কলকাতা-সহ রাজ্যের ৯৪টি পুরসভার ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের মতো পুরভোটেও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনে রাজ্যের আপত্তি। শনিবার কমিশনের বৈঠকে হাজির রাজ্যের প্রতিনিধিরা এই ব্যাপারে কিছু না বললেও
পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (ববি) স্পষ্টই বলেছেন, এই ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন নেই।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক, পুলিশ সুপার ও কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনারের সঙ্গে শনিবার বৈঠকের পরে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায় বলেন, “কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতি মানুষের মনে বাড়তি আস্থা জাগাবে। তাই আমরা রাজ্য প্রশাসনকে কেন্দ্রীয় বাহিনী আনার ব্যবস্থা করতে বলেছি।” রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা অবশ্য এই ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনও প্রতিশ্রুতি কমিশনকে দেননি। কমিশন সূত্রে খবর, রাজ্যের প্রতিনিধিরা বলেছেন, এই ব্যাপারে পরে জানানো হবে।
পরে পুরমন্ত্রী অবশ্য এক কথায় রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ওই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর রাজ্যের নামোল্লেখ করে তাঁর বক্তব্য, “দু’একটি ব্যতিক্রম বাদ দিলে এই ধরনের ভোট হয় স্থানীয় পুলিশ দিয়েই। তা না হলে তো গুজরাত-সহ দেশের সব রাজ্যেই স্থানীয় স্বশাসিত সংস্থার ভোট কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে করাতে হয়।” রাজ্য নির্বাচন কমিশনার যদিও বলেছেন, “অতি-স্পর্শকাতর বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন রয়েছে এবং তার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে রাজ্যকে।”
তবে কি রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্য সরকারের এই মতপার্থক্য ঘিরে আরও এক বার সঙ্ঘাতের পরিবেশ তৈরি হতে চলেছে? ঠিক যেমন হয়েছিল প্রাক্তন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডের আমলে? নির্দিষ্ট সময়ে পঞ্চায়েত ভোট আয়োজন এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে মীরাদেবীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্ঘাত গড়িয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। সে বার কমিশনের পক্ষেই রায় দেয় কোর্ট। বস্তুত, মীরাদেবীর উত্তরসূরি হিসেবে যখন সুশান্তবাবুকে মনোনীত করা হয়েছিল, তখন অনেকেই সেই আইনি লড়াইয়ের প্রসঙ্গ তুলে বলেছিলেন, রাজ্য
নির্বাচন কমিশনার পদটির গরিমা লঘু করতে চাইছে রাজ্য সরকার। কারণ মীরাদেবী ছিলেন আইএএস অফিসার, আর সুশান্তবাবু ডব্লিউবিসিএস। ঘটনাচক্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের প্রশ্নে প্রাক্তন ও বর্তমান একই মত পোষণ করছেন।
কমিশনের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপি। সকলেরই বক্তব্য, রাজ্যের যা পরিস্থিতি, তাতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতি ছাড়া অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট করা সম্ভব নয়। বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, “পুরভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার দাবি আমরা জানিয়েছি। তা না হলে রাজ্যে অবাধ ভোট সম্ভব নয়।” প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মানস ভুঁইয়ার কথায়, “সব বিরোধী দলেরই দাবি হল কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে পুরভোট করা।” কিন্তু পুরমন্ত্রী তো জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের পক্ষে নয়? এই প্রসঙ্গে মানসবাবুর বক্তব্য, পুরসভার ভোট পরিচালনা করে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। তারা যদি মনে করে, কেন্দ্রীয় বাহিনী দরকার, তবে সেই মতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম বলেন, “বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার টাকা যেমন লুঠ হয়েছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী না থাকলে পুরভোটেও লুঠ হবে।”
এ দিনের বৈঠকটি হয় কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় পুরভোটের প্রস্তুতি নিয়ে। কলকাতা পুরসভার নির্বাচনে রির্টানিং অফিসার হলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক। তবে নিরাপত্তার দায়িত্ব কলকাতা পুলিশের। কমিশনের দফতরে এই বৈঠকে তাই কলকাতা পুলিশের কর্তাদের পাশাপাশি দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক ও অতিরিক্ত জেলাশাসকরাও ছিলেন। কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় যে ক’টি পুরসভার নির্বাচন হবে, সেখানে কোথায় কত নিরাপত্তারক্ষী লাগবে, তা কমিশনের পক্ষ থেকে রাজ্যের প্রতিনিধিদের এ দিন জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কাল, সোমবার উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার। ওই জেলায় ২৩টি পুরসভার ভোট হবে ২৫ এপ্রিল। কলকাতা পুরসভার ভোট ১৮ এপ্রিল। ওই ভোটের বিজ্ঞপ্তি ১৮ মার্চের মধ্যে প্রকাশিত হবে বলে রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর।