শ্যামল সেন কমিশনের দফতরে সুদীপ্ত সেন। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সারদা কমিশন যতটা তৎপর, অন্যান্য অর্থ লগ্নি সংস্থার প্রতারিতদের প্রতি তারা ততটা সহৃদয় নয়। সোমবার কমিশনের অফিসে বসে এমনই অভিযোগ করলেন হাওড়া, বেলুড় ও বেলেঘাটার কিছু আমানতকারী।
ওই সব আমানতকারী এমপিএস গ্রিনারি ডেভেলপারস লিমিটেড সংস্থায় টাকা রেখে প্রতারিত হয়েছেন এবং সেই ব্যাপারে কমিশনের কাছে অভিযোগপত্র জমাও দিয়েছেন। এ দিন কমিশনের অফিসে হাজির হয়ে ওই আমানতকারীরা চিৎকার করে বলতে থাকেন, “কমিশন আমাদের কথা ভাবছে না। নানা ভাবে আমাদের ঘোরানো হচ্ছে।” কমিশনের কর্তারা অবশ্য এই অভিযোগের ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
কিন্তু এই অভিযোগ কেন?
“এমপিএস সংস্থার কাছে আমার পাওনা এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা। এক বছর আগেই ওই টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেয়নি,” বললেন হাওড়ার বাসিন্দা সন্তু ঘোষ। তাঁর অভিযোগ, সারদা কেলেঙ্কারি ধরা পড়ার পরেই টাকা ফেরতের জন্য বারবার ওই সংস্থার কর্তাদের কাছে দরবার করেন তিনি। গত বছর সেপ্টেম্বরে কমিশনের কাছে লিখিত আবেদন জানানো হয়। তাঁর মতো অনেকেই আবেদন করেন কমিশনে। সন্তুবাবুদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন কমিশন তাঁদের ডাকেনি। সারদা ছাড়া অন্যান্য বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থার প্রতারিতদের ব্যাপারে কলকাতা হাইকোর্ট কমিশনকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পরে গত এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে কমিশন তাঁদের ডেকে পাঠাতে শুরু করে।
ওই আমানতকারীদের কথায়, এমপিএস সংস্থায় টাকা রেখে কী ভাবে প্রতারিত হয়েছেন, ২৯ এপ্রিল কমিশনের সামনে হাজির হয়ে তাঁরা তা জানান। কমিশন জানায়, ওই সংস্থার কর্ণধারকে তারা ডেকে পাঠাবে। সেই অনুযায়ী ১৬ মে পরবর্তী শুনানি হবে বলে তারিখও ঠিক করে দেওয়া হয়। কিন্তু ভোটগণনার দিনে তাঁদের যাতায়াতের অসুবিধার কথা জানিয়ে লগ্নিকারীরা ওই দিনের পরিবর্তে ১৯ মে শুনানি করার আবেদন জানান। তাঁদের সেই আবেদন কমিশন মেনে নিয়েছে বলে জানানো হয়েছিল সন্তুবাবুদের।
তা সত্ত্বেও ১৬ তারিখেই শুনানি হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। সন্তুবাবু বলেন, “এ দিন কমিশনে এসে জানলাম, ১৬ মে আমাদের শুনানি হয়ে গিয়েছে। আমাদের না-জানিয়ে কেন শুনানি করা হল, তা জানতে চেয়েছিলাম কমিশনের একাধিক কর্তার কাছে। কিন্তু তাঁরা কোনও জবাব দেননি।” একই অভিযোগ বেলেঘাটার প্রদীপ দে, বেলুড়ের অশোক কর এবং আরও বেশ কয়েক জন আমানতকারীর।
আমানতকারীদের অভিযোগ, সংস্থাটি এখনও ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাঁদের পাওনা টাকা ফেরত দিচ্ছে না। তাঁরা জানান, ওই সংস্থার মালিক লেক টাউন এলাকায় থাকেন। সেই জন্য তাঁরা লেক টাউন থানায় প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ জানানো হয়েছে ক্রেতা সুরক্ষা দফতরেও। কিন্তু কোথাও আশা না-পেয়েই আমানতকারীরা হাজির হয়েছিলেন কমিশনে। সন্তুবাবু বলেন, “এপ্রিলে কমিশনে হাজির থাকার জন্য ছ’বার আমাকে ফোন করা হয়েছিল। এ বার শুনানির আগে এক বারের জন্যও ফোন করা হয়নি।”
এ দিনই কমিশনে হাজির করানো হয় সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনকে। ডাকা হয়েছিল প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাতঙ্গ সিংহ এবং তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী মনোরঞ্জনা সিংহকেও। ওই দু’জনের কাছ থেকে তিনি যথাক্রমে ২৮ কোটি এবং ২৫ কোটি টাকা পাবেন বলে কমিশনে জানিয়েছিলেন সুদীপ্ত। মাতঙ্গ অবশ্য কমিশনে জানান, তাঁর কাছে ১১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা পাবেন সুদীপ্ত। এ দিন মাতঙ্গ আসেননি। তাঁর আইনজীবী কমিশনে হাজির ছিলেন। মনোরঞ্জনাও আসেননি। এর আগে তিন-তিন বার কমিশন তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছিল। সুদীপ্তের আইনজীবী সমীর দাস বলেন, “মনোরঞ্জনার আইনজীবী এ দিন হাজির থাকলেও কমিশনের কোনও প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি। তাই তাঁকে ফের ২৬ মে হাজির থাকতে বলা হয়েছে।”