আবার জেরা আড়াই ঘণ্টা, মেজাজ হারালেন অর্পিতা

প্রথম বার জিজ্ঞাসাবাদের পর এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) দফতর থেকে হাসিমুখেই বেরিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, কয়েকটি সাধারণ প্রশ্নের জবাব দিতে হয়েছে। কিন্তু সোমবার দ্বিতীয় দফায় প্রায় আড়াই ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে কিছুটা মেজাজ হারিয়েই বললেন, “যা জিজ্ঞাসা করার ইডি-কে জিজ্ঞাসা করুন।” তিনি বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অর্পিতা ঘোষ। সারদা কেলেঙ্কারির প্রথম অভিযোগকারিণীও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:২৯
Share:

জেরা শেষ হওয়ার পর ইডি-র দফতর থেকে বেরোচ্ছেন অর্পিতা ঘোষ। সোমবার। ছবি: শৌভিক দে।

প্রথম বার জিজ্ঞাসাবাদের পর এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) দফতর থেকে হাসিমুখেই বেরিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, কয়েকটি সাধারণ প্রশ্নের জবাব দিতে হয়েছে।

Advertisement

কিন্তু সোমবার দ্বিতীয় দফায় প্রায় আড়াই ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে কিছুটা মেজাজ হারিয়েই বললেন, “যা জিজ্ঞাসা করার ইডি-কে জিজ্ঞাসা করুন।”

তিনি বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অর্পিতা ঘোষ। সারদা কেলেঙ্কারির প্রথম অভিযোগকারিণীও।

Advertisement

অর্পিতাদেবী সারদার একটি চালু না হওয়া টিভি চ্যানেলের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর পদে ছিলেন। মাস সাতেক কাজও করেছেন। বেতন না পেয়ে গত বছরের ১৬ এপ্রিল তিনিই প্রথম সারদার বিরুদ্ধে সল্টলেকের ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অর্পিতার ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, অর্পিতা ইডিকে জানিয়েছেন, তাঁকে অফার লেটার দিয়েছিলেন কুণাল ঘোষ। পরে চ্যানেলের কাজে যোগ দেওয়ার সময় এক বারই তিনি সুদীপ্ত সেনকে দেখেছিলেন।

ইডি সূত্রের খবর, সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে ওই চ্যানেলটির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ২০১১ সালে ‘দেবকৃপা ব্যাপার লিমিটেড’ নামের একটি সংস্থার অধীন ওই চ্যানেলটি কয়েক কোটি টাকা দিয়ে কেনেন সুদীপ্ত সেন। ইডি সূত্রের খবর, সেই মালিকানা সংক্রান্ত ব্যাপারে নজর দিতে গিয়ে কিছু ‘অস্বাভাবিক বিষয়’ চোখে পড়ে তদন্তকারীদের। সেই সূত্রেই অর্পিতাকে ডেকে পাঠানো হয় বলে তদন্তকারীরা জানান।

ইডি সূত্রের খবর, প্রথম দিন জিজ্ঞাসাবাদে অর্পিতা কত বেতন পেতেন, চ্যানেলটি সম্প্রচারের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিল কি না এবং সংস্থার আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত কিছু তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছিল। অর্পিতা তাঁর মাসিক বেতন ৮৫ হাজার টাকা বলে জানালেও সংস্থার ছাড়পত্র ও আর্থিক লেনদেনের ছাড়পত্র সংক্রান্ত তথ্য জানাতে পারেননি। ব্যাখ্যা হিসেবে ইডি-র কাছে অর্পিতা জানান, তিনি ওই চ্যানেলের খবর সংক্রান্ত দিকটাই দেখতেন। তাই আর্থিক বা প্রশাসনিক ব্যাপার তাঁর জানা নেই। অর্পিতাকে প্রশ্ন এবং উত্তরগুলি নিজের হাতে লিখতে বলেছিলেন ইডি অফিসারেরা। পরে অর্পিতা জানান, তিনি তা-ই করেছেন। সেই জন্যই আড়াই ঘণ্টা সময় লেগেছে।

ইডি সূত্রের খবর, অর্পিতার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত কয়েক দিনে তদন্ত আরও কিছুটা এগিয়েছে। এর মধ্যে পাওয়া যায় সংস্থার কিছু ভাউচার ও নথি। এই সব নথির ভিত্তিতেই সোমবার ফের ডেকে পাঠানো হয় তাঁকে। ইডির এক অফিসার জানান, আগের বার জিজ্ঞাসাবাদের সময় অর্পিতা বলেছিলেন, আর্থিক ও প্রশাসনিক ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, কয়েকটি নথির সঙ্গে অর্পিতার নাম জড়িয়ে রয়েছে। সে জন্যই এ দিন তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অর্পিতা যদিও এ দিন রাতে জানিয়েছেন, তাঁকে এ ধরনের কোনও নথির ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। তিনি বলেন, “যদি কেউ এমন দাবি করেন, তবে তিনি মিথ্যা বলছেন।”

তদন্তকারীরা দাবি করেন, খবর সংক্রান্ত কাজ ছাড়াও ওই চ্যানেলের আরও কয়েকটি বিষয়েও অর্পিতার যোগসূত্র থাকতে পারে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। তবে চ্যানেলটির প্রশাসনিক ও আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত কয়েক জন ব্যক্তির নাম অর্পিতা তদন্তকারীদের জানিয়েছেন বলে ইডি সূত্রের খবর।

তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, তদন্তে কয়েকটি ব্যক্তিগত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও খতিয়ে দেখা হয়েছে। তাতে কিছু ‘অস্বাভাবিক লেনদেন’ও নজরে এসেছে বলে দাবি ইডি-র। তবে এখনও ওই অ্যাকাউন্টগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়নি। ইডি-র এক অফিসার জানান, ওই অ্যাকাউন্টগুলি সম্পর্কে অর্পিতা জানেন বলে তদন্তকারীরা মনে করছিলেন। এ দিন সে ব্যাপারেও তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে ইডি সূত্রের খবর। তবে অর্পিতাদেবীর কাছে সে সব প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর মেলেনি বলেই তদন্তকারীদের দাবি।

এর আগে সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে সল্টলেক এসিজেএম আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন অর্পিতা। সে সময় আদালতেই অর্পিতা পুলিশকে দেওয়া তাঁর জবানবন্দি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। অর্পিতার দাবি ছিল, আদালতে পুলিশ যে জবানবন্দি পেশ করেছে, তার পুরোটা তাঁর বলা নয়। আদালতে পুলিশের পেশ করা ওই জবানবন্দিতে বলা হয়েছিল, সুদীপ্ত সেন ও তাঁর কয়েক জন সঙ্গী (সারদা গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থার কর্তা) মিলে অসাধু উপায়ে টাকা রোজগার করেছেন। বিভিন্ন উপায়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে তা সারদার নানা সংস্থায় খাটানো হতো। জবানবন্দির এই বয়ান শুনে অর্পিতাদেবী আদালতে জানিয়েছিলেন, তিনি পুলিশকে ওই কথা বলেননি।

ইডি সূত্রের খবর, এ দিন জিজ্ঞাসাবাদের সময় অর্পিতাকে ওই বয়ান-বিভ্রান্তি নিয়েও প্রশ্ন করা হয়। ইডির এক অফিসার ইঙ্গিত দিয়েছেন, প্রয়োজনে অর্পিতাকে ফের ডাকা হতে পারে। অর্পিতার ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, অর্পিতাও ইডিকে বলেছেন, প্রয়োজনে আবার আসতে তাঁরও কোনও আপত্তি নেই। কারণ তাঁর কিছুই লুকনোর নেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement