কলেজে অশান্তি, এ বার রায়গঞ্জ ও দাসপুরে

ছাত্র-ভোটের পর্ব মিটলেও কলেজে-কলেজে দাঁড়ি পড়ছে না অশান্তিতে। মুখ্যমন্ত্রী-শিক্ষামন্ত্রী বারবার বার্তা দিলেও রাজনীতির দাপাদাপি চলছে শিক্ষাঙ্গনে। আর প্রতিটি ক্ষেত্রেই নাম জড়িয়ে যাচ্ছে শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের। শুক্রবার পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরে চাঁইপাট কলেজ এবং উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ সুরেন্দ্রনাথ কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) এবং এসএফআইয়ের সংঘর্ষ বাধে। চাঁইপাটে জখম হন দু’পক্ষের ১০ জন। রায়গঞ্জে জখম ১৪।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঘাটাল ও রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩৬
Share:

ঘাটাল হাসপাতালে জখম টিএমসিপি সমর্থক।—নিজস্ব চিত্র।

ছাত্র-ভোটের পর্ব মিটলেও কলেজে-কলেজে দাঁড়ি পড়ছে না অশান্তিতে। মুখ্যমন্ত্রী-শিক্ষামন্ত্রী বারবার বার্তা দিলেও রাজনীতির দাপাদাপি চলছে শিক্ষাঙ্গনে। আর প্রতিটি ক্ষেত্রেই নাম জড়িয়ে যাচ্ছে শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের।

Advertisement

শুক্রবার পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরে চাঁইপাট কলেজ এবং উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ সুরেন্দ্রনাথ কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) এবং এসএফআইয়ের সংঘর্ষ বাধে। চাঁইপাটে জখম হন দু’পক্ষের ১০ জন। রায়গঞ্জে জখম ১৪। সংঘর্ষের পরে চাঁইপাট কলেজে টিচার ইন-চার্জের (টিআইসি) পদত্যাগের দাবি তুলে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করে টিএমসিপি। টিআইসি-সহ ১৫ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীকে বিকেল তিনটে থেকে ঘণ্টা চারেক ঘেরাও করে রাখা হয়। তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয় কলেজের মূল গেটে। করা হয় অবরোধও। খবর পেয়ে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা এলাকায় যান। শেষমেশ সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন দাসপুর ২-এর বিডিও অরূপ মণ্ডল।

এ দিন যে দু’টি কলেজে অশান্তি হয়েছে, সেখানে ছাত্র সংসদে ক্ষমতায় রয়েছে এসএফআই। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক দেবজ্যোতি দাসের অভিযোগ, “শিক্ষাঙ্গনে ধারাবাহিক সন্ত্রাস টিএমসিপি-র মজ্জাগত। যেখানে ওরা ক্ষমতায় নেই সেখানে তাই ইচ্ছাকৃত গা-জোয়ারি করছে।” টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্রের পাল্টা বক্তব্য, “রাজ্য জুড়ে ছাত্রছাত্রীরা এসএফআইকে প্রত্যাখ্যান করেছে। হাতেগোনা যে ক’টি জায়গায় ওরা আছে, সেখানে নানা কারণে গোলমালে ইন্ধন জোগাচ্ছে।”

Advertisement

ক’দিন আগেই শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, রাজ্যের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বাম আমলের তুলনায় বিশৃঙ্খলা প্রায় ৬০ শতাংশ কমে গিয়েছে। বাস্তবে অবশ্য অন্য দৃশ্য দেখছেন রাজ্যবাসী। তাঁদের অভিজ্ঞতা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অশান্তি এখন ধারাবাহিক ঘটনা হয়ে উঠেছে। ক’দিন আগে ঘাটাল রবীন্দ্র শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক অমিত রায় ফেসবুকে কিছু মন্তব্য পোস্ট করে টিএমসিপি-র হাতে নিগৃহীত হন। গত মঙ্গলবার তৃণমূল-সমর্থিত শিক্ষাকর্মীরা তাণ্ডব চালান কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে। তালিকা নেহাত উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়।

শিক্ষাঙ্গনে ধারাবাহিক এই অশান্তির জন্য তৃণমূলকেই দুষছেন বিরোধীরা। বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “বিধানসভায় বৃহস্পতিবারই রাজ্যপালকে দিয়ে রাজ্য সরকার বলিয়েছে, সর্বত্র পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ। অথচ, কোথাও পুলিশ টেবিলের তলায় লুকোচ্ছে, কোথাও শাসক দলের কর্মীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাণ্ডব করছেন।” সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিমের মন্তব্য, “কোনও ঘটনা ঘটলেই মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দেন, কিছুই হয়নি। তাঁর দলের লোকজন তাই মনে করেন, যা-খুশি করা যেতে পারে।” শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য এ দিনও বলেন, “শিক্ষাঙ্গনে অশান্তি বরদাস্ত করা হবে না। প্রতিবাদের নামে কলেজের গেটে তালা, অবরোধ কোনও ভাবেই চলবে না।”

চাঁইপাট কলেজে গোলমালের সূত্রপাত বৃহস্পতিবার বিকেলে। অভিযোগ, ওই দিন কলেজ ছুটির সময় টিএমসিপি সমর্থক এক ছাত্রীকে এসএফআই সমর্থক কিছু ছাত্র কটূক্তি করে। সমস্যা সমাধানে এ দিন এসএফআই এবং টিএমসিপি-র প্রতিনিধিদের নিয়ে নিজের ঘরে বৈঠকে বসেন কলেজের টিআইসি দেবাশিস সর্দার। তখনই দু’পক্ষ বচসায় জড়ায়। পরে ঘর থেকে বেরিয়ে তারা মারামারি শুরু করে। দেবাশিসবাবু বলেন, “কলেজ যাতে সুষ্ঠু ভাবে চলে, সে জন্যই দু’পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করছিলাম। তারপরে কেন আমার পদত্যাগের দাবি উঠছে, কেনই বা আমাদের আটকে বিক্ষোভ করা হলআমার জানা নেই।” এ দিনের ঘটনায় দু’পক্ষের সাত ছাত্রের বিরুদ্ধে মারপিট, ভাঙচুরের অভিযোগ দায়ের করেছেন দেবাশিসবাবু। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রায়গঞ্জ সুরেন্দ্রনাথ কলেজে আবার গোলমাল শুরু ছাত্র সংসদের ঘরে ঢোকা নিয়ে। টিএমসিপির অভিযোগ, এ দিন তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ইউনিয়ন রুমে ঢুকতে গেলে বাধা দেয় এসএফআই। এসএফআই-এর দাবি, ইউনিয়ন রুম দখল করতে গিয়েছিল টিএমসিপি-র সদস্যরা। বিকেলে টিএমসিপি অধ্যক্ষকে স্মারকলিপি দেয়। তারপরেই দু’পক্ষের সংঘর্ষ বাধে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement