্বমুখী। রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে। খুব পিছিয়ে নেই কলকাতাও। আবহাওয়া দফতর জানায়, এ দিন কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩.৭ ডিগ্রি। চলতি সময়ের স্বাভাবিকের তুলনায় তিন ডিগ্রি বেশি।
শুধু তাপমাত্রা বাড়ার জন্যই যে দিকদারি বাড়ছে তা নয়। বাড়তি উপদ্রব অদ্ভুত এক শুকনো গরম। আবহবিদদের একাংশ বলছেন, এত দিন দক্ষিণবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলেই শুকনো গরম দেখা যেত। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সর্বত্রই তার দৌরাত্ম্য দেখা যাচ্ছে। অচেনা এই গরমও মানুষের অস্বস্তি বাড়িয়েছে।
হঠাৎ এমন পরিস্থিতি কেন?
আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, বঙ্গোপসাগর থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে জলীয় বাষ্প দক্ষিণবঙ্গের পরিমণ্ডলে ঢুকছে না। তাই দাপট বাড়ছে শুকনো গরমের। এক আবহবিজ্ঞানীর ব্যাখ্যা: সাগর থেকে জলীয় বাষ্প ঢোকার জন্য দক্ষিণবঙ্গের উপরে নিম্নচাপ অক্ষরেখা থাকা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে উচ্চচাপ বলয় থাকতে হবে সাগরেও। কিন্তু এখন দক্ষিণবঙ্গের স্থলভূমির উপরে বা সাগরে তেমন কোনও পরিস্থিতি নেই।
দিল্লির মৌসম ভবনের এক বিজ্ঞানী জানাচ্ছেন, নিম্নচাপ অক্ষরেখা বা সাগরের উচ্চচাপ বলয় থাকলেই জলীয় বাষ্প ঢুকবে পরিমণ্ডলে। সেই জলীয় বাষ্পই ঘনীভূত হয়ে মেঘ সৃষ্টি করবে। তা থেকে নামবে বৃষ্টি। এবং সেই বৃষ্টিই গরম কমিয়ে দেবে।
অক্ষরেখা বা উচ্চচাপ বলয় না-থাক, ছত্তীসগঢ়ের ওই ঘূর্ণাবর্তটিকে আশার আলো হিসেবে দেখছেন হাওয়া অফিসের কর্তারা। বলছেন, অক্ষরেখা যে-ভাবে জোলো হাওয়া টেনে আনে, ঘূর্ণাবর্ত ঠিক সেটাই করে। উপগ্রহ-চিত্র দেখে আবহবিদদের অনুমান, ঘূর্ণাবর্তটি জোরালো হয়ে অনেক বেশি জোলো হাওয়া টানবে। এবং তার সুফল পাবে দক্ষিণবঙ্গও। আবহবিজ্ঞানীদের পূর্বাভাস, বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা কিছুটা হলেও নামবে।
আশ্বাসের মধ্যেই আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, তাপমাত্রার পতন হলেও তা হবে নেহাতই সাময়িক। বৃষ্টির রেশ কাটলেই ফের বাড়বে তাপমাত্রা।