এ বার আদালত কক্ষের মধ্যে দাঁড়িয়ে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের একাধিক শীর্ষ নেতা-মন্ত্রীর নাম করে, তাঁদের সারদায় জড়িত থাকার অভিযোগ করলেন কুণাল ঘোষ। কেন তাঁদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না, তুললেন সেই প্রশ্নও। সোমবার কুণালের ওই মন্তব্যকে ঘিরে সরগরম হয়ে ওঠে শ্রীরামপুরের এসিজেএম আদালত।
সারদা কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া ইস্তক তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ কুণালবাবু সংবাদমাধ্যমের কাছে তৃণমূলের শীর্ষনেতাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আনছেন। তাঁর থেকে সাংবাদিকদের দূরে রাখতে পুলিশ এ দিন শ্রীরামপুরে কোর্ট লক আপের সামনে দড়ির ব্যারিকেড করে দেয়।
শ্রীরামপুরের ছোট বেলুর বাসিন্দা শান্তা প্রামাণিক নামে সারদার এক এজেন্টের দায়ের করা মামলায় এ দিন কুণাল ঘোষ ছাড়াও সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন এবং ওই সংস্থার অপর এক কর্তা মনোজ নেগেলকে আদালতে আনা হয় সকাল ১১টায়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল) অমিতাভ বর্মা এবং শ্রীরামপুরের আইসি প্রিয়ব্রত বক্সির নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী হাজির ছিল আদালত চত্বরে। দুপুর সওয়া ২টো নাগাদ লক আপ থেকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয় কুণালকে।
এসিজেএম মন্দাক্রান্তা সাহার এজলাসের লক আপে তিন জনকে ঢোকানো হয়। ওই এজলাসে এ দিন একাধিক মামলা ছিল। কুণাল বিচারকের উদ্দেশে গোড়াতেই বলেন, তিনি কিছু বলতে চান। বিচারক জানান, ওই মামলাটি পরে শোনা হবে। কিছুক্ষণ পরে সারদার মামলা শুরু হতেই কুণাল বলতে থাকেন, “মিথ্যা মামলায় আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমি নির্দোষ। রাজ্যস্তরের মন্ত্রীরা এই চক্রান্ত করছেন। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।” এর পরেই এক এক করে শাসক দলের অন্তত চারজন নেতা-মন্ত্রীর নাম করে কুণাল যোগ করেন, “এঁদের কেন ধরা হচ্ছে না? পুলিশ আমাকে ফাঁসাচ্ছে।” তাঁর অভিযোগ, “পুলিশ খারাপ নয়। উপরতলার কিছু প্রভাবশালী নেতার নির্দেশে পুলিশ এগুলো করছে।” দলের এক শীর্ষনেত্রী সব জানেন এবং তিনিও চক্রান্তকারীদের তালিকা থেকে বাদ যান না বলেও দাবি করেন তিনি।
কুণাল এত দূর বলতেই জয়দীপ মুখোপাধ্যায় নামে এক আইনজীবী কুণালবাবুকে থামিয়ে দিয়ে চিৎকার করে বলতে থাকেন, “এটা রাজনৈতিক মঞ্চ নয়। আদালত অবমাননা করা হচ্ছে।” আরও কিছু আইনজীবী জয়দীপবাবুকে সঙ্গ দেন। আদালত চত্বরে হই-হট্টগোল শুরু হয়ে যায়। তার মধ্যেই কুণাল বলতে থাকেন, “আমাকে বলতে দিন। আমার কথা লিপিবদ্ধ করুন।” বিচারক নির্দেশ দেন, ১৭ তারিখ ফের শুনানি হবে। ততদিন অভিযুক্ত তিনজনকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি।
পরে কুণালবাবুর আইনজীবী যতন রায় বলেন, “আদালতের কাছে অভিযুক্ত ব্যক্তি কিছু বলতেই পারেন। আমি বিচারকের কাছে আগাম অনুমতিও নিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু কিছু আইনজীবী আমার মক্কেলকে বলতেই দিলেন না।” জয়দীপবাবুর দাবি, “আদালত কুণালবাবুকে আত্মপক্ষ সমর্থন করার অনুমতি দিয়েছিল। রাজনৈতিক অভিসন্ধিমূলক কথাবার্তা বলতে নয়।”