এনবিএসটিসিতে স্বেচ্ছাবসর দেওয়ার সিদ্ধান্ত

আর্থিক সমস্যায় ধুঁকতে থাকা উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (এনবিএসটিসি) কর্মীদের আর এক দফায় স্বেচ্ছাবসর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। রবিবার শিলিগুড়ির উত্তরকন্যায় সংস্থার বোর্ড মিটিঙে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব পরিবহণ দফতরে পাঠানো হবে বলে ঠিক হয়েছে। বাস বাড়িয়ে পরিকাঠামো বাড়ানোর পাশাপাশি কর্মীর বোঝা কমিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে নিগম সূত্রের খবর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৩
Share:

আর্থিক সমস্যায় ধুঁকতে থাকা উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (এনবিএসটিসি) কর্মীদের আর এক দফায় স্বেচ্ছাবসর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। রবিবার শিলিগুড়ির উত্তরকন্যায় সংস্থার বোর্ড মিটিঙে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব পরিবহণ দফতরে পাঠানো হবে বলে ঠিক হয়েছে। বাস বাড়িয়ে পরিকাঠামো বাড়ানোর পাশাপাশি কর্মীর বোঝা কমিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে নিগম সূত্রের খবর।

Advertisement

নিগমের চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব জানান, রাজ্য সরকারের বড় পরিমাণ ভর্তুকির উপর সংস্থা দাঁড়িয়ে রয়েছে। সংস্থাটিকে নিজের পায়ে দাঁড়াতেই হবে। বাম আমলে যে ভাবে লোক নিয়োগ হয়েছিল তাতে সংস্থার বোঝা বেড়েছে। তিনি বলেন, “তাই আবার কিছু কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পের আওতায় আনা হচ্ছে।”

সংস্থা সূত্রের খবর, প্রথম দফায় সংস্থার স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পে ৫৮৯ জন আবেদন করেছিলেন। সেখানে ৫৬৭ জনের আবেদন মঞ্জুর করা হয়। এর জন্য সরকারের প্রায় সাড়ে ৮৬ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় স্বেচ্ছাবসরে ইচ্ছুক এমন ১ হাজার ২৩৪ জনকে ইতিমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু এত জনকে এক সঙ্গে স্বেচ্ছাবসর দেওয়ায় সবুজ সঙ্কেত দেয়নি রাজ্য অর্থ দফতর। তাই আপাতত ৩১২ জনকে স্বেচ্ছাবসর দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য ৫০ কোটি টাকার প্রয়োজন। ওই পরিমাণ অর্থ এনবিএসটিসি-র পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। তাই, পরিবহণ দফতরের হাত ঘুরে ওই টাকা দেবে অর্থ দফতর।

Advertisement

এনবিএসটিসি-র বর্তমান স্থায়ীকর্মীর সংখ্যা ২ হাজার ২৯৬ জন। চুক্তির ভিত্তিতে কর্মী রয়েছে ১২০০ জনের মতো। তবে বেশি সংখ্যক স্থায়ী কর্মীকে একযোগে স্বেচ্ছাবসর দিয়ে দিলে, সংস্থা চালানোই এখন সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে বলে নিগমের অফিসারেরা মনে করছেন। তাঁরা জানান, ধীরে ধীরে স্থায়ী কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর দিয়ে চুক্তির ভিত্তিতে লোক বাড়ানোর প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। সেই ভাবে চালক, মেকানিক, কন্ডাক্টর নেওয়া হচ্ছে। বেহাল আর্থিক অবস্থার জেরে কর্মীদের প্রতি মাসে ৭৫ শতাংশের উপর বেতনই দেওয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। পরিবহণ দফতরের অনুমোদনে অর্থ দফতর টাকা দেওয়ায় স্থায়ী কর্মী কমলে সেই অবস্থার অনেকটাই পরিবর্তন হয়ে যাবে।

গৌতমবাবু বলেন, “আমরা এনবিএসটিসিকে ঘুরে দাঁড় করাতে বদ্ধপরিকর। সেই জন্য নানা পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।” নিগম সূত্রের খবর, বর্তমানে সংস্থার আয় মাসে ৮ কোটি টাকার মতো। সেখানে বেতন বাবদ লাগে ৬ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা। অন্য খরচের জন্য প্রয়োজন হয় মাসে ৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা মতো। এই অবস্থায় বছরে প্রায় ৬০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয় রাজ্য সরকার। সেখানে বাসের আয় বাড়ানো ছাড়াও কর্মী বাবদ খরচ কমানোর পথে হাঁটছে এনবিএসটিসি।

সরকারি সূত্রের খবর, বৈঠকে ঠিক হয়েছে জওহরলাল নেহরু আর্বান রিনিউয়াল মিশনের আওতাভুক্ত বাসের জন্য ‘শিলিগুড়ি জোন’ বলে আলাদা একটি জোন তৈরি হবে। এর জন্য শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়িতে আলাদা দফতর, ওয়ার্কশপ তৈরি হবে। সেই সঙ্গে বাসগুলিকে কেন্দ্রের শর্তাবলী অনুসারে বিমাও করানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুই শহরের ‘প্লানিং এরিয়ার’ জন্য কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্য ১৪০টি বাস পেয়েছে। ৬৮টি বাস ইতিমধ্যে রাস্তায় নেমেছে। আরও ২০টি বাস আগামী ২০ জানুয়ারি শিলিগুড়ি থেকে উদ্বোধন করে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাকিগুলি ধারে ধাপে আসার কথা রয়েছে।

সংস্থার কয়েকজন বোর্ড ডিরেক্টর এদিন জানান, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর থেকে ১ কোটি টাকা করে তিনটি ‘ভলভো’ বাস সংস্থাকে দেওয়ার কথা ছিল। এদিন আলোচনার পর তা কিছু দিনের মধ্যে দেওয়া হবে বলে ঠিক করা হয়। এ ছাড়া বদলি নীতি কার্যকর, অডিট রিপোর্ট মাফিক ব্যবস্থা, ১১ বছরের পুরানো বাস বিক্রি, বিভিন্ন ডিপো ও বাসস্ট্যান্ডের কাজ শেষ করার কথা হয়েছে। বর্তমানে এনবিএসটিসি-র বিভিন্ন রুটে ৬৮৪টি বাস চলছে।

তবে কর্মী এবং অবসরপ্রাপ্তদের বকেয়া মেটানো নিয়েও কথা হয়। সংস্থার কয়েকজন অফিসার জানান, পিএফ, গ্রাচ্যুইটি, পেনশন বয়েকা মেটাতে সাড়ে ১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এর মধ্যে ৬ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা এবং আগামী আর্থিক বছরের জন্য আরও ৩৪ কোটি টাকা চাওয়া হচ্ছে। চেয়ারম্যান জানান, “আমরা যে প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে চলছি তা ঠিকঠাক চললে দ্রুত কর্মীরা মাস গেলে পুরো বেতনও পাবেন।” তবে তা কবে হবে সেই উত্তর অবশ্য এদিনের বৈঠক থেকে উঠে আসেনি বলে নিগমের কয়েজন ডিরেক্টর জানিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement