আমানতকারীদের আলোচনা। দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে। ছবি: বিশ্বনাথ মশান
টাকা ফেরত পেতে পুজোর দিনগুলিতে এজেন্টদের বাড়ির সামনে বিক্ষোভের সিদ্ধান্ত নিলেন অর্থলগ্নি সংস্থা এমপিএসের আমানতকারীরা। রবিবার দুর্গাপুরে দু’টি বৈঠক করেন শ’দুয়েক আমানতকারী। তাঁদের তরফে কাঞ্চন মহন্ত বলেন, “টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য আরও দু’দিন সময় দেওয়া হচ্ছে। ফল না হলে সপ্তমী থেকে এজেন্টদের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাব। কলকাতায় এমপিএসের সদর দফতরের সামনেও ৫ অক্টোবর অবস্থান-বিক্ষোভ হবে।”
কলকাতা থেকে ধৃত এমপিএস-কর্ণধার প্রমথনাথ মান্না ও অন্যতম ডিরেক্টর প্রদীপ চন্দ্রকে শনিবার বাঁকুড়া আদালতে আনার পরে দফায়-দফায় বিক্ষোভ দেখান আমানতকারী ও এজেন্টরা। চলে তুমুল গালিগালাজ। এর পরেই দুর্গাপুরে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেন আমানতকারীরা। রবিবার কবিগুরু এবং এমএএমসি এলাকায় দু’টি বৈঠক করেন তাঁরা। কাঞ্চনবাবু জানান, এক সময়ে বর্ধমান ছাড়াও সংস্থার বীরভূম ও বাঁকুড়া জেলার কাজকর্ম নিয়ন্ত্রিত হত দুর্গাপুর থেকে। পরে অবশ্য নানা জায়গায় অফিস হয়। অভিযোগ পেয়ে কয়েক মাস আগে দুর্গাপুরের অফিসটি ‘সিল’ করে দেয় পুলিশ।
কাঞ্চনবাবুর দাবি, “সংস্থার আমানতের এক-তৃতীয়াংশ উঠেছে দুর্গাপুর থেকে। আমরা জেনেছি, বৈঠক করে নতুন চেয়ারম্যান ও পরিচালন পর্ষদ গড়ে ফেলেছে সংস্থা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে টাকা ফেরত পেতে আমরা এজেন্ট ও সংস্থার উপরে চাপ তৈরি করতে চাই।” আমানতকারী সমিত মজুমদার, রঞ্জিত গোপ, স্বপন চট্টোপাধ্যায়েরা অভিযোগ করেন, টাকা ফেরত চাইলে এজেন্টরা বারবার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। এক আমানতকারীর ক্ষোভ, “অনেকেই এজেন্টদের সঙ্গে পরিচিতির সুবাদে টাকা রেখেছেন। নানা অনুষ্ঠানে বড় এজেন্টরা দায়িত্ব নিয়ে টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন। অথচ, এখন তাঁরা এড়িয়ে চলছেন।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুর্গাপুরের এক এজেন্ট ফোনে বলেন, “টাকা ফেরাতে না পেরে মুখ দেখাতে পারছি না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সব জানাব।” আর এক এজেন্ট বলেন, “আমরা মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা তুলে দিয়েছি সংস্থাকে। ফেরত দিতে না পেরে এখন লুকিয়ে আছি। আমানতকারীরা যদি বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখান, কী ভাবে সামাল দেব জানি না!”
দুর্গাপুরে যা শুরু হয়েছে, তার রেশ অন্যত্রও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা নানা জেলার এমপিএসের এজেন্টদের। যাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে সংস্থার কর্ণধার গ্রেফতার হয়েছেন, বাঁকুড়ার সেই এজেন্ট সঞ্জয় মণ্ডল, মধুসূদন মণ্ডল, শ্যামসুন্দর অধিকারীরা এ দিন বলেন, “আমরাও টাকা রেখে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছি। এখন আমানতকারীরা যদি আমাদের ধরেন, কোথায় গিয়ে দাঁড়াব ভেবে পাচ্ছি না।”