এনআরএস হাসপাতালের হস্টেলে কোরপান শাহ খুনের তদন্তে এ বার ৯ সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) তৈরি করল লালবাজার।
সোমবারই এন্টালি থানার হাত থেকে ওই গণপিটুনির ঘটনার তদন্তভার লালবাজারে গোয়েন্দা দফতরের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। লালবাজার সূত্রের খবর, সিটের নেতৃত্ব দেবেন কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার ২ (গোয়েন্দা বিভাগ) সুমনজিৎ রায়। ওই দলে রয়েছেন হোমিসাইড শাখার ওসি অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ আট অফিসার।
গত ১৬ নভেম্বর ভোরে এনআরএস হস্টেলে গণপিটুনিতে মৃত্যু হয় কোরপানের। তার ঠিক এক মাস পরে ১৬ ডিসেম্বর ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে প্রথম বর্ষের এক ডাক্তারি ছাত্রকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার পরে গ্রেফতার করা হয় হস্টেলের দুই ক্যান্টিন কর্মীকে। এন্টালি থানা ওই তিন জনকে গ্রেফতার করার পরে কেন ঘটনার তদন্তভার লালবাজার পুরোপুরি নিয়ে নিল তা নিয়ে নিচু তলার পুলিশ কর্মীরা প্রশ্ন তুলেছেন।
এনআরএস-কাণ্ডে এ বার তৃতীয় বর্ষের তিন ছাত্র-সহ বেশ কিছু হবু চিকিৎসক গ্রেফতার হতে পারেন বলে পুলিশ সূত্রে খবর। পুলিশের নিচুতলার একাংশের আশঙ্কা, ওই ছাত্রদের আড়াল করতেই লালবাজার তদন্ত ভার নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে। ওই পুলিশকর্মীদের অভিযোগ, ঘটনার প্রথম দিন থেকেই ওই হবু চিকিৎসকদের আড়াল করে এসেছেন এনআরএস-কর্তৃপক্ষ। পুলিশ তদন্তের প্রয়োজনে যে সব তথ্য হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের কাছে চেয়েছিল তা দিতে টালবাহানা করা হয়েছে। ঘটনার এক মাস পরেও আবাসিকদের ছবি হাতে পায়নি পুলিশ। তদন্তে এনআরএস-কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার জন্য তাঁদের প্রয়োজনে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথাও ভেবেছিল এন্টালি থানার পুলিশ। পুলিশের একাংশের আশঙ্কা, সরকারের অস্বস্তি এড়াতে লালবাজার নিজেদের হাতে তদন্ত ভার নিতে পারে।
লালবাজার অবশ্য এই সব আশঙ্কার কথা উড়িয়ে দিয়েছে। লালবাজারের এক কর্তার যুক্তি, “কোরপান শাহ খুনের ঘটনায় একের পর এক যা নতুন তথ্য বেড়িয়ে আসছে তা থেকে মনে হয়েছে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ একটি তদন্ত একটি থানার পক্ষে চালানো কঠিন। তাই লালবাজারের হোমিসাইড বিভাগের (যারা খুনের তদন্ত করে) অভিজ্ঞ অফিসারদের সিটের সদস্য করা হয়েছে।”
ওই অফিসারের দাবি, এনআরএস-কাণ্ডে জড়িত হবু চিকিৎসকদের গ্রেফতার করা হলে কী পরিস্থিতি হতে পারে তা খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। তাঁর মতে, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হলে তা সামলাতে হবে স্থানীয় থানাকেই। সে ক্ষেত্রে খুনের তদন্তে তারা বেশি সময় দিতে পারবে না। থানার ভার কিছুটা কমাতেই খুনের তদন্তের ভার কলকাতা গোয়েন্দা পুলিশ হাতে নিয়েছে।