সিবিআইয়ের নোটিস অনুযায়ী কাঁথি পুরসভা কর্তৃপক্ষ তাঁদের এলাকায় সারদা গোষ্ঠীর আবাসন প্রকল্পের নথিপত্র জমা দিল ঠিকই। কিন্তু সেই নথি তদন্তকারীদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি বলে সিবিআইয়ের খবর। কারণ, ওই নথিপত্রে প্রচুর অসঙ্গতি পেয়েছেন তদন্তকারীরা। এই অবস্থায় ওই পুরসভার কর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা ভাবছে সিবিআই।
পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় কাঁথি-দিঘা রাজ্য সড়কের ধারে একটি জমিতে সারদার আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলার কথা ছিল। সেই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় ‘সারদা এনক্লেভ’। ধানজমিতে আবাসন গড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। ভূমি দফতর জানাচ্ছে, প্রকল্প রূপায়ণের জন্য সেই জমির চরিত্র বদল করে বাস্তুজমি করে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সারদার সেই প্রকল্প এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। টাকা দিয়েও ফ্ল্যাট পাননি গ্রাহকেরা।
তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীকে গত বছর ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। তখনই সারদার ওই আবাসন প্রকল্পের প্রসঙ্গ ওঠে। সিবিআই সূত্রের খবর, জেরার মুখে সারদা-কর্ণধার সুদীপ্ত সেন অভিযোগ করেছিলেন, ওই আবাসন প্রকল্পের জন্য একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি টাকা চেয়ে চাপ দিতে শুরু করেছিলেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কিন্তু তাতেও সমস্যা মেটেনি। তাই তিনি সেই আবাসন গড়ে তুলতে পারেননি বলে সিবিআই-কে জানান সুদীপ্ত। তাঁর সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই শুভেন্দুকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল বলে তদন্তকারীরা জানান।
সিবিআইয়ের খবর, শুভেন্দু তখন জানান, কাঁথি পুরসভার কাছে ওই প্রকল্পের সবিস্তার তথ্য আছে। যা বলার, ওই পুরসভার কর্তৃপক্ষই বলতে পারবেন। ঘটনাচক্রে কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান শুভেন্দুরই ভাই সৌমেন্দু অধিকারী। এবং শুভেন্দু-সৌমেন্দু কাঁথির তৃণমূল সাংসদ শিশির অধিকারীর ছেলে।
মঙ্গলবার কাঁথি পুরসভার অফিসার দিলীপ চৌহান সল্টলেকে সিজিও কমপ্লেক্সে এসে ওই আবাসন প্রকল্প সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র জমা দেন। সেই নথি নিয়ে দিলীপবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদও করেন তদন্তকারীরা। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে ওই নথি উল্টেপাল্টে তদন্তকারীরা সন্তুষ্ট নন। দেখা দিয়েছে বেশ কিছু অসঙ্গতি। তাই এই ব্যাপারে কাঁথি পুরসভার কর্তাদের জেরা করা হতে পারে। সিবিআই অফিস থেকে বেরিয়ে দিলীপবাবু অবশ্য এই নিয়ে কোনও প্রশ্নেরই জবাব দেননি।
সিবিআই জানায়, কাঁথি পুরসভা পাঁচতলা আবাসনের নকশা অনুমোদন করেছিল। ২০১২ সালে ‘সারদা এনক্লেভ’-র কাজ শুরু হয়। সেই সময়েও পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন সৌমেন্দু। তখনই জমি ঘিরে পাঁচিল দেওয়া হয়। আবাসন তৈরির জন্য দামি যন্ত্রপাতি এবং অন্যান্য সাজসরঞ্জামও জমিতে মজুত করা হয়েছিল। কিন্তু কিছু দিন পরে সেই সব যন্ত্র ও সরঞ্জাম উধাও হয়ে যায়। কে বা কারা সেগুলো লোপাট করে দিল, তা নিয়ে তদন্তও শুরু করেছিল কাঁথি থানার পুলিশ। সেই তদন্তের ফলাফল জানা যায়নি। সর্বোপরি ফ্ল্যাট দেওয়ার নামে বহু গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নিয়েও আবাসনের কাজ শুরুই হয়নি। আর সেই সূত্রেই সিবিআইয়ের মুখে পড়েছেন কাঁথির পুরপ্রধান সৌমেন্দু। এবং শুভেন্দুও।