কেউ বললেন চলি, কেউ নাড়লেন হাত

আপত্তি থাকা সত্ত্বেও দলের বর্ষীয়ান নেতা-মন্ত্রী এবং রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ আমলাদের সঙ্গে পরামর্শ করে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার রাতেই সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, কমিশনের ‘তুঘলকি আচরণ’ সত্ত্বেও পাঁচ জেলার পুলিশ সুপার এবং তিন জেলার জেলাশাসক ও অতিরিক্ত জেলাশাসককে সরানোর যে নির্দেশ কমিশন দিয়েছে, তা তিনি মেনে নিচ্ছেন। আপাতত বদলি করে দেওয়া হবে ওই অফিসারদের।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:০৪
Share:

আপত্তি থাকা সত্ত্বেও দলের বর্ষীয়ান নেতা-মন্ত্রী এবং রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ আমলাদের সঙ্গে পরামর্শ করে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

মঙ্গলবার রাতেই সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, কমিশনের ‘তুঘলকি আচরণ’ সত্ত্বেও পাঁচ জেলার পুলিশ সুপার এবং তিন জেলার জেলাশাসক ও অতিরিক্ত জেলাশাসককে সরানোর যে নির্দেশ কমিশন দিয়েছে, তা তিনি মেনে নিচ্ছেন। আপাতত বদলি করে দেওয়া হবে ওই অফিসারদের।

বুধবার সকাল থেকেই সেই বদলি প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে যায় অধিকাংশ জেলাতেই। তবে সদ্য-প্রাক্তন পুলিশ সুপারদের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নিয়ে কাজে যোগ দিতে কোথাও রাত গড়িয়ে গিয়েছে। কোথাও আবার ‘রিলিজ অর্ডার’ পেয়ে যাওয়ায় অপেক্ষা না করে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েই সরে গিয়েছেন শাসকদলের প্রতি ‘পক্ষপাতিত্বে অভিযুক্ত’ অফিসার।

Advertisement

এ দিল সকাল সাড়ে দশটার মধ্যেই জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরুণ হালদারকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে ছিলেন বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা। তবে মঙ্গলকোটে মুখ্যমন্ত্রীর জনসভা থাকায় জেলা ছাড়তে পারেননি তিনি। ডিউটি সেরে সন্ধেয় তিনি বলেন, “এই কাজ শেষ হল। এ বার চলি।” তাঁর জায়গায় দায়িত্ব নিচ্ছেন মীরাজ খালেদ।

এ দিন রাত সাড়ে দশটা নাগাদ তিনি বর্ধমানে পৌঁছে জেলার নতুন পুলিশ সুপারের দায়িত্বভার নিয়েছেন। তবে এ দিন কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

কমিশনের নির্দেশে বীরভূমের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়াকে ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার দায়িত্ব নিতে হয়েছে। এ দিন সন্ধ্যায় সরাসরি সিউড়ি থেকে বাঁকুড়া হয়ে সড়কপথে ঝাড়গ্রাম এসপি অফিসে পৌঁছন তিনি। ঝাড়গ্রামের বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ সেই সময়ে জেলা সদর মেদিনীপুরে ছিলেন। তাই ঝাড়গ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) সুমিত কুমারের কাছ থেকে দায়িত্বভার বুঝে নেন রাজোরিয়া। দায়িত্ব নিয়েই নিজের চেম্বারে জেলা পুলিশের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিনি। পরে সাংবাদিকদের বলেন, “আমার প্রথম কাজ সুষ্ঠু ভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা।” জঙ্গলমহলে ফের মাওবাদী গতিবিধি প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “সদ্য দায়িত্ব নিলাম। এখানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। এটুকু বলতে পারি, অপারেশন আরও জোরদার করা হবে। এলাকায় শান্তি অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনীয় সবরকম পদক্ষেপ করা হবে।” প্রাক্তন পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ অবশ্য তাঁর বাংলো এখনও ছাড়েননি। আপাতত তাই ঝাড়গ্রামের একটি সরকারি বাংলোয় ঠিকানা হয়েছে নতুন পুলিশ সুপারের।

ভারতীদেবী এ দিন সকালে অফিসে না এলেও বিকেলে মেদিনীপুরে পুলিশ সুপারের অফিসে আসেন। সন্ধে পর্যন্ত ছিলেন নিজের চেম্বারে। সেখানেই তিনি দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খড়্গপুর) ভাদনা বরুন চন্দ্রশেখরকে। সন্ধ্যায় বিদায়ী পুলিশ সুপারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে আসেন শাসকদলের জেলা নেতারা। রাতে মেদিনীপুরে আসেন নতুন পুলিশ সুপার শ্রীরাম ঝাঁঝোরিয়া।

রাত ন’টা নাগাদ বহরমপুরে পৌঁছন কমিশন নিযুক্ত নতুন পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রাজা। গাড়ি থেকে নেমেই সোজা এসপি’র চেম্বারে ঢুকে যান তিনি। বিদায়ী সুপার হুমায়ুন কবীরের সঙ্গে প্রায় ঘণ্টা খানেক বৈঠক সেরে বেরিয়ে তিনি শুধু বলেন, “বড্ড ক্লান্ত। পরে কথা হবে।” তাঁর পিছনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন সদ্য প্রাক্তন হুমায়ুন কবীর। হাত নেড়ে তিনিও গাড়িতে উঠে যান।

মালদহের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদবও এ দিন দুপুরে তাঁর দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহকে। সেখানে নতুন পুলিশ সুপার হচ্ছেন বাঁকুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার। রাত পর্যন্ত তিনি অবশ্য মালদহে পৌঁছতে পারেননি।

পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক তথা জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক অরিন্দম দত্ত-ও এ দিন সকালে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলেও তাঁর পরিবর্তে যাঁর আসার কথা সেই বৈভব শ্রীবাস্তব রাত পর্যন্ত মেদিনীপুরে পৌঁছতে পারেননি। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে আজ, বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর দায়িত্ব নেওয়ার কথা। তবে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ‘অপসারিত’ দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত জেলাশাসক অলোক রায়ের পরিবর্তে দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন কৌশিক ভট্টাচার্য।

এ দিন উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক হিসেবে কাজে যোগ দিতে বারাসতে এসে ওঙ্কার সিংহ মীনা প্রথমেই জেলাশাসকের বাংলোয় চলে যান তিনি। সেখানে বিদায়ী জেলাশাসক সঞ্জয় বনশলের সঙ্গে বৈঠক সেরে দ্রুত ঢুকে পড়েন প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক বৈঠকের পরে বলেন, “সুষ্ঠু ভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্য কী কী পদক্ষেপ হবে সেগুলিই প্রাথমিক ভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement