গালে দু’দিনের দাড়ি, আপাতত বাড়িতেই মদন

বসার ঘরের এক দিকে ব্রিটিশ আমলের ফায়ার প্লেস। উপরে কাঠের কারুকাজ করা বিরাট আয়না। তার ঠিক উল্টো দিকে মাটি থেকে অল্প উঁচু ডিভানে সাদা রঙের শাল-মুড়ি দিয়ে শুয়ে তিনি। শয্যার পাশে রাখা কাঠের গোলটেবিল। টেবিলের উপরে সাজানো কাগজপত্র, গোটা পাঁচেক মোবাইল ফোন আর এক তাড়া প্রেসক্রিপশন।

Advertisement

অত্রি মিত্র

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৪৩
Share:

বসার ঘরের এক দিকে ব্রিটিশ আমলের ফায়ার প্লেস। উপরে কাঠের কারুকাজ করা বিরাট আয়না। তার ঠিক উল্টো দিকে মাটি থেকে অল্প উঁচু ডিভানে সাদা রঙের শাল-মুড়ি দিয়ে শুয়ে তিনি।

Advertisement

শয্যার পাশে রাখা কাঠের গোলটেবিল। টেবিলের উপরে সাজানো কাগজপত্র, গোটা পাঁচেক মোবাইল ফোন আর এক তাড়া প্রেসক্রিপশন। পাশের চেয়ারে প্লাস্টিকের ব্যাগ থেকে উঁকি মারছে ইনহেলার। টেবিলের নীচে সাজানো রয়েছে ছোট ছোট প্লাস্টিকের কৌটো। একটার উপরে লেবেল সাঁটা ‘লাঞ্চ’। একটার উপরে ‘ব্রেকফাস্ট’। অন্য একটির উপরে ‘ডিনার’।

কী আছে কৌটোয়? শাল থেকে মুখ সরিয়ে ডিভানে শোওয়া ব্যক্তি জানালেন, “ওগুলো খাবার নয় রে, ওষুধ। এত রকমের ওষুধ, কোনটা কখন খেতে হবে, গুলিয়ে যাচ্ছে। তাই লিখে রেখে দিয়েছে।” কৌটো ভরা ক্যাপসুল আর ট্যাবলেট। নানা রঙের। নানা সাইজের।

Advertisement

বুধবার দুপুরে এসএসকেএম থেকে মুক্তি পাওয়া ইস্তক ভবানীপুরের শাঁখারিপাড়ার বাড়িতে এ ভাবেই সময় কাটাচ্ছেন মন্ত্রী মদন মিত্র। মাথায় উসকোখুসকো চুল। গালে দিন দুয়েকের বাসি দাড়ি।

বাজারে খবর, বুধবার সন্ধ্যায় তিনি নিজেই ফোন করে যোগাযোগ করেছেন সিবিআইয়ের সঙ্গে। কথাটা শুনে হাসলেন মদন। বন্ধ চোখ খুললেন। বললেন, “আমি তো চিঠি দিয়েই ওদের যা জানানোর জানিয়েছি। এখন বাড়িতেই আছি। যখন ওরা ডাকবে তখনই যাব।”

হাল্কা ঠান্ডার মধ্যেও বিকেল পাঁচটা নাগাদ ফুল স্পিডে ফ্যান চলছিল ঘরে। ঠান্ডার মধ্যেও এত জোরে ফ্যান? উত্তর এল, “আমার তো ক্লস্ট্রোফোবিয়া। বদ্ধ ঘরে দমবন্ধ হয়ে আসে। হয় জানলা খুলে রাখতে হয়, নয় তো ফ্যান চালিয়ে রাখি।”

বুধবার দুপুরে এসএসকেএম থেকে ফেরার পরে আর বাড়ির বাইরে বেরোননি। প্রথমে ঠিক করেছিলেন, দক্ষিণেশ্বরের বাড়িতে গিয়ে কয়েক দিন কাটিয়ে আসবেন। কিন্তু সেই পরিকল্পনা আপাতত বাতিল হয়েছে। কেন? বললেন, “যেতে পারলে ভালই হতো। কিন্তু শরীর দিচ্ছে না। এত রকম কড়া-কড়া ওষুধ। খালি ঘুম পাচ্ছে।”

মোবাইলগুলোতে ফোন আসছে ঘন ঘন। কেউ না কেউ ফোন তুলছেন। সবার মুখে একই কথা, “উনি ঘুমোচ্ছেন। এখন কথা বলতে পারবেন না। একটু পরে ফোন করুন।” পরে ফোন এলে সেই একই জবাব।

মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শ মানছেন? বেডসাইড ফিজিওথেরাপি শুরু হয়েছে কি? মনোবিদ এসেছেন? শুকনো হাসির সঙ্গে মাথা নাড়িয়ে বললেন, “সবে তো বাড়ি এলাম। আস্তে আস্তে সব করব।”

কী খেলেন? “সকালে চা-বিস্কুট, দুপুরে ভাত-সবজি-মাছ। কিন্তু খুবই অল্প পরিমাণে। মুখে রুচি নেই” বললেন মন্ত্রী।

সংবাদ মাধ্যমের অনুরোধ রেখেছেন সব সময়েই। মাথায় পাগড়ি চাপিয়েছেন। আলখাল্লা পরেছেন। নানা ভাবে পোজ দিয়েছেন ক্যামেরার সামনে। এখন সেই ক্যামেরা, সাংবাদিক সব এড়িয়ে চলছেন পরিবহণমন্ত্রী। প্রচার মাধ্যমের কেউ দেখা করতে এলে কাউকে না কাউকে দিয়ে বলে পাঠাচ্ছেন, “বলে দে, দলের নির্দেশ ছাড়া কোনও কথা বলব না। যা বলার দলই বলবে।”

এর মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ফাইলে কিন্তু সই করা থেমে নেই। সন্ধ্যা পৌনে ছ’টা নাগাদ গাড়ি নিয়ে ভবানীপুরেই উপস্থিত হলেন তাঁর আপ্ত-সহায়ক। জানালেন, গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ফাইলে সই করতে হবে। কিছু বিষয় নিয়ে পরামর্শও জরুরি। সবুজ-কালো রঙের ফুলহাতা টি-শার্টের উপরেই শাল জড়িয়ে ডিভানের উপরে বাবু হয়ে বসলেন মন্ত্রী। আপ্ত-সহায়কের হাত থেকে ফাইল নিয়ে পড়তে শুরু করলেন। সঙ্গে এক কাপ গ্রিন-টি আর দু’টো বিস্কুট।

আড় চোখে তাকিয়ে বললেন, “অনেক কাজ পড়ে আছে। কাজ থেকে ছুটি নেই মদন মিত্রর।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement