উপাচার্যের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ, তদন্তে কমিটি

বিশ্বভারতীর উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্তের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ খতিয়ে দেখতে এক জনের তদন্ত কমিটি তৈরি করল কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রক। সদ্য সমাপ্ত শীতকালীন অধিবেশনে রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বিতর্ক চলাকালীন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী স্মৃতি ইরানির উপস্থিতিতে সুশান্তবাবুর নামে নানা অভিযোগ তোলেন কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:২৭
Share:

সুশান্ত দত্তগুপ্ত

বিশ্বভারতীর উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্তের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ খতিয়ে দেখতে এক জনের তদন্ত কমিটি তৈরি করল কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রক।

Advertisement

সদ্য সমাপ্ত শীতকালীন অধিবেশনে রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বিতর্ক চলাকালীন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী স্মৃতি ইরানির উপস্থিতিতে সুশান্তবাবুর নামে নানা অভিযোগ তোলেন কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। অভিযোগের তালিকায় ছিল আর্থিক অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার করে পদ সৃষ্টি, যৌন হেনস্থার ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার মতো বিভিন্ন বিষয়। তখনই স্মৃতি প্রদীপ ভট্টাচার্যকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, সব অভিযোগ লিখিত আকারে জমা দিন, খতিয়ে দেখা হবে। আজ মন্ত্রকের তরফ থেকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষাসচিব বৃন্দা স্বরূপকে। উপাচার্য অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

সুশান্তবাবুর বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ এনেছেন কংগ্রেস সাংসদ? প্রদীপবাবু তাঁর অভিযোগে লিখেছেন, “বিশ্বভারতীর কাজকর্ম এক জন স্বেচ্ছাচারীর মতো পরিচালনা করছেন সুশান্তবাবু। উপাচার্যকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য যে অধ্যাপক-সভা রয়েছে, তার পরামর্শ নেওয়ারও প্রয়োজনবোধ করছেন না তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মের বাইরে গিয়ে ‘কন্ট্রোলার অব এগজামিনেশন’ নামে একটি পদও সৃষ্টি করেছেন তিনি। এর জন্য তিনি ইউজিসি বা মন্ত্রকের কোনও অনুমতি নেননি।”

Advertisement

এ প্রসঙ্গে উপাচার্যকে প্রশ্ন করা হলে তাঁর দাবি, এই অভিযোগ আদপেই ঠিক নয়। তিনি জানিয়েছেন, নতুন কোনও পদ সৃষ্টি করা হয়নি, শুধু এক জন অধ্যাপককে ‘কন্ট্রোলার অব এগজামিনেশন’-এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “কোনও অধ্যাপককে রেজিস্ট্রার বা ফাইনান্স অফিসারের বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, এর আগে বিশ্বভারতীতে এর বহু নজির রয়েছে।” আরও কয়েকটি অধ্যাপক পদের নিয়োগে এবং পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের অধ্যক্ষদের বিনয় ভবনে বদলি করায় যে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, তা-ও খণ্ডন করেছেন উপাচার্য। নিয়ম ভেঙে তিনটি ‘প্রোভস্ট’ পদে নিয়োগ হয়েছে বলে সুশান্তবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু সুশান্তবাবুর দাবি, “নতুন কোনও পদ তৈরিই করা হয়নি। শুধু তিন জন প্রবীণ অধ্যাপককে এই তিনটি পদ সামলানোর বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিতেই স্পষ্ট বলা রয়েছে, উপাচার্য চাইলে কোনও অধ্যাপককে বাড়তি দায়িত্ব দিতেই পারেন।” অধ্যক্ষদের বদলি প্রসঙ্গে সুশান্তবাবুর মন্তব্য, “সেখানেও নতুন কোনও পদ তৈরি করা হয়নি। শিক্ষা দফতর (বিনয় ভবন)-এর সঙ্গে স্কুলগুলো (পাঠভবন ও শিক্ষাসত্র) যাতে মিলেমিশে কাজ করতে পারে, তাই এই ব্যবস্থা।” এ ছাড়া, উপাচার্য জানিয়েছেন, প্রত্যেকটি রদবদল বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কমিটি, অর্থাৎ এগজিকিউটিভ কমিটি অনুমোদন করেছিল।

বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে লিঙ্গ বৈষম্য ও হয়রানির অভিযোগ এনেছিলেন এক মহিলা কর্মী। স্বজনপোষণের অভিযোগও উঠেছে উপাচার্যের বিরুদ্ধে। গত অগস্ট মাসেই এ সব অভিযোগের ভিত্তিতে সবিস্তার রিপোর্ট চেয়ে পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। তার মধ্যেই অগস্ট মাসের শেষে সিকিম থেকে বিশ্বভারতীতে পড়তে আসা প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী যৌন হেনস্থার শিকার হন। অভিযোগ ওঠে, বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে মিটমাট করে নেওয়ার জন্য সওয়াল করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যার জেরে শেষ পর্যন্ত পড়া ছেড়ে সিকিমে ফিরে যেতে বাধ্য হন ওই ছাত্রী। বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা শুরু হওয়ায় মন্ত্রকের নির্দেশে একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দলকেও বিশ্বভারতী পাঠিয়েছিল ইউজিসি।

প্রশ্ন উঠেছে একই সঙ্গে সুশান্তবাবুর বেতন ও আগের চাকরির পেনশন পাওয়া নিয়েও। প্রদীপবাবুর মতে একসঙ্গে বেতন ও পেনশন নিতে পারেন না সুশান্তবাবু। উপাচার্যের পাল্টা দাবি, “আইআইএসইআর-এর অধ্যক্ষ পদে থাকার সময়ে আমি যা বেতন পেতাম, বিশ্বভারতীতে ঠিক সেটাই পাই।” কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনে এই প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষের বেতন সরকারি নীতি মেনেই ঠিক করা হয়েছিল, জানিয়েছেন সুশান্তবাবু।

তদন্ত কমিটি সম্পর্কে বিশ্বভারতী অধ্যাপক সভার পক্ষে রাজেশ কে বেনুগোপাল ও কিশোর ভট্টাচার্য এ দিন বলেন, “রবীন্দ্র আদর্শ বজায় রাখতে এবং বিশ্বভারতীর কৌলিন্য রক্ষার্থে অধ্যাপকসভা এই কমিটিকে সব সহযোগিতা করবে। আমাদের কাছে যা তথ্য রয়েছে, তা কমিটির হাতে তুলে দেওয়া হবে। বিশ্বভারতীকে রক্ষার জন্য আমাদের সকলের সহযোগিতা ও সতর্ক দৃষ্টি থাকছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement